
বাংলাদেশ ডেস্ক | বুধবার, ২১ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 49 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
‘১৮ কোটি মানুষ যদি শান্তিতে থাকে, আমার ছেলে মারা যাওয়ায় দুঃখ নাই। আমার ছেলের ওপর ১৮ কোটি মানুষের দোয়া আছে। তয় ওর মারে বুঝাইতে পারি না। তার মা এখনও অসুস্থ। কিছু খাওয়াতে পরি না। বিছানায় পড়ে আছে’— গত ১৯ জুলাই রাজধানীর নতুন বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বাহাদুর হোসেন মনিরের বাবা আবু জাফর এভাবে কথাগুলো বলছিলেন।
এমন প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার মঙ্গলবার জড়ো হয়েছিলেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে নিহত এবং ১৫ বছরে নিহত ও গুম হওয়া ভুক্তভোগীদের স্বজনরা বিচার চেয়েছেন।
‘ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান এবং ১৫ বছর আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের হাতে নিহত সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা—যাদের প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচার মুক্ত হলো বাংলাদেশ, আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ছাত্রশিক্ষক লেখক সাংবাদিক ও শিল্পী সমাজ। তাদের সহযোগিতায় ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
আবু জাফর বলেন, ‘আমার চার সন্তানের এটাই (বাহাদুর) ছোট সন্তান। এ সন্তানের প্রতি ভরসা ছিল, মানুষের মতোই মানুষ হইছিল। এ স্বৈরাচারের কারণে ছেলে তো গেল। আমি বাইছা থাকতে যদি বিচার দেখতে পাই, হাসিনা-কাদেরের যদি গলায় রশি লাগাইতে পারে, তাহলে শান্তি পাব।’
আবু জাফর কথা বলতে গিয়ে আবেগী হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘মনে আমার দুঃখ আছে, এখানে প্রকাশের জায়গা না। ওবায়দুল কাদের বলছিল- ছাত্রলীগ করোনার থেকে শক্তিশালী, আজকে তুই কোথায় কাদের, আমাদের সঙ্গে দেখা কর। মোলাকাত কর।’
গত ১৮ জুলাই সাভারে পুলিশের নির্বিচার গুলির পর সাঁজোয়া যানের ওপরে মুমূর্ষু মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ছাত্র আসহাবুল ইয়ামিনকে ঘুরানো হয়, পরে জীবিত অবস্থায়ই সড়ক বিভাজকে ফেলে দেওয়া হলে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন ইয়ামিন। তার বাবা মো. মহিউদ্দীনও উপস্থিত হয়েছিলেন।
মহিউদ্দীন বলেন, যেভাবে নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে ট্যাঙ্কের উপর নিয়ে প্যানিক সৃষ্টি করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে, যেভাবে তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে টেনেহিঁচড়ে। এটা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। একজন জীবিত মানুষকে অমানবিকতা দেখানো হয়েছে, এটার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। আমি চাই না আমার মতো কারও সন্তান এর মুখোমুখি হোক।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমার ছেলেকে রাজনৈতিক ট্যাগ, জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে সাভার থানা এবং আমাদের গ্রামের বাড়িতে। আমি সেটা গর্বের সঙ্গেই বলতে পারি। আমার ছেলেকে যেন আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
রেজাউল করিমের বাবা আল আমিন মীর বলেন, আমার ছেলে গত ৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে মারা গেছে। আমাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে ফোন করা হয়, আমি পৌঁছে দেখি স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছে, কোনো চিকিৎসা নাই। পরে বিনা কাগজে দিয়ে দিছে। গুলিবিদ্ধ লাশ কবরে দাফন করতে চায় না পুলিশের ছাড়পত্র ছাড়া। কিন্তু থানায় গিয়ে বললেও তারা তদন্ত করতে আসেনি, কোনো সহযোগিতা করেনি। পরে চেয়ারম্যান অফিসে গেছি, তারা সার্টিফিকেটে লিখছে এটা নাকি সাধারণ মৃত্যু। যাই হোক, এ রকম মৃত্যুর ঘটনা যেন আর কারো সঙ্গে না হয়।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা আবু সাঈদ খান। তিনি বলেন, শহীদদের এই রক্তক্ষরণ বৃথা যাবে না। আমাদের এখন বিজয়কে ধরে রাখতে হবে। এখন এমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণ করা দরকার। যেন আর কোনো স্বৈরাচার মাথা চাড়া দিতে না পারে। আমরা রাষ্ট্রের এমন মেরামত চাই। অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তরুণদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো রাজপথ পাহারা দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ-নব্বইয়ের আন্দোলনের পরও গণতান্ত্রিক কাঠামো আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। তাই এ বিজয় ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন যাত্রাবাড়ীতে নিহত দ্বীন ইসলামের বাবা শাহ আলম, লিটন উদ্দিনের সহোদর ভাই আরিফ উদ্দীন, ২০১৪ সালে গুমের শিকার ওমর ফারুকের ছেলে ইমন। তারা ‘খুনি হাসিনার বিচার’ দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে যা যা ছিল
সভার শুরুতে সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সাংবাদিক এহসান মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় সংহতি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ড. মুঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপি এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কোনো বক্তব্য দেননি।
সমাবেশে কবিতা আবৃত্তি করেন লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী, নাসিফ আমিন। আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাক্টিভিস্ট কাজী জাহেদুর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে নিহত, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ছবি প্রদর্শন করে রাখা হয় শহীদ মিনারজুড়ে।
Posted ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ আগস্ট ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter