রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চঞ্চলের খাতায় ফুটবলের ৩২ বছরের সুখ-দুঃখ

ডেস্ক রিপোর্ট   |   শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   108 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

চঞ্চলের খাতায় ফুটবলের ৩২ বছরের সুখ-দুঃখ

ফিফা বিশ্বকাপের ১৪তম আসরের সবগুলো ম্যাচ মনোযোগ দিয়ে দেখেন জিয়াউর রহমান চঞ্চল। ১৯৯০ সালে সেই টুর্নামেন্টের উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে হেরে যায় তাঁর পছন্দের দল আর্জেন্টিনা। কিশোর মনে খুব বড় ধাক্কা দেয় সেই পরাজয়। কয়েকদিন বিমর্ষ হয়ে থাকেন। ঠিকমতো খান না, ঘুমান না। এরপর হঠাৎ তাঁর মনে হয়, খেলা সম্পর্কিত তথ্যগুলো লিখে রাখা যায়। কোন ম্যাচে কে খেলল, কতটি গোল হলো, কত মিনিট খেলা হলো, কত মিনিটে গোল হলো, লাল কার্ড-হলুদ কার্ড, ভেন্যু, দর্শক সংখ্যা ইত্যাদি।

যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। একটি খাতা কিনে বিভিন্ন তথ্য টুকে রাখতে শুরু করলেন। সেই হলো শুরু। তারপর টানা ৩২ বছর তিনি বিরতিহীন লিখে রাখছেন ফুটবলের জয়-পরাজয়, সুখ-দুঃখের তথ্য। এর মধ্যে ইন্টারনেটের বদৌলতে ফুরিয়েছে আলাদা করে তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা। তবে চঞ্চল থামেননি। এটা যে তাঁর নেশা! এর জন্য অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় প্রায়ই। তবু নেশা ছাড়তে পারেন না। আর এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন খেলার ‘জীবন্ত তথ্যভান্ডার’। অধিকাংশ খেলোয়াড়ের প্রোফাইল তাঁর মুখস্থ। কার কোন ম্যাচে অভিষেক, কয়টি গোল- এমন যাবতীয় তথ্য তার মুখস্থ। ফলে ক্রীড়া-সংক্রান্ত কুইজে অংশ নিতে অনেকেই তাঁর সাহায্য নেন।

৪৩ বছর বয়সী চঞ্চল থাকেন উত্তরের জনপদ বগুড়ায়। পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী। তবে এ কাজে তিনি খুব একটা মনোযোগী নন। সারাক্ষণই তাঁর মন পড়ে থাকে খেলায়। শুরুতে তিনি তথ্য সংগ্রহ করতেন পত্রিকা থেকে। প্রতিদিন বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকার পত্রিকার দোকানে গিয়ে খাতা নিয়ে বসতেন। খেলার পাতা খুলে টুকে নিতেন প্রয়োজনীয় তথ্য। আর কিছু পত্রিকা তিনি কিনে বাড়িতে নিয়ে যেতেন। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত ওইসব পত্রিকা থেকে পাওয়া তথ্য লিখে রাখতেন। কিছু পেপার কাটিংও সংগ্রহে রাখতেন তিনি। তাঁর স্বল্প আয়ের অর্ধেকই চলে যেত পত্রিকার দাম দিতে।
ক্রীড়াপ্রেমী চঞ্চল জানান, খেলা দেখতে তাঁর ভালো লাগে। পরিসংখ্যান আয়ত্বে থাকলে খেলা আরও উপভোগ্য হয়। সহজেই অনেক রকম বিশ্নেষণ করতে পারেন। মূলত এ জন্যই তিনি খেলার তথ্য লিখে রাখতে শুরু করেন। পরে এটা তাঁর নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এক দিন না লিখলে খুব অস্বস্তি লাগে। যেন বড় কোনো ভুল করে ফেলেছেন। তাই চাইলেও তিনি এ অভ্যাস থেকে বের হতে পারেন না।
২০১৩ সালে শ্যামলী আক্তারকে বিয়ে করেন চঞ্চল। তাঁদের আট বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর চঞ্চলের নিয়মিত কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হয়। উপার্জনমূলক কাজে মন না দিয়ে এই ‘পাগলামি’ ভালোভাবে নেননি স্ত্রী। সন্তান হওয়ার পর জটিলতা আরও বাড়ে। ছেলে মাঝেমধ্যেই বাবার সাধের খাতা ছিঁড়ে ফেলে। চঞ্চল ছেঁড়া পাতা আবার টেপ দিয়ে জুড়ে রাখেন।
ইন্টারনেট সহজলভ্য হলেও দীর্ঘদিন পুরোনো নিয়মেই পত্রিকা ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করতেন চঞ্চল। পরে ভাগনেরা তাঁকে ইন্টারনেট থেকে তথ্যপ্রাপ্তির সুবিধা সম্পর্কে বোঝায়। তখন তিনি ভাগনেদের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন ম্যাচের ফল সংগ্রহ করতেন। চলতি বছর ভাগনেরা তাঁকে স্মার্টফোন কিনে দেন। এখন তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুঁজে নেন খেলা সম্পর্কিত নানা তথ্য।

Facebook Comments Box

Posted ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com