সারাদেশ ডেস্ক | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 122 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
ছাগলনাইয়ায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কলেজ অধ্যক্ষ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ায় শিক্ষক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অভিযুক্ত ওই অধ্যক্ষ পুরস্কার নেন। মহাতাব হোসেন প্রাং নামে আলহাজ আব্দুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ তদন্তাধীন।
চলতি বছরের ৩০ আগস্ট ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা নিয়োগ ও আর্থিক অনিয়মসহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ তদন্ত করে গেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা-আইসিটি) ফাহমিদা হক।
জানা গেছে, ফেনী জেলা প্রশাসকের কাছে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্ত পরিচালিত হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে– ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং অনিয়মের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ হওয়া।
অভিযোগকারীরা অভিযোগে উল্লেখ করেন, পদ থেকে পদত্যাগ না করে অধ্যক্ষ মহাতাব নিয়মবহির্ভূতভাবে অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেছেন। ফেনী জেলা পরিষদের অর্থায়নে কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলে কলেজের পূর্ব পাশের ৪ শতক স্থাবর সম্পত্তি পাশের জমির মালিকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ছাড় দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের চেষ্টা করেছিলেন অধ্যক্ষ মহাতাব। পরে অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেন ইউএনও।
এ ছাড়া শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, সভাপতির অগোচরে দুর্নীতির মাধ্যমে কলেজের মোটা দাগের আয় হওয়া টাকা সরিয়ে নিতে আলাদা ব্যাংক হিসাব ব্যবহারের মতো অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগগুলো তদন্তে ফেনী জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা-আইসিটি) ফাহমিদা হককে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে কলেজে শিক্ষক পরিষদ ও হিসাব বিভাগের সমুদয় কাগজপত্র জব্দ করেন ফাহমিদা হক। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কলেজের প্রধান সহকারী গোলাম রেজা সরওয়ার।
কলেজের অভিভাবক সদস্য সাইদুল তারেক বাদল খান জানান, ডিসেম্বরে তাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। দুই বছরের মধ্যে অধ্যক্ষ তাদের নিয়ে একটি সভাও করেননি। ১৩ সদস্যের কমিটিতে তাঁর অনুগত পাঁচজনের কোরাম পূর্ণ করে সভা ডেকে যা সিদ্ধান্ত নেন, তা অধ্যক্ষ নিজেই বাস্তবায়ন করেন।
২০২৩ সালের এইচএসসি শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি নেওয়াসহ নানা অসদাচরণের বিষয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিল কলেজের সভাপতি ও ইউএনও বরাবর।
এর আগে ২০১৮ সালে কলেজের সভাপতি থাকা অবস্থায় সংসদ সদস্য শিরীন আখতার ওই অধ্যক্ষকে গুরুতর আর্থিক অনিয়মসহ কয়েকটি অভিযোগে বরখাস্ত করেছিলেন। পরে কৌশলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নিয়ে নিজের অবস্থান স্থায়ী করেন তিনি।
কলেজের সিনিয়র শিক্ষক সলিম উল্যাহ জানান, মহাতাব ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কয়েক ঘণ্টার জন্য রেজল্যুশন ছাড়া মৌখিক দায়িত্ব দিয়ে সলিম উল্যাহর কাছ থেকে তাড়াহুড়ো করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিলেন।
উপজেলার দক্ষিণ বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী জানান, সব অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত ছিল ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের জন্য আবেদন করবেন। মহাতাব কীভাবে আবেদন করে শ্রেষ্ঠ হলেন তা তাদের জানা নেই।
ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন জানান, যেহেতু অধ্যক্ষ মহাতাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলমান। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনই ভালো জানে, কীভাবে তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল মোমিন জানান, কলেজ পর্যায়ে অধ্যক্ষের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার গ্রহণে উপজেলা পর্যায়ে একটিমাত্র আবেদন পড়ায় মহাতাবকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সফি উল্যাহ জানান, পাঁচ উপজেলার পাঁচজন আবেদন করায় আব্দুল হক কলেজের অধ্যক্ষ মহাতাব হোসেনকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। মহাতাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন, তা জানলে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শ করে স্থগিত রাখতে পারতেন। তদন্তের বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি।
এ বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ মহাতাব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে সম্মত হননি।
জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার জানান, অধ্যক্ষ মহাতাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তের বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না।
Posted ২:২৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter