
বাংলাদেশ ডেস্ক | বুধবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট | 94 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
ভূমি নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় প্রথমবারের মতো দেশের ৫৪টি জেলায় ল্যান্ড সার্ভে (ভূমি জরিপ) আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে সরকার। এর ফলে বিদ্যমান ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আপিল করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
২০০৪ সালে আইন সংশোধন করে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান করা হয়েছিল। আইনে তখন আপিল নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের বিচারক বা সাবেক বিচারককে নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়। জুলাইয়ে সংসদে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করা হয়। এতে জেলা জজদের ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালের মামলা নিষ্পত্তির ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর আলোকে গত আগস্ট ৫৪টি আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ১৩টি জেলায় নতুন ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির পৃথক আদেশক্রমে এগুলো গঠন করা হয়। তবে ১০ জেলায় ভূমি জরিপ সম্পন্ন না হওয়া এসব জেলায় কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত দেশে বিদ্যমান ৪১টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৬১৮টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৯টি মামলা। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্থগিত রয়েছে ১৬৫টি মামলার কার্যক্রম। জেলাওয়ারি মামলার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ভূমি-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে যথাক্রমে কিশোরগঞ্জে ৩৮ হাজার ৮২৩, ময়মনসিংহে ২৬ হাজার ৯৩৯, টাঙ্গাইলে ১৮ হাজার ৭১, নেত্রকোনায় ১৫ হাজার ৫৩০, খুলনায় ১৫ হাজার ১৬২, ঢাকায় ১৩ হাজার ১৯৮, নারায়ণগঞ্জে ১২ হাজার ৯৪১, জামালপুরে ১১ হাজার ৪৩৫, নোয়াখালীতে ১১ হাজার ১৮৭, চাঁদপুরে ১০ হাজার ৪৫৫, সাতক্ষীরায় ১০ হাজার ৪৮৬ ও গোপালগঞ্জে ৯ হাজার ৭৫৯টি।
নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘জরিপের সময় জমির দাগ-খতিয়ানে ভুলত্রুটি হয়ে থাকে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য রেকর্ড সংশোধনের প্রয়োজন। নতুন ট্রাইব্যুনাল হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি কমবে।’
১৯৭২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় ভূমি জরিপের কাজ শুরু হয়। এখনও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে যেসব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জরিপের (বিএস রেকর্ড) গেজেট প্রকাশ হয়েছে, তাতে ভূমি মালিকের নাম, দাগ, খতিয়ানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে। এসব সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত জমি ক্রয়-বিক্রয়, দান বা ওই জমির অনুকূলে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকরা। পাশাপাশি বছরের পর বছর আদালতে ঘুরেও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে সরকার ১৯৫৩ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল এবং ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করে। ২০১২ সালে ৪১ জেলায় ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সম্প্রতি আইন সংশোধন করে জেলা জজদের দিয়ে আপিল ট্রাইব্যুনালের বিধান করা হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। আরও আগেই তা করা দরকার ছিল। তবে জেলা জজদের এখতিয়ারে প্রচলিত অন্যান্য আদালতের আরও মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় আপিল ট্রাইব্যুনাল কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা বলা কঠিন। বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য অধিক সংখ্যক বিচারক দরকার। নতুন করে মামলা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া মামলাজটের অভিশাপ থেকে বের হওয়া যাবে না।
Posted ৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
nykagoj.com | Stuff Reporter