
ডেস্ক রিপোর্ট | রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 448 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
সম্পর্ক মানে প্রাপ্য নয়,সম্পর্ক মানে বিশ্বাস। যে ভালোবাসায় কোন উদ্দেশ্য নেই ,কোন লক্ষ্য নেই ,সেই সম্পর্কটাই টিকে থাকে মৃত্যু পর্যন্ত ।
`সম্পর্ক’ শব্দটি উচ্চারণে গভীর বন্ধনের গন্ধ পাওয়া যায়। যেমন স্বামী-স্ত্রী,ভাই-বোন,দাদা-দাদী,নানা-নানী চাচা-চাচী,ফুফা-ফুপি,খালা-খালু,মামা-মামি।এ সব রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও পাড়া প্রতিবেশী বা কোন বন্ধুর সাথেও সম্পর্ক তৈরী হতে পারে এবং অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের চেয়েও গভীরে পরিণত হয়ে যায়
সম্পর্ক সবচেয়ে মধুর হয় বাবা-মেয়ের সম্পর্ক ।হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানে তা প্রকাশ পেয়েছে।
`কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে,
বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না ,
জানলার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা
মনে হয় বাবার মত কেউ বলে না
আয় খুকু আয়।‘
মেয়ের যখন কিছুই ভালো লাগে না ,তখন সে কেবল শুনতে চাই বাবার মুখে মধুর খুকু ডাকটি। ঠান্ডা লাগা গলা ,আর কান্না ভেজা গলার তফাৎটা শুধু বাবাই বুঝতে পারে ।অথচ এই মেয়ে যখন কোন ঘরে জন্ম গ্রহণ করে,বেশির ভাগ পরিবারে খুশির পরিবর্তে ভ্রুটা একটু কুঁচকে উঠে । প্রাচীনকাল থেকেই শুনে আসছি ।অনেক সময় ছেলে না হওয়ার কারণে মা তার ছেলেকে আবার বিয়ে দিতেও পিছপা হন না ।কেননা তাদের ধারণা ছেলে না হলে ঘরের প্রদীপ জ্বালাবে কে?আধুনিক যুগেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নাই ।অথচ এই প্রদীপ কি সত্যি জ্বলে বা জ্বলছে কয়টা ঘরে ?
ইসলামের দৃষ্টিতে যে ঘরে মেয়ে জন্ম হয়,সেখানে রহমত বর্ষিত হয় । সত্যি তাই। মেয়ে যেভাবে বাবা মা,কে বোঝে,ছেলে কি ততটা বোঝে?কিন্তু ডাক্তার বানাচ্ছে ছেলেকে,মেয়েকে পড়াচ্ছে সাধারণ কলেজে ।কারণ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলে সে চলে যাবে অন্য ঘরে ।ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার বানিয়ে লাভ কি ?কোন মেয়ের বিয়ে হলে সে কি তার পিছনের সব দায়িত্বকে ধূয়ে মুছে পরিষ্কার করে মুক্ত হয়ে শ্বশুর বাড়িতে প্রবেশ করে ? না তা নয় বরং মেয়েটির দায়িত্ব আর ও বেড়ে যায় ।একদিকে শ্বশুরবাড়ির দায়িত্ব ,অন্য দিকে মা বাবার দায়িত্ব ।এমনই একটি মেয়ের গল্প আমার আজকের লেখায় স্থান পেয়েছে।
আট ভাই বোনের বড় ভাইয়ের বড় ছেলের বউ মা আমার লেখার নায়িকা ।নাম তার সৈয়দা ফারজানা তানজিন।সবাই ডাকে মিলি বলে ।২০১৫ সালে বিয়ে হয় ।বিয়েতে আসবো বলে টিকিটও কেটেছিলাম।কোন একটি কারণে সেটা হয়ে উঠেনি।এর জন্য তিনশ ডলার জরিমানাও দিতে হয়েছিল ।মিলিকে আমি দেখেছি ছবিতে,ফোনে কথাও হয়েছে ।অবশেষে ২০২১ এ বাংলাদেশে যাওয়াতে সামনা সামনি দেখার সুযোগ হয় ।সুন্দর,ভদ্র এবং জোরে জোরে কথা বলার পরিবারে আস্তে কথা বলার মেয়ে।সব মিলিয়ে ভালো মেয়ে।বাংলাদেশে যাওয়ার পর জানতে পারলাম বাঁধনের (বড় ভাইয়ের ছেলে ) কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে ।কিন্তু মিলি যেতে চাইছে না,কারণ মা বাবাকে দেখবে কে ?বিশেষ করে তার বাবাকে ।বাবার সব দায়িত্ব মিলিই পালন করতো।ডায়াবেটিক চেক,প্রেসার মাপা, নিত্য দিনের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া মিলিই করতো।শ্বশুরবাড়ির লোকজন সব সময় হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে তা নয়।বাবার কোলে থাকা সেই ছোট মেয়েটি বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে এসেও এমনকি দুই সন্তানের মা হয়েও দায়িত্ব এড়িয়ে যায় নি।মিলিকে বললাম এখন সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকেও পরোয়া না করে যেতে চাইছো না । একদিন আপসোস করতে হবে কি করলাম ।সুযোগ সব সময় আসে না ।কথাগুলো মন দিয়ে শুনেছিল।পরে আমেরিকা আসার সময় হয়ে যায় ।ফিরে আসি।খোঁজ নিতাম বাঁধনের কানাডা আসার অগ্রগতির ।খোঁজ নিতে নিতেই একদিন শুনলাম তাদের কানাডা আসার প্রস্তুতি সম্পন্ন। ৩১শে মার্চ ফ্লাইট ।জয়েন্ট ফ্যামিলির বড় জনের চলে যাওয়া উপলক্ষে নানান জায়গাতে দাওয়াত খাওয়ার পালা ,আজ এখানে তো কাল ওখানে ।৩০শে মার্চ ফোনে জানতে পারলাম মিলির বাবা স্ট্রোক করেছিলেন।মিলির সাথে কথা হলে বলেছিল,বাবা ভালো আছে ফুফ্ফি।পরের দিন বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট থেকে তোলা ফেসবুকে কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার ছবি দেখতে পেলাম ।
কি মনে হচ্ছে লেখা শেষ ?না লেখার শেষ অংশটুকু এখনও বাকি আছে ।আমার লেখার নায়িকার সাথে দুইটি পার্শ্ব চরিত্রের কথা উল্লেখ না করলেই নয়।সেজ বোনের দুই মেয়ে।অন্তরা এবং ভাড়না।মিলির মতো শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও দুই ঘরের দায়িত্ব পালন করছে সমান ভাবে ।ভয়াবহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সেজবোনের সাথে জীবনের পরোয়া না করে ছোট মেয়ে অন্তরা একটানা ২৬বা ২৭ দিন মৃত্যুর মধ্যে রাত কাটিয়েছে।অথচ তাদের জন্মের সময় বোনকেও বলতে শুনেছি আমারই কেবল মেয়ে ? যা হোক প্লেন যথাসময়ে উড়াল দিয়েছিল ।কিন্তু বিধাতার বিধান বিধাতাই শুধু জানেন ।যে বাবাকে নিয়ে এত চিন্তা,সেই বাবা তার সমস্ত চিন্তাভাবনাকে মুক্ত করে পরপারে চলে যান যখন প্লেন দোহায় এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল কি না জানি না ।শুনেছি মিলির ৮ বছরের বিবাহিত জীবনে কখনো এর ব্যতিক্রম হয়নি। তার বাবা প্রত্যেকটি দিন তিন বার করে টেলিফোনে মেয়ের সাথে কথা বলেছেন । আর মিলি ও তার বাবাকে( বাবু )বলেই ডাক দিয়ে কথা বলতো। যেমন মা তার সন্তানদেরকে ডেকে থাকে । লেখার শেষে মিলিকে বলতে চাই,যে স্বপ্ন নিয়ে প্রবাস জীবনে প্রবেশ করেছো,দৃঢ় চিত্তে তার চেস্টা চালিয়ে তোমাকেই যেতে হবে ।চেষ্টায় যে কেউ স্বপ্নের খুব কাছেই থাকে । ( নিউইয়র্ক,৪/১৬/২০২৩)
Posted ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam