মঙ্গলবার ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আমার জীবনে রোজার গুরুত্বঃআফরোজা ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   208 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

আমার জীবনে রোজার গুরুত্বঃআফরোজা ইসলাম

 

 

আরবী রমজান শব্দটি এসেছে রামাদান থেকে ।এটি রোজা বা সাওম নামেও পরিচিত ।আমরা বাঙ্গালীরা রোজা শব্দটি বেশী ব্যবহার করে থাকি।রাব্বুল আলামীন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম(আঃ) এর উপর রোজার বিধান আরোপ করে সর্বপ্রথম মানব ইতিহাসে রোজার প্রচলন শুরু করেন । রোজা শুধু আমাদের উপরই ফরয ছিল তা নয়, পূর্ববর্তীদের উপরও রোজা ফরয করা হয়েছিল ।

ইসলামের ৫ম স্তম্ভের একটি হলো রোজা ।তবে আমার  জীবনে পৃথিবীর প্রথম আলো দেখেছি  এই রোজাতেই।আসলে আমি আমার জীবনই পেয়েছিলাম রোজাতে।অর্থাৎ রোজার মাসেই আমার জন্ম হয়েছিল ।তাই তো মা আমার নাম রেখেছিলেন আফরোজা ।বাংলাদেশে নিক (পলি)নামেই পরিচিত ছিলাম কিন্তু আমেরিকার প্রত্যেকটি কাজের জায়গাতেই ছিল  রোজা নামে পরিচিতি ।সাদা চামড়ার লোকেরা রোজা নামে ডাকলেও মীন করতো রোজ হিসেবে অর্থাৎ গোলাপ ।রোজ আমাদের চোখকে সুস্থ রাখে তেমনি রোজা  রাখে শরীরকে ।যেটাই মীন করুক না কেন ভালো  থাকার জন্য রোজ বা রোজার গুরুত্ব অপরিসীম । কোন এক রোজায় পৃথিবীতে আসা সেই আমি জীবনের মধ্যাহ্ন বেলায় এসে কষতে বসেছি সেকালের আর একালের রোজা নিয়ে ।আট ভাই -বোনের ছোট তিন জন রোজা রাখতাম পাল্লা দিয়ে ।কখনো কখনো মা সেহেরির সময় ডাকতেন না ইচ্ছে করেই।সকালে উঠে যখন জানতে পারতাম বাকি দুজন রোজা রেখেছে আর যায় কোথায় ?ওদের চেয়ে আমার এক রোজা কম হবে বলে সে কি মন খারাপ ।মা তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন,আরে ছোটদের খেলেও রোজা হয় ।কিন্তু খেতাম না,দেখা যেতো না খেয়েই রোজা রেখেছিলাম।থুথু ফেলার ঘটনার কথা মনে পড়লে নিজে নিজেই হাসি ।থুথু গিলে ফেললে রোজা হবে না ।ফলে সারা দিন শুধু থুথুই ফেলেছি।কি ছেলেমানুষিই না ছিলাম আমরা ।এক এক রোজা যেতো আমাদের আনন্দটাও বাড়তে থাকত ।ঈদ কাছে আসার আনন্দ।অনেক সময় চাঁদ উঠা দেখা যেতো না ।মসজিদে যখন ঘোষণা করতো চাঁদ দেখা গিয়েছে কাল ঈদ আর যাই কোথায় ।ধুমধাম পরে যেতো ।চাঁদ দেখা যাক আর না যাক ,চাঁদ রাতের যে আনন্দ ছিল,সেটার মজাই আলাদা ।চাঁদ দেখতে দেখতে বড় হওয়া সেই আমি শ্বশুরবাড়িতে চলে আসি।দুই সন্তানের মা ও হয়েছি এবং এই সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্যই সুদূর আমেরিকায় পাড়ি দেয়া।পৃথিবী তার আপন গতিতে বিদ্যমান।তাই তো প্রতিবছরই রোজা আসে, আবার চলেও যায়।চলে গেছে আমার ছোট কালের ফেলে আসা রোজা । পৃথিবীতে এসে যে রোজাকে পেয়েছিলাম , সেই রোজা কালের বিবর্তনে আবারও ঘরের দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে।গত বৃহস্পতিবার থেকে রোজা শুরু হয়েছে ।অর্থাৎ ৩।২৩।২০২৩।রোজা নিয়ে লিখতে গিয়ে এর কো-ইনসিডেন্টভাবে ঘটনা গুলির চমৎকার মিল খুঁজে পেলাম ।শুধু এ বছরের এই তারিখে রোজা হয়েছে তা নয়,২৩নাম্বারটি আর ও কিছু মনে করিয়ে দেয়,যেমন ,এক  রোজায় পৃথিবীতে মেয়ে হয়ে যে ঘরে এসেছিলাম,সেই ঘর হতে বউ হয়ে অন্য বাড়িতে গেছি সেটাও ছিল ২৩শে সেপ্টেম্বর ।আমেরিকাতে পাড়ি জমিয়েছিলাম তাও এ বছরে ২৩ বছরে পূর্ণ হলো।


২৩বছর আগে আমেরিকাতে যখন প্রথম রোজার মাস এলো খুব কষ্ট অনুভব করেছিলাম ।একা একা ইফতার করা,এমনকি কর্তাটিকেও পেতাম না ।পাল্লা দিয়ে রোজা রাখারও বয়স আর নেই  ।জীবন যুদ্ধের তাগিদে নিউইয়র্ক থেকে ৭০ মাইল দূরে পুক্যাপসীতে দশ বছর কাটিয়েছি।আই বি এম এ কাজে পাকিস্তানী কিছু কো-ওয়ার্কারের সাথে ইফতার এবং নামাজ আদায় করার সুযোগ পেয়েছিলাম ।দুই বছরের জন্য আলবেণীতে ছিলাম ।এ সি ই তে কাজ করেছি দশ মাস।কাজে জয়েন করার পর পরই রোজা শুরু হয়।সেখানে বাঙ্গালী বা পাকিস্তানী মুসলিম আমার চোখে পড়েনি।ঐ কোম্পানীর নিয়মানুযায়ী সবার হাতে পানি বা জুঁসের বোতল থাকতেই হবে ।এর জন্য কোন পে করতে হতো না ।তাতে কি রোজা তো রাখতে হবে ।ছোটকালের অভ্যাস বাদ দেবো কেমন করে?রোজা রেখেছিলাম এবং চল্লিশ মাইল ড্রাইভ করে প্রত্যেকদিন কাজে গেছি।মজার ব্যাপার পানি বা জুসভরা বোতলটি সামনে রাখতাম এবং বুঝাতাম পান করছি।এভাবে ৩০ টি রোজা অতিবাহিত করেছি কিন্তু রোজা ছাড়েনি।শুধু আমি কেন ,প্রত্যেক মুসলিমের উচিত রোজা কায়েম করা ।২০১৬তে নিউইয়র্কে ফিরে আসা ।নিউইয়র্কে এসে বাংলাদেশের রোজার সাধ পেয়েছিলাম এবং এখনও পাচ্ছি ।ব্রঙ্কসের খলিল বিরিয়ানী হাউজে জমজমাট ইফতার বাজার।অনেকটা বাংলাদেশের ইফতার বাজারের মতোই লাগে।শুধু ইফতার বাজারই নয়,ইফতার পার্টিরও আয়োজন করা হয় ।গত ৩।২৫।২০২৩ শনিবার নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল ।প্রেসক্লাবের সেক্রেটারির সঙ্গীণী এবং এন ওয়াই কাগজের সম্পাদক হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলাম ।ভালো লেগেছে ।বিদেশের মাটিতে এটাই বা কম কি ?৩।২৬ ।২০২৩ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে জ্যাকসন হাইটস্হ ৭৩ রাস্তার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ স্ট্রিট।যা ছিল আগে চিন্তার বাইরে ।২৩ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে ।আশা করি আরও হবে।এখন ঈদে স্কুল ছুটি কিন্তু আগে তা না থাকায় অনিচ্ছা স্বত্বেও বাচ্চাদের স্কুলে দিতে হয়েছিল জরুরি ক্লাস থাকার কারণে।ব্রঙ্কসে বাঙ্গালী কমিউনিটি ব্যাপক থাকার কারণে চাঁদ রাত হয় এবং খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই হয় ।আমরা বাঙ্গালীরা এতো কিছুর পরও সুখী না ।তাই তো কেউ একজন বললো চীলে তোমার কান নিয়ে গেছে ,তো দৌড় চীলের পিছনে ।যেমনটি হয়েছে বাসে লেখা ( রামাদান মোবারক ) ।ব্যাস,সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল ।ফেসবুকে,নানা ব্যক্তির স্ট্যাটাসে।বাসটি আসলেই কি এখানের,না অন্য দেশের? আমরা কি সত্যি জেনেছি ?

রোজা আসে অনেক কিছু শিক্ষা দিতে ।  সংযমের,ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকার,বিশেষ করে নিজেকে চিনতে সাহায্য করে ।নিউইয়র্কে কিছু কিছু সংগঠনকে দেখা যায় ,রোজার মাসে রোজার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে ।ভালো কথা কিন্তু এখানে কেন ?গরীব দেশে দাও,যেখানে শত শত মানুষ না খেয়ে আছে ।আমেরিকাতে যাদের সামর্থ্য নেই ,তারা অন্য দশজনের চেয়ে অনেক ভালো আছে ।এখানে সরকার ভালো টেককেয়ার করে ।তারা কেউ না খেয়ে নেই ।এসব সংগঠনের আসল নিয়ত কি তারাই ভালো জানেন ।নিজেকে চিনতে গিয়ে নিজের বিবেককে হারিয়ে ফেলছেন না  তো ?আল্লাহ্ সবাইকে হেদায়েত করুক ।

Facebook Comments Box

Posted ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com