বুধবার ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান প্রকম্পিত হবে লাব্বাইক ধ্বনিতে

বাংলাদেশ ডেস্ক   |   সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   120 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান প্রকম্পিত হবে লাব্বাইক ধ্বনিতে

পাঁচ দিনব্যাপী পবিত্র হজের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা আগামীকাল মঙ্গলবার। এদিন তালবিয়া বা ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ (আমি উপস্থিত হয়েছি হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত হয়েছি তোমার সমীপে, তোমার কোনো শরিক নেই, পুনরায় আমি উপস্থিত হয়েছি, নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও সকল নিয়ামত শুধু তোমারই জন্য, সব সাম্রাজ্যও তোমার এবং তোমার কোনো শরিক নেই) ধ্বনিতে গোটা আরাফাত ময়দান প্রকম্পিত হতে থাকবে।

মঙ্গলবার (সৌদি আরবে ৯ জিলহজ) মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে আসা মুসলমানরা হজের দ্বিতীয় রুকন আদায়ের জন্য সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত এই ময়দানের চারদিকে হলুদ বোর্ড দিয়ে চিহ্নিত এলাকার ভেতরে অবস্থান করবেন সারা বিশ্ব থেকে আসা ২০ লাখ মুসলমান। এখানেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। এ নিয়ে হজযাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতি তৈরি হয়েছে। তাঁরা প্রায় সার্বক্ষণিক জিকিরে মশগুল রয়েছেন। তালবিয়া পড়ছেন।

তিন দিক হতে পাহাড় পরিবেষ্টিত ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে রয়েছে রহমতের পাহাড় (জাবালে রহমত)। এই পাহাড়টি দোয়া কবুলের স্থান। এ কারণে কোনো কোনো হজযাত্রী বুধবার জাবালে রহমত পাহাড়ে উঠেও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। কোনো কোনো হজযাত্রী প্রায় দুই মাইল দৈর্ঘ্য এবং দুই মাইল প্রস্থের অর্থাৎ প্রায় চার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিরাট ও বিশাল আরাফাত ময়দানে যাঁর যাঁর মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী করবেন। এই ময়দানে একটি উঁচু পিলার রয়েছে। এই পিলারটিও দোয়া কবুলের স্থান। আদি পিতা প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) এবং আদি মা হাওয়া (আ.) আরাফাতের ময়দানে এসে পুনর্মিলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁরা এই ময়দানেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।

হিজরি সাল অনুযায়ী ১৪৩৪ বছর আগে (১০ হিজরিতে) ঐতিহাসিক এই আরাফাত ময়দানেই বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এ কারণে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে আসার পর যাঁরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাঁদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে আনার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ হুইল চেয়ারে করে এই ময়দানে আসেন।

আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে জোহরের নামাজের আগে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আরবি ভাষায় হজের খুতবা পাঠ করা হবে। এবার খুতবা দেবেন শায়খ ড. ইউসুফ বিন মোহাম্মদ। তিনি নামাজের ইমামতিও করবেন। হজের খুতবা বাংলাসহ প্রায় ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে শোনানোর প্রস্তুতি রয়েছে। হজযাত্রীরা হজের খুতবা শুনবেন। পবিত্র হজের খুতবার পর মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসলমানরা এক আজান এবং দুই ইকামতে জোহর ও আছরের নামাজ এক সঙ্গে জামাতে আদায় করবেন। কারো অবস্থান মসজিদে নামিরা থেকে দূরে থাকলে তিনি নিজের তাঁবুতে আলাদাভাবে আদায় করবেন জোহর এবং আছরের নামাজ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু সময় পর্যন্ত হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানেই অবস্থান করবেন।

হাজিরা সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু সময় পরে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাত ময়দান থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। মুজদালিফায় গিয়ে এশার নামাজের সময় এক সঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায়ের পর তাঁরা সেখানেই খোলা আকাশের নীচে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত যাপন করবেন। রাতে প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য সেখান থেকে ৭০টি পাথর সংগ্রহ করবেন। সুবহে সাদিক পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ।

হাজিরা বুধবার ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় অবশ্যই মুজদালিফায় অবস্থান করবেন। এরপর তাঁরা মুজদালিফা থেকে মিনায় যাবেন। সেখানে মিনার জামারায় (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়ার স্থান) বড় শয়তানের উদ্দেশে প্রতীকী সাতটি পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি এবং রাসুলুল্লাহর (সা.) আদর্শ অনুসরণে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন ও গোসল করবেন। নারীরা চুলের অগ্রভাগ থেকে প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটবেন। এরপর হাজীরা সেলাইবিহীন ইহরাম খুলবেন। পশু কোরবানি দেবেন।

এরপর হাজীরা হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন আদায়ের জন্য মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে সুবহে সাদিকের পর থেকে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাতবার ‘সাঈ’ (দৌঁড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার ফিরে যাবেন মিনায়, নিজেদের তাঁবুতে। হজযাত্রীরা ১১ জিলহজ আবার মিনার জামারায় গিয়ে জোহরের নামাজের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। একইভাবে ১২ জিলহজ আবারও ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপের পর সন্ধ্যার আগে তাঁরা মিনা ত্যাগ করবেন। ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে কাবা শরীফকে ফরজ তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা।

আরাফাতের ময়দানে আসার আগে পবিত্র হজ পালনের প্রথম আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে হজযাত্রীরা সোমবার সারাদিন মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরীফ) থেকে পূর্ব দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে দু’দিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এলাকা মিনায় অবস্থান করেছেন। সেখানে তাঁরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকিরে মশগুল ছিলেন। ওই সময়ে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নামে গুঞ্জরিত ছিল পুরো মিনা এলাকা। হজযাত্রীরা সেখানে ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন।

Facebook Comments Box

Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com