বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদ নিয়ে কিছু কথা ঃ আফরোজা ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০১ মে ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   265 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ঈদ নিয়ে কিছু কথা ঃ আফরোজা ইসলাম

 

‘রমজানের ঐ রোজার শেষে

এলো খুশির ঈদ’ ।

রোজার শেষ দিন অর্থাৎ চাঁদ রাত হতে কাজী নজরুল  ইসলামের এই গান শুনে শুনে বড় হয়েছি।ঈদ মানেই আনন্দের জোয়ার,ঈদ মানেই খুশির সঞ্চার।ঈদ আরবী শব্দ।শব্দটির মূল রূপ হলো ফিরে আসা ।তাই তো প্রতিবছর ঈদ আনন্দ নিয়ে  ঘুরে ফিরে আসে আমাদের মাঝে ।

 

বাংলা তথা বাংলাদেশের ঈদ উদযাপনকে জনপ্রিয় করে তোলেন মোঘলরা।সেই সময়কার চিত্রাঙ্কণে মোঘল সম্রাট বাবরকে রাজদরবারে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে  দেখা যায় ।মোঘল সৈন্যদের ছাউনি থেকেই ঈদের আনন্দ বার্তা ঘোষণা করা হতো ।জানা যায় ,তারা ঈদ উৎসব পালন করতো দুই তিন দিন ধরে ।খাবারের আয়োজনে থাকতো নানান বৈচিত্র্য ।যার প্রভাব এখনও বাংলাদেশে বিরাজমান।তাই মোঘলীয় খাবার ছাড়া ঈদের আনন্দের আমেজ আমরা কল্পনাই করতে পারি না ।

আমরা যারা প্রবাসে আছি ,ঈদ এলেই তুলনা করি যে ,কোন ঈদ মজা হতো বাংলাদেশে না এখানে ? গবেষণায় জানা যায়,বাংলাদেশের ঈদটাই  বেশী আনন্দের ।একটু মনও খারাপ হয় কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় বাংলাদেশের ঈদের মজার কারণ ছোটবেলা।সেই সময় আমাদের বেশী চাহিদা ছিল না ,জীবনের মানেও ভালো ভাবে বুঝতাম না ।মা বলতেন,আজকে অর্ধেক বেলা এবং কালকে অর্ধেক বেলা না খেলে একটা রোজা হয়ে যাবে ।তাই বিশ্বাস করতাম ।রোজা না রেখেও ইফতারের টেবিলে দৌড়ে চলে যেতাম।মা বাবার কাছে নতুন জামা কাপড়ের জন্য কান্না কাটি করতাম ।ঈদে সালামির জন্যও দাঁড়িয়ে থাকতাম এবং যতখন না দিতো,ততখনই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতাম।আজ বড় হয়ে গেছি।জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি প্রতিদিন।আজও ঈদ ঠিকই রয়েছে ,শুধু হারিয়ে গিয়েছে ছোটকালের সেই ঈদের আনন্দটাই ।সত্যি খুব মিস করি সেই ছোটবেলার ঈদটাকে।সেটা আজ চাইলেও ফিরে পাবো না ।

 

আমেরিকায় ২৩বছরে বাংলাদেশে গিয়ে কখনো ঈদ করা হয়নি । এদেশে যাদের জন্ম বা বেড়ে উঠা সন্তানদেরকে আমাদের মতো করে ঈদ দেখাইনি বা দেখাতে পারিনি।বেশীর ভাগ সময় তারা ঈদ করেছে স্কুলে ।বাবাও কাজে গেছে ,মা বেচারী কি আর করবে ?ঈদ এসেছে ,ঈদ চলেও গেছে এবং এই ঈদ কেটেছে টক,ঝাল, মিষ্টির মতো ।মনে পড়ে পুক্যাপসীতে  থাকাকালীন একবার ঈদে রোজা রেখে কাজে গেছি।তখন আমি আইবিএম এ কাজ করি।পাকিস্তানী আনসার নামে এক ছেলে ঈদ মোবারক দেওয়াতে জানতে পারলাম ২৯টা রোজা হয়েছে ।আনসার আমাকে কেন্টিনে নিয়ে গিয়ে রোজা ভাঙালো।এভাবে ১০বছর কেটেছে পুক্যাপসীতে আমাদের  সন্তানদের ছোটবেলা ।আরও দুই বছর পর নিউইয়র্ক সিটিতে ফিরে আসা ।নিউইয়র্ক সিটিতে ঈদের সাধ পাওয়া যায় অনেকটা বাংলাদেশের মতো ।কিন্তু সন্তানরা ততদিনে বড় হয়ে গেছে ।বড় ছেলে কাজের প্রয়োজনে আট দিনের জন্য ফ্লোরিডায় যেতে হয়েছিল ।ছোট ছেলে কাজের দিনে ঈদ হওয়াতে নিউজার্সিতেই ঈদ যাপন করেছে।সে তো আর ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তির মতো কিংবদন্তী নয়,যে নদী সাঁতরিয়ে চলে আসবে?

 

এবারে ঈদটাকে একটু অন্যভাবে উপভোগ করেছি ।চাঁদ রাতে খলিল ভাই এর নতুন ফুড কোটে ফুচকা খাওয়া থেকে শুরু করে মেহেদি লাগানো এবং বাংলাদেশী কিছু উশৃংখল ছেলেদের বেপরোয়া আতশবাজি ফুটানোও দেখেছি ।ঈদের দিন কর্তার জন্ম ভূমি উল্লাপাড়ার ১৭,১৮ টা ফ্যামিলী মিলে ফেরিপয়েন্ট পার্কে মোঘল আমলের স্ট্যাইলে ঈদটাকে উদযাপন করে ।আমরাও ছিলাম এ উৎসবে।খোলা আকাশের নীচে, বিশাল ঘাসযুক্ত মাঠে,নদীর ধারে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে ঈদ উদযাপন,ওহ্ বড়ই আনন্দময় ছিল ।মোঘল আমলের মতো নানান রকম বাদামযুক্ত সেমাই থেকে শুরু করে ,নানান পদের খাবারের পাশে চটপটি এবং চা পরিবেশনও উল্লেখ করার মতো ।খোলা মাঠে চা বানিয়ে গরম গরম চা পান করা কি শান্তি তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।সেইজন্য লিটন ভাইকে ধন্যবাদ জানাই ।কারণ যতবারই চলে আসতে চেয়েছি ,ততবারই উনি বাধা দিয়েছেন।চা না খেয়ে যেতে পারবেন না ।তাই তো চা খাওয়ার আনন্দটুকু উপভোগ করতে পেরেছিলাম।

 

ঈদের পরেরদিন শেরেবাংলা এ্গ্রিকাল্চার ইউনিভারসিটির মামুন ভাই এর বাসায় খাওয়া দাওয়ার পর  চার ফ্যামিলী মিলে হান্টার পয়েন্ট পার্কে চা,সমোছা এবং বাচ্চাদের জন্য পিচ্জার মাধ্যমে আনন্দময় সময় কাটানো হয়েছিল।পরে জানা যায়,আরেক এ্গ্রিকাল্চারিস্ট প্রভাত দাদা ও শাপলা বৌদীর বিবাহ বাষিকী ছিল ।চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির ফারুক ভাই ,ভাবী এবং তাদের দুই বিউটি ফুল বাচ্চাও এ আনন্দময় পরিবেশকে আরও আনন্দময় করে তুলেছিল।তৃতীয় দিনে ছিল শো টাইম মিউজিকের আলমগীর আলম ভাইয়ের বর্ষবরণ এবং ঈদপূনর্মিলন কুইন্স প্যালেসে ।পান্তা ভাত,আলুভর্তা ,ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল ।এতই ক্লান্ত ছিলাম যাওয়া হয়ে উঠেনি।তবে কর্তা গিয়েছিলেন এবং মজার খাবার না খেয়েই চলে এসেছিলেন ।কারণ এলার্জির সমস্যা।

 

শুনেছি মোঘলরা ঈদ উৎসব উদযাপন করতেন দুই ,তিন দিন ধরে ।মোঘলদের মতো আমরাও ঈদের আমেজকে তিন দিন ধরে রাখার চেস্টা করি।এভাবে প্রতি বছর ঈদ সবার জীবনে আনন্দ নিয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হউক এই প্রত্যাশা করি।

 

Facebook Comments Box

Posted ১:২০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ মে ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com