২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। আর বড়দিন মানেই কেক, উপহার, সুন্দর করে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো আরও অনেক কিছু। খ্রীষ্ট ধর্মের এক বিরাট উৎসব হলেও ক্রিসমাস কিন্তু দেশ-কাল-সীমানা-ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক বিশেষ উৎসবে পরিণত হয়েছে।
আর এই ক্রিসমাসের রাতেই সান্তা ক্লজ আসে ছোটদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে। আর তাই ক্রিসমাসের আগের রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছোটদের ঝোলানো মোজায় রেখে আসে উপহার। আর ক্রিসমাসের এই অন্যতম আকর্ষণ হল এই সান্তা বুড়ো। কিন্তু জানেন কি, কে এই সান্তা ক্লজ আর কোথা থেকেই বা উৎপত্তি হল এই সান্তা ক্লজের।
আসুন তাহলে জেনে নেই।
সান্টা ক্লজ এক কাল্পনিক চরিত্র হলেও এর উৎস কিন্তু এক সত্যকারের ব্যক্তি হতেই । তবে শত শত বছরে বিবর্তনে আজকের সান্টা সাথে সেকালের সান্টা মাঝে অনেক পার্থক্য রচেছে ।
আমরা যে সান্টাকে চিনি সেই সান্টা খুবই স্থুলদেহী এক , মুখভর্তি সাদা দাড়িগোঁফ, যে কিনা টকটকে লাল রংয়ের কোট, লাল রংয়ের প্যান্ট, কোমরে চওড়া কালো বেল্ট, কালো বুটজুতা, মাথায় লাল টুপি পরা, পিঠে থাকে বিরাট এক ঝোলা যার মধ্যে থাকে বাচ্চাদের জন্য উপহার। সান্টা বাচ্চাদের ভালোবাসে, তার কাছে লক্ষ্মী ও দুষ্ট ছেলেমেয়েদের লিস্ট থাকে। ক্রিসমাস ইভনিং-এ নর্থ পোল থেকে সান্টা ক্লজ তার আটটি রেইন ডিয়ার নিয়ে আকাশে উড়ে উড়ে ভালো বাচ্চাদের বাড়ির চিমনি দিয়ে ঘরে ঢুকে গিফট রেখে যায়। আর সব বাড়িতেই দুধ আর কুকি খায় ।
মিথ অনুসারে, সান্টাক্লজ সুদূর উত্তরে এক চিরতুষারাবৃত দেশে বাস করেন। আবার সান্টা ক্লজ সংক্রান্ত আমেরিকান উপাখ্যান অনুসারে, তাঁর নিবাস উত্তর মেরুতে। সান্টাক্লজ তাঁর স্ত্রী মিসেস ক্লজ, অসংখ্য জাদুকষমতা সম্পন্ন এলফ, এবং আট-নয়টি উড়ন্ত বলগা হরিণের সঙ্গে বাস করেন। তার দেওয়া অন্যতম উপহারগুলো হলো, চকোলেটের বর্ণ (সাধারণত বাচ্চার নামের আদ্যক্ষর) পেপারনোটেন (pepernoten), ক্রাউডেননোটেন (kruidennoten), স্পেকুলাস (speculas), কমলা, চকোলেট কয়েন্স, ইত্যাদি।
এই সান্টা ক্লজকে বিশ্বজোড়া পরিচিত করে তোলে আমেরিকানরা । যদি এই সান্টা ক্লজকে প্রথম এই দেশে আনে ওলন্দাজরা বা ডাচ অধিবাসীরা । ২। এখন আসি আসল সান্টা ক্লজের খোঁজে । কয়েকশ বছর আগে সেইন্ট নিকোলাস নামের এক প্রিস্ট/বিশপ/পাদ্রী/ফাদার ছিলেন । তিনি ছিলেন খুবই দয়ালু । ইতিহাসবিদরা বলেন তার জন্ম আধুনিক তুরস্কের নিকটবর্তী ‘পাতারা’ নামক কোনো এক গ্রামে। কথিত আছে, সেইন্ট নিকোলাস উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সব সম্পত্তি গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সেইন্ট নিকোলাস এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা, এক দেশ থেকে আরেক দেশ চষে বেড়াতেন, যেখানেই কাউকে দুস্থ দেখতেন অথবা কাউকে বিপদগ্রস্ত দেখতেন, তিনি সাহায্য করতেন । উনি বাচ্চাদের ভীষণভাবে সাহায্য করতেন । চুপিচুপি তাদের জন্য গিইফ রেখে যেতেন । বাচ্চাদের অবাক করা হাসিমুখ তার খুব পছন্দ হতো । তার এই জনদরদী মনোভাবে এক সময় সারা ইউরোপে তার নামে জয়জয়কার শুরু হতে থাকে। সেইন্ট নিকোলাস পরিচিতি পেতে থাকেন বাচ্চাদের পরম বন্ধু ও সবার দুর্দিনের সাথী হিসেবে। এভাবেই একসময় সেইন্ট নিকোলাস সারা ইউরোপে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেইন্ট হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং তার মৃত্যুর পর ৬ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদিনটি একটি শুভদিন হিসেবে পালন হতে থাকে । তার অনুসারীরা এই দিনটিকে সেইন্ট নিকোলাসের স্মরণে বাচ্চাদের চুপিচুপি গিইফ দেওয়ার প্রথা চালু করেন ।
Tactic in Australiaপ্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী নিকোলাস ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপহার দিতেন। কিন্তু এখন আমরা রঙিন পোশাক পরা যে সান্তা ক্লজকে দেখি, তিনি তেমন কোনো পোশাক পরিধান করেননি।
১৮২৩ সালে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের লেখা ‘A visit from St. Nicholas’ কবিতায় এই পোশাকের উদ্ভাবন হয়। আজকের সান্তা ক্লজের রঙিন পোশাকের সূচনা হয় এই কবিতা থেকেই, যা বিভিন্ন পরিক্রমায় আজকের এই রূপ লাভ করেছে। এক সন্ত আটটি হরিণটানা গাড়িতে করে উড়ে উড়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছেন—এমন চিত্রই ফুটে ওঠে এই কবিতায়।
১৮৮১ সালে থমাস ন্যাসট নামক একজন আমেরিকান কার্টুনিস্টের আঁকা ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সান্তা ক্লজের এই সাজ ব্যাপক খ্যাতি পায়। সেখানে সান্তা হরিণটানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারভর্তি ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে, এই ছবিটি গোটা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এভাবেই সারা বিশ্বে ক্রিসমাস ডের আগের রাতে বাচ্চাদের বাসায় বাসায় উপহার দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। আর বাচ্চারা বিশ্বাস করে, সান্তা ক্লজ জাদু জানেন। জাদু দিয়ে উড়ে এসে তাদের নানা রকম উপহার দিয়ে যায়। (তথ্য সংগৃহিত)।