ডেস্ক রিপোর্ট | শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 283 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি হাজারে ৩৬১ জন শিশু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বছরে মৃত্যু হচ্ছে ২৪ হাজার শিশুর। হাসপাতালে ৪৫ শতাংশ শিশুমৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। সেবাগ্রহীতার ৪২ শতাংশের রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে এই অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা নির্ণয়েরও ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রয়োজনের সময় অক্সিজেন স্বল্পতার ১৩ শতাংশের মৃত্যু ঘটে।
নিউমোনিয়া আক্রান্তের বড় একটি অংশের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ) সেবা প্রয়োজন হয়। তবে দেশে চাহিদার তুলনায় এর স্বল্পতা রয়েছে। এ সংকট নিরসন না হলে নিউমোনিয়ায় আগামী এক দশকে বাংলাদেশে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শিশুর অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনিসেফ।
এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো আজ শনিবার বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে’। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনসহ এ রোগটি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছে কিনা পরীক্ষা করা হয় না বেশিরভাগ হাসপাতালে। রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা নির্ণয়ে ঘাটতি এবং মেডিকেলে অক্সিজেনের অপ্রতুলতায় শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। পালস অক্সিমিটার দিয়ে এটি মাপা যায়। কিন্তু শিশুদের পরিস্থিতি মাপার জন্য এই যন্ত্র পাওয়া দুস্কর।
শিশুদের বুকের খাঁচার নিচে দেবে যাওয়া, মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, গলার মাংস ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখে মাথায় অক্সিজেন স্বল্পতা ধরে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ২৮ ভাগ প্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন মাপার ‘পালস অক্সিমিটার’ যন্ত্রটি ছিল না।
আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের (রক্তে অক্সিজেন ঘাটতি) হাইপোক্সেমিয়া হলে এবং তারা সময়মতো পর্যান্ত পরিমাণে অক্সিজেন না পেলে মৃত্যু ঘটতে পারে। দ্রুত অক্সিজেনের জোগান দিলেই কেবল তাদের মৃত্যুহার কমতে পারে। সরকারকে এ বিষয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
গত ৬ নভেম্বর পুরান ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন কেয়া আক্তার। এটি তাঁর প্রথম সন্তান। মা ও নবজাতক দু’জনই অসুস্থ। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুটির এনআইসিইউ প্রয়োজন। দু’দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তির চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। কোনো শয্যা খালি নেই। জানা গেছে, এ হাসপাতালের এনআইসিইউতে মাত্র ৪২টি শয্যা আছে।
আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। একটি শিশু ওয়ার্ডে ৩০ জনের ১১ জনই নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন পরিচালক (মা, নবজাতক শিশু ও কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য) শামসুল হক বলেন, সরকার ৪৪টি জেলায় নবজাতক শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিট চালু করেছে। পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলোতেও এই সেবা চালু করা হবে।
বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা বলেন, অপর্যান্ত সেবা, অপুষ্টি ও বায়ুদূষণের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আক্রান্তের অধিকাংশই শিশু। টিকার চাহিদা বাড়ছে। দেশে বর্তমানে নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ব্যবহূত টিকা নিউমোভ্যাক্স-২৩-এর চাহিদার তুলনায় জোগান সীমিত। সানোফি বাংলাদেশ এ টিকা তৈরি করে। কয়েক বছর এ টিকা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে তারা। তবে দেশে ফাইজারের তৈরি একটি টিকা পাওয়া যাচ্ছে। তবে কয়েক বছরে এর দাম প্রায় ৫ গুণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে এর দাম ছিল ১৫০০ টাকা। বর্তমানে ৫৫৭০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
Posted ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২
nykagoj.com | Stuff Reporter