মঙ্গলবার ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থাভাবে থেমে যায় অনেকের চিকিৎসা

স্বাস্থ্য ডেস্ক   |   বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   15 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

অর্থাভাবে থেমে যায় অনেকের চিকিৎসা

গাজীপুর কালীগঞ্জের আমির হোসেনের (৩৭) শরীরে সেই শিশু বয়স থেকে কালচে দাগ। কোথাও একটু কেটে গেলে রক্ত পড়া বন্ধ হতো না। মাঝেমধ্যে হাঁটু, কনুই ও শরীরের অন্যান্য অংশ ফুলে যেত। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসায় কোনো উপকার মেলেনি। পরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, জন্মের পর থেকে তিনি হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত। রোগটি জিনগত ও অনিরাময়যোগ্য।

এর পর থেকে আমির হোসেনকে ইনজেকশনের মাধ্যমে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা (রক্তের তরল অংশ) নিতে হয়। ওষুধপত্র কিনতে প্রতি মাসে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকার বেশি। এই খরচ মেটাতে আমিরের পরিবার নিঃস্ব। জমিজমা যা ছিল বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন ধারদেনা করে চিকিৎসা চলছে। আবার অনেক সময় রক্তের প্লাজমা ডোনার পাওয়া যায় না। বিভিন্ন হাসপাতাল ও সোসাইটিতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।

দেশে আমির হোসেনের মতো হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা কত, সরকারিভাবে সেই তথ্য পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য অনুসারে, প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত। সেই হিসাবে দেশে হিমোফিলিয়া রোগী ১৭ হাজার বলে অনুমান করা হয়। তবে হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এইচএসবি) এ পর্যন্ত ৩ হাজার রোগী শনাক্ত করেছে। অর্থাৎ, ৮২ শতাংশ রোগী এখনও শনাক্ত হয়নি।

সংগঠনটির তথ্য অনুসারে, নিবন্ধিত রোগীর ৯০ শতাংশই চিকিৎসার খরচ মেটাতে পারে না। পরিস্থিতি জটিল না হলে চিকিৎসকের কাছেও যায় না। অর্থাভাবে অনেকের চিকিৎসা থেমে যায়। দেশে এই রোগে আক্রান্তের মাত্র ১৮ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় রয়েছে। তাই হিমোফিলিয়া রোগী শনাক্তে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।
লিটন আহমেদ (৪৮) থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। ডিম ব্যবসায়ী লিটন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত। তাঁর এই রোগ জন্মগত হলেও শনাক্ত হয়েছে পাঁচ বছর আগে। চিকিৎসক তাঁকে প্রতি মাসে একটি ইনজেকশন (ফ্যাক্টর) নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যার দাম ১০ হাজার টাকা। তিন বছর ওই ইনজেকশন নিলেও এখন অর্থাভাবে নিতে পারছেন না। বিকল্প হিসেবে মাসে দু’বার প্লাজমা নিচ্ছেন। এতে তাঁর খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মতো।

রোগটির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল পালন হয় বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। ‘সব রোগীর সমান চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ’– দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের আয়োজনে আজ বুধবার সকালে বিশেষ আলোচনা সভা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ বলেন, ‘হিমোফিলিয়া রোগী সংখ্যায় কম, কিন্তু এ রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। তাই আক্রান্তরা অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা নিতে পারেন না। এ রোগের ওষুধ সহজলভ্য হওয়া দরকার। এজন্য স্থানীয়ভাবে ওষুধ উৎপাদন জরুরি।’ চিকিৎসা ব্যয় কমাতে অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা’ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘দেশে কত মানুষ রক্তরোগে আক্রান্ত, সেই সংখ্যাআমরা এখনও জানি না। আবার যেসব রোগী চিহ্নিত হচ্ছে, তারা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে না। ফলে তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব কমানো যাচ্ছে না।’

Facebook Comments Box

Posted ১২:১০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com