রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭ জানুয়ারি বিশ্ব বেহায়াদের নির্বাচনঃএকটি মঞ্চস্থ নাটক

মনোয়ারুল ইসলাম   |   সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   189 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

৭ জানুয়ারি বিশ্ব বেহায়াদের নির্বাচনঃএকটি মঞ্চস্থ নাটক

বিবেকের মাথা কাটা গেছে। চিন্তা শক্তি আজ বিপরীতমুখি। র্নিলজ্জ বেহায়াপনা দেখছে মানুষ। বিকারগ্রস্থ রাজনীতি। তা রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে গ্রাম পর্যায়ের নেতৃত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। জাতীয় একটি নির্বাচন হচ্ছে দেশে। সে নির্বাচন নিয়ে চলছে বেহায়াপনা। প্রধান দুটি বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ভোট বর্জন করেছে। তাদের যুক্তি দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে কোন নির্বাচনে তা হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতাসীনরাই আবার ক্ষমতায় আসে। আর সরকারি দল সংবিধানের দোহাই দিয়ে সুপ্রীম কোর্টের একটি বির্তকিত রায়কে পুঁজি করে এক তরফা নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করছে। কিন্তু এ নির্বাচন নিয়ে যা চলছে তা গনতন্ত্রের ইতিহাসে বেহায়াপনার উলঙ্গ নৃত্য বৈকি? নিজ দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে স্বয়ং দলীয় প্রধান নেতাকর্মিদের নির্দেশ দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে। প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই নির্দেশ দিলেন ‘ডামি’ প্রার্থী হবার। যুক্তি ২০১৪ সালের মতো ১৫৩ জন প্রার্থী যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হন। তা’হলে বিশ্বের কাছে মুখ দেখানো যাবে না। দিনের ভোট আর রাতে করা হবে না। কারন বিরোধীরা এবার ব্যালটে নেই। বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতকে জেলে ভরে নির্বাচন সম্পন্ন করাতে হবে। গত ১৬টি বছর ধরে পা চাটা গোলামের মতো ইনু ও মেননরা আওয়ামী লীগের বন্দেগী করছে। এবারও তারা ২ বা ৩ জন এমপি পাবার প্রত্যাশায় চেনা পথেই হাটছে। জাতীয় পার্টিও গত ২০টি বছর ধরে পদ লেহন করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের। তাদেরকে কেউই বিরোধী দল হিসেবে গণ্যও কওে না। এবারের নির্বাচনেও নিজ দলের এমপি প্রার্থীদের প্রার্থীতা প্রত্যহার করে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন দেয়া হয়েছে। আর তা না দিলে জাতীয় পার্টিও ভোট বর্জন করবে। তখনতো আরও মুখ দেখানো যাবে না। যদিও এই ভাগ বাটোয়ারা ছাড়া জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে একটি আসনেও জিততেত পারবে কিনা সন্দেহ আছে। আর ইনু মেননদেরতো জামানত হারাবার উপক্রম হবে। অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা হলো বানরের পিঠা বন্টন। নিজেরা ভাগ করে নেবার নির্বাচন। সেখানে জনগনের আকাংখার প্রতিফলন থাকবে না। লজ্জার বালাই পালিয়েছে রাজনীতির ময়দান থেকে। একটি মঞ্চস্থ নাটক প্রদর্শিত হবে সেদিন।
বিশ্বের কোন গনতান্ত্রিক দেশে এমন বেহায়াপনার নজির আছে বলে আমার জানা নেই। এরশাদ জমানায় শিল্পী কারুল হাসান এরশাদের রাজনৈতিক বেহায়াপনা দেখে ‘কার্টুন এঁকে লিখেছিলেন “দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’। ছাত্র জীবনে সেই কার্টুনকে পোষ্টার বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছি। জানি না কামরুল হাসান বেঁচে থাকলে আজ কি আঁকতেন। নয়তোবা লজ্জায় চাঁদরে মুখ লুকিয়ে রাখতেন। যেমনটি আজ আমাদের সমাজের বিবেকরা লুকিয়ে রাখছেন।

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনার শুরুটা অসাধারণ। যেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি। আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানেরও মূলনীতি হইবে।’ প্রশ্ন হলো আসলে কি তা হয়েছে? বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অধিকার বঞ্চনার প্রশ্ন সামনে এসেছে বারবার। আশির দশক জুড়েই পরবাস থেকে মুক্ত হওয়ার সংগ্রাম করতে হয়েছে বাঙালিকে। স্বৈরাচার হঠাও আন্দোলনে দিনের পর দিন রাজপথ ছিল উত্তাল। একদিকে হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ অন্যদিকে কারফিউ, গুলি চলে নির্বিচারে। নূর হোসেন, ডাক্তার মিলনসহ অনেকের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার মুক্ত হয় দেশ। ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর দিনটি তাই এদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এবার মানুষ আশার আলো দেখতে থাকে জনগণ। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী সে সময়ের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। আর এ দায়িত্ব পালন করতে তার দেয়া শর্তও মেনে নেন রাজনীতিকরা।

১৯৯১ সালে বলতে গেলে স্বাধীন ভোটের স্বাদ নেন দেশের মানুষ। নির্বাচনী উৎসবে ভিন্নরকম এক পরিবেশ দেশজুড়ে। ভোটের দিন দলে দলে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দেন। সে নির্বাচনে বিএনপি প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। দেশ এগুতে থাকে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় মাগুরার উপনির্বাচন নিয়ে। সে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ রাজপথে নামে। তার সঙ্গে যোগ দেয় জামায়াত। সামনে আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি। দেশ আবার হয়ে ওঠে আন্দোলনে উত্তাল। হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ চলতে থাকে। একপর্যায়ে রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে গঠন হয় জনতার মঞ্চ। সেই মঞ্চে যোগ দেন সরকারি আমলাদের কেউ কেউ। বাধ্য হয়ে সরকার ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দিয়ে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করে। এরপর ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। দায়িত্ব নেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সরকারের অধীনে নির্বাচনে দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার স্বাদ নেয়। গঠন করে সরকার। এরপর সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন হয়। যার একটিতে বিএনপি তথা চারদলীয় জোট ও আরেকটিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। কিন্তু সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অবশ্য এতে উচ্চ আদালতের একটি রায়কে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনে সরকার। সে যাই হোক এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন হয়েছে। এ দু’টি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে তা সবাই জানে।

আগামী ৭ই জানুয়ারি দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যে নির্বাচনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনাদলগুলো নেই। সরকারি দল আওয়ামী লীগ, তাদের শরিক ও মিত্ররা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিলের মাধ্যমে। এর প্রমাণ মেলে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে। সে নির্বাচনে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারেননি। কিংবা অনেকে ইচ্ছা করে ভোট দিতে যাননি। কারণ সে নির্বাচন বিএনপিসহ অনেক দল বর্জন করে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। যে আন্দোলন এখনো চলছে। যে কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা অংশ নেয়নি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ ক’টি দেশ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার তাগিদ দিয়েছে। দিচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না যে তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে গণতন্ত্র এখন উল্টোপথে হাঁটছে। কিন্তু গণতন্ত্রের উল্টোযাত্রা এ সবকিছুকে তুচ্ছ করে তুলেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় কি নেই?

 

Facebook Comments Box

Posted ৪:১০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ট্রায়াল ছবি
(332 বার পঠিত)
(212 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com