রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

বিচারহীনতার গভীর ক্ষত এসিডদগ্ধদের মনে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   149 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

বিচারহীনতার গভীর ক্ষত এসিডদগ্ধদের মনে

দাম্পত্য কলহে স্বামী মুরাদ আলীর এসিড আক্রমণে ঝলসে যায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কুমপুরপুর রানীনগর গ্রামের মাহমুদা খাতুনের (২০) শরীর। চিকিৎসায় পোড়ার যন্ত্রণা গেছে। কিন্তু এখন তাঁর মনে গভীর ক্ষতের জন্ম দিয়েছে বিচারহীনতা। আসামি টাকার জোরে তিন মাসেই জামিন পেয়ে যায়। এর পর থেকে মুরাদ মামলা তুলে নিতে প্রকাশ্যে হুমকিধমকি দিচ্ছে। ভয়ে ঠিকমতো বাড়িতে থাকতে পারেন না মাহমুদা।
গত বছর অক্টোবরে এসিড আক্রমণের শিকার হন মাহমুদা। এর পর থেকে মেয়েকে নিয়ে যে নিদারুণ সময় পার করছেন, তা কাছে তুলে ধরেন সেফাল বেগম। তিনি বলেন, ‘টাকার অভাবে মেয়ের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারিনি। এত দিনেও মামলার কোনো গতি হয়নি। আদালতের বারান্দায় গেলেই টাকা ঢালতে হয়। এত টাকা পাব কোথায়? তারা তো টাকার জোরে তিন মাসেই জামিন নিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। মেয়েকে নিয়ে বাড়িতেও থাকতে পারছি না।’

মাহমুদাকে আইনি সহায়তা দেওয়া রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, ‘এসিড আক্রমণের শিকার হলেও অর্থ ও পেশিশক্তির কাছে ভুক্তভোগীরা হেরে যাচ্ছেন। এসব মামলায় সরকারি কৌঁসুলির ভূমিকা খুবই স্ববিরোধী। তাঁরা ভুক্তভোগী ও সাক্ষীকে ধার্য দিনে আদালতে হাজির করাতে উদাসীন। এভাবেই বাড়ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসিড আক্রান্তরা।’
এমন প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ’ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘সবার মাঝে ঐক্য গড়ি, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করি’। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে ‘নারী ও কন্যার প্রতি যৌন সহিংসতা (ধর্ষণ) ও তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততা বিষয়ক’ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান। তিনি বলেন, ‘করোনার পরে মাত্র ১০ মাসেই ৬৪৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ৮২ শতাংশ ধর্ষণের শিকার নারীর বয়স ২০ বছরের নিচে। জরিপে ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, যুব জনগোষ্ঠীর যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার প্রবণতা বেশি।’ এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ।

মহিলা পরিষদ জানায়, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে এসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৫ নারী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২২ এবং তার আগের বছর ছিল ২১। ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাত বছরে এসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন ৩১৬ জন। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ১৮ নারী।

নারীপক্ষের সদস্য আইনজীবী কামরুন নাহার বলেন, ‘এসিড আক্রমণ কমে আসায় পুরোনো মামলায় প্রশাসনের নজরদারি নেই। নতুন করে এসিড আক্রান্ত হলেও সে বিষয়ে মনিটরিং হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত মামলা তদারকিতে জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের তিন মাস পরপর বৈঠকের কথা থাকলেও কয়েক বছরে তারা একটি সভাও করেনি।’

এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, এসিড আক্রমণের ঘটনায় মাত্র ৯ ভাগ মামলায় সাজা হয়। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু এসিড আক্রান্ত হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আইনজীবী সুরাইয়া পারভীন বলেন, ‘দুর্বল এজাহারের কারণে এসিড আক্রমণের মতো জঘন্য অপরাধ করেও আসামিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, সামাজিক ও পেশিশক্তির কারণে বেশিরভাগ মামলায় আসামির সাজা হচ্ছে না। এতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাচ্ছে।’

Facebook Comments Box

Posted ১:০৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com