নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট | 263 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
বাংলাদেশে শীত কাল আসলেই চারিদিকে পিকনিক পিকনিক আমেজ লেগে যায় ।পিকনিককে আমরা বাংলায় কেউ বলি বনভোজন ,কেউ বলি চড়ুইভাতি।এই চড়ুইভাতি হচ্ছে বাচ্চাদের পিকনিক পিকনিক ধরণের একটি খেলা ।তাই পিকনিকের বাংলা প্রতিশব্দ যদি কিছু হতে হয় তাহলে হওয়া উচিত বনভোজন ।বনভোজনকে অনেক জায়গাতেই বলা হয় পৌষলা।তার কারণ অনেকদিন আগে থেকেই পৌষ মাসে নতুন ধান উঠার পরে বাংলার গ্রাম – গন্জে ছেলে – মেয়েরা বাড়ি থেকে চাল,ডাল,আলু,ডিম ইত্যাদি নিয়ে এবং সাথে হাড়ি- কুড়ি নিয়ে মাঠে গিয়ে ইটের চুলা বানিয়ে রান্না – বান্না করে আনন্দ উৎসব করতো। এই যে আনন্দ করার উৎসব এটাই পৌষলা।অনেক জায়গায় পৌষলাকে বলা হয় চুলাভাতি।
চড়ুইভাতির কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় পাঠ্য বই এ পড়া কবি গোলাম মোস্তফার সেই বনভোজন কবিতাটি -—
“নূরু,পুষি,আয়েশা,শফি সবাই এসেছে ,
আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে।
রাধুনীদের সখের রাধা পড়ে গেছে ধূম,
বৈশাখ মাসের এ দুপুরে নাইকো কারও ঘুম “।
আমেরিকাতে বাংলাদেশের উল্টো পিঠ অর্থাৎ শীতের বিদায়ের অপেক্ষায় সবাই চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে এবং সামার শুরু হতে না হতে পিকনিক বা বনভোজনের ধুম পড়ে যায় । নিউইর্য়কে নানান সংগঠন আছে ।একই সংগঠন আবার দুই বা তিন ভাগে বিভক্ত ।কাজেই পিকনিকের ছড়াছড়ি।জুনের প্রথমদিকেই বেলমন্ট লেক স্টেট পার্কে হয়ে গেল বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের তিন খন্ডে বিভক্ত এক খন্ডের বনভোজন ।এই ক্লাবের সভাপতি প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক সায়ীদ ভাই এর আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত ছিলাম এবং মজার বিষয় লক্ষ্য করলাম রাফেল ড্র তে মিরাক্যালভাবে সংগঠনের সাত ব্যক্তি সাতটি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ।
প্রবাসী উল্লাপাড়া এসোসিয়েশন অব ইউ এস এর বার্ষিক বনভোজন গত ৯ই জুলাই ২০২৩ রোববার মনোরম পরিবেশে কুইন্সের কুইন্স ব্রীজ পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ।একই দিনে খন্ডে বিভক্ত আর এক গ্রুপের ও বনভোজন অনুষ্ঠিত হয় ।দুইটাতে উপস্থিত হতে পেরেছিলাম এবং হাসান ভাই ও লিটন ভাইয়ের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলাম ।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় প্রবাসী শেরপুর জেলা সমিতির বনভোজন । নিউইয়র্ক সিটির অদূরে আপস্টেট হাডসনে এক মনোমুগ্ধকর ছায়াঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে “ক্রোটন পয়েন্ট পার্কে “গত ৯জুলাই ২০২৩ সম্পন্ন হয় বনভোজন । বনভোজনের শুভ উদ্বোধন করেন লেখক,সাংবাদিক ও প্রবাসী শেরপুর জেলা সমিতি ইউ এস এ ইন্ক এর প্রধান উপদেষ্টা মোঃ আবুল কাশেম ।কাশেমভাই খুবই আন্তরিক একজন মানুষ।তিনি আন্তরিকভাবেই এই বনভোজনে ভোজন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।কিন্তু যে কারণেই হোক উপস্থিত হতে পারি নাই ।
যে কারণে আমার এই চড়ুইভাতি বা বনভোজন সম্পর্কে লিখতে বসা সেটা হলো গত ১৫ই জুলাই ২০২৩ লং আইল্যান্ডের হেক শেয়ার ষ্টেট পার্কে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের জমজমাট বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।নিউইয়র্কে সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রেসক্লাব।সেইদিন বসেছিল সাংবাদিকদের মিলন মেলা ।নিউইয়র্ক থেকে ৫১ মাইল দূরে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে উপভোগ করছিলাম বনভোজনের ভোজন পর্ব থেকে শুরু করে এক এক করে প্রতিটি পর্ব।শেষ পর্যায়ে র্র্যাফেল ড্র ।২য় পুরস্কারটির নাম্বার বলার সাথে কর্তার হাতে থাকা নাম্বারটি মিলে যাওয়াতে জিতে নিলাম গলার স্বর্ণের চেইন।স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে মনটা ফুর ফুর বাতাসের ঝাপটা দিচ্ছিল।আনন্দের ঝাপটা বেশীক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি ।পরেরদিন অর্থাৎ ১৬ই জুলাই ২০২৩ রোববার আমার ছোট দেবর,কর্তার ছোট ভাই হঠাৎ হার্ট এটাকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যায় ।মৃত্যুর নয় দিন পর লিখতে বসলাম ।কর্তাও আজ ২৪শে জুলাই ৬দিন পর কাজে যোগ দিলেন ।এভাবে নয় দিন ,নয় মাস,নয় বছর চলে যাবে ।কিছুই থেমে থাকবে না ।প্রকৃতি তার আপন গতিতে চলমান।আল্লাহ্ সূরা আলাম নাশরাহ্ বলেছেন,কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে ,নিশ্চয় আছে কষ্টের সাথে স্বস্তি।
সবকিছুর পরেও বলতে চাই যদি তুমি তোমার মন থেকে অতীত বছরটির খারাপ মেমোরিসগুলো মুছে ফেলতে চাও,তাহলে একটি বনভোজন সুন্দর ইরেসার(eraser) কাজ করতে পারে ।আমরা যারা বেঁচে আছি আল্লাহ্ আমাদেরকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন (আমিন)।
Posted ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam