নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৫ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট | 347 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
সোনালী এক্সচেঞ্জ কি বিমানের পথে হাঁটছে? তদবির পোষ্টিং ও লোকসানের ভাড়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি রাজনৈতিক দলের নেতাদের আত্মীয়দের লোভনীয় পোষ্টিং দেয়া হয়ে থাকে নিউইয়র্কে। তাদের পেছনে অহেতুক গুনতে হয় প্রতিমাসে ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো ডলার। যে কাজটি ঘন্টায় ১৫ ডলারে নিয়োগ দিয়ে করানো যায়, তা করতে বাংলাদেশ থেকে আনা হচ্ছে কর্মচারি হাজার হাজার ডলার ব্যয়ে। বহন করতে হয় তার ও পোষ্যদের বাসাভাড়া, বেতন ও ইন্সুরেন্সসহ যাবতীয় খরচাদি। যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী একসএচঞ্জের ১০ টি ব্রাঞ্চ রয়েছে। এরমধ্যে নিউইয়র্ক শহরে ৫টি। ম্যানহাটনে করপোরেট অফিস। ব্রাঞ্চ রয়েছে জ্যাকসন হাইটস, এস্টোরিয়া, ব্রুকলিন, জামাইকা ও ব্রংকসে। এরমধ্যে জ্যাকসন হাইটস ও জামাইকায় ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ থেকে কর্মচারি এনে। তাদের পেছনে খরচ করা হচ্ছে প্রতিমাসে ১০ হাজারের অধিক ডলার। অথচ লোকালি (নিউইয়র্ক) হায়ার করলে প্রতি ঘন্টায় ১৫ ডলারে লোক পাওয়া সম্ভব। যাতে মাসে খরচ হতো মাসে ২,৪০০ ডলার। জাতীয় সংসদের বড় কর্তা বা এমপি-মন্ত্রীদের সরাসরি তদবিরে তাদের নিউইয়র্কে এই পদায়ন। তারা কেউ ভাগ্নী বা ভাই। এ সব বদলী বা নিয়োগের প্রধান আকর্ষন হচ্ছে আমেরিকার গ্রীনকার্ড বা নাগরিকত্ব। দেশের স্বার্থটি মুখ্য নয়। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছে। এ সময়ে যত ম্যানেজার বা সিইও এসেছেন তাদের অধিকাংশই আজ গ্রীনকার্ডধারি বা নাগরিক। এদেশের আইনের আওতায় সবারই কাগজপত্র করার অধিকার রয়েছে।এ দেশটিও স্বাগত জানায়। কিন্তু এ সব পোষ্টিং নিতে ঢাকায় যে লংকাকান্ড ঘটে তাতেই সবার আপত্তি। অথচ ব্রংকস, এস্টোরিয়া ও ব্রুকলিন ব্রাঞ্চ চালানো হচ্ছে স্থানীয় কর্মচারিদের মাধ্যমেই। কোন অসুবিধা হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও পদটিও সোনালী ব্যাংকের কর্মচারিদের কাছে আকাশের তারা বা হাঁসের সোনার ডিম হিসেবে আর্ভিভূত হয়। ঢাকায় হেড অফিসে নিউইয়র্কের এ পদটি বাগাতে অসম যুদ্ধ চলে বড় কর্মকর্তাদের মধ্যে। ডিজিএম বা জিএম পদেও অফিসাররা নিউইয়র্কে পোষ্টিং পেতে এহেন তদবির নেই তারা করেন না। আর পোষ্টিং পেতে শুধু তদবিরই নয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের আর্শীবাদ ও আত্মীয়তার শেঁকড়ও থাকতে হয়। অতীতে যতজন সিইও সোনালী এক্সচেঞ্জে যোগ দিয়েছেন তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীনকার্ডধারী কিংবা সিটিজেন। বাংলাদেশ থেকে আগত এসব অফিসাররা এল-১ ভিসা নিয়ে এখানে আসেন। নির্দিষ্ট সময় কাজ করার পর তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য গ্রীনকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। অবশ্য এ দেশের নিয়ম মেনেই সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও’রা তা করেছেন। গ্রীনকার্ড পাওয়া বা সিটিজেন হওয়ার আইনগতভাবে সুযোগ থাকায় এই পদে যোগ দিতে ঢাকায় চলে এলাহীকান্ড। সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম বা জিএম মর্যাদার কর্তাদের চোখ থাকে নিউইয়র্কের ওপর। কোন না কোনভাবে পোষ্টিং পেলেই স্ত্রী সন্তানসহ আমেরিকায় নাগরিকত্ব পাবার সুযোগ অবারিত হয়। তাই এ পদে পোষ্টিং পেতে সোনালী ব্যাংকে চলে এক অস্থির প্রতিযোগিতা। বিষয়টি তা ঢাকার ব্যাংক পাড়ায় ওপেনসিক্রেটে।
সোনালী এক্সচেঞ্জ বর্তমানে দেশে ডলার পাঠাতে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোন কমিশন নেয় না। অতীতে যে কমিশন নেয়া হতো তা দিয়ে স্টাফদের বেতনভাতা ও অফিস খরচের যোগান হতো। কিন্তু কমিশন না নেবার সরকারি সিদ্ধান্তে ভর্তুকির খাতায় নাম লিখিয়েছে সোনালী এক্সচেঞ্জ। বাংলাদেশ সরকার কি লাখ লাখ ডলার লোকসান দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালাবে? নাকি বিমানের মতো বন্ধ হয়ে যাবে প্রতিষ্ঠানটি? এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ব্যপারে সোনালী এক্সচেঞ্জের এক কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, বিমানের মতো কিছু হবে না বলে আমার বিশ্বাস। রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। প্রাসীদের প্রেরিত অর্থ ছাড়া ফরেন্স কারেন্সী রিজার্ভ কল্পনা করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সরকার বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ অব্যাগত রাখতে মানিট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি কমিশন দেবেন। যা থেকে তারা এ ব্যবসাটি চালিয়ে যেতে পারে। সোনালী এক্সচেঞ্জও এ সুবিধা পাবে। তাতে আমরা খরচের বেলায় ব্রেক ইভেনে আসতে পারবো। সরকারকে হয়তো ভর্তকি গুণতে হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মাথাভাড়ি প্রশাসন ও লসের অজুহাতে নিউইয়র্কে আসা বন্ধ হয়ে যায়। নামছে না বাংলাদেশের লালসবুজে খচিত বাংলাদেশ বিমান। গত ২ যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রবাসীদের বারবার আর্জি ও সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও আর চালু করা যাচ্ছে না। সোনালী এক্সচেঞ্জ বন্ধ হবে না এটাই সবার প্রত্যাশা।
Posted ২:১৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ মার্চ ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam