শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জটিলতা অবসানে অগ্রগতির কথা বললেন প্রেসিডেন্ট

‘জালালাবাদ এসোসিয়েশনের জটিলতা কমিউনিটির জন্য ভুল বার্তা’

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   223 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

‘জালালাবাদ এসোসিয়েশনের জটিলতা কমিউনিটির জন্য ভুল বার্তা’

 

  •  ভাঙ্গনের পূর্বাভাস!
  •  মামলার পথে ফয়সালা!
  •  এজিএমের তাগিদ অনেকেরই
  •  সিদ্ধান্ত দেখেই  নির্ধারন মইনুলের

জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা কমিউনিটিতে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলাম নিজের নামে ‘জালালাবাদ ইউএসএ ইনক’ নামে একটি করপোরেশন করে এস্টারিয়ার ৩১ স্ট্রিটের ওপর একটি বাড়ি কিনেছেন। নাম দিয়েছেন ‘জালালাবাদ ভবন’। এ বাড়ি ক্রয়কালে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র তহবিল থেকে ৩ লাখের বেশি ডলার তুলে লোনের ডাউন পেমেন্ট দিয়েছেন। অথচ এর সাথে সংগঠনের কোন সম্পর্ক নেই। সংগঠনের অর্থ ব্যাংক থেকে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতিও নেয়া হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, ‘কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া সংগঠনের ৩ লাখ ডলার উত্তোলন কতটুকু সাংগাঠনিক ও নৈতিক? ’। আর নতুন করে করপোরেশন করতে হলেতো সংগঠনের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের নাম থাকতে পারতো। শুধু সাধারন সম্পাদকের নামে ঋন ও করপোরেশন কেন? কমিউনিটিতে রয়েছে শত শত জেলা, উপজেলা ও সামাজিক সংগঠন। জালালাবাদের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের এমন একটি ঘটনা অন্য সংগঠনগুলোর জন্য কি বার্তা দিচ্ছে? ক্ষোভ ও হতাশায় ফুঁসে উঠছেন প্রবাসী সিলেটবাসীরা। তারা দ্রুত এ জটিলতার অবসান চান। মইনুল ইসলাম বলছেন, জালালাবাদের মূল সংগঠন বাড়ির অবশিষ্ঠ ঋন ও রিনোভেশনের অর্থ প্রদান করলে তিনি মালিকানা জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র নামে ট্রান্সফার করে দিবেন।

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান সংগঠনের সাম্প্রতিক বির্তক নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যেভাবে পত্রিকা ও সোশাল মিডিয়ায় খবর আসছে তা আমাদের জন্য বিব্রতকর। অনতিবিলম্বে উভয় পক্ষের উচিত একসাথে বসে ফয়সালা করা। ‘কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া সংগঠনের ৩ লাখ ডলার উত্তোলন। নিজের নামে করপোরেশন করে সে অর্থে বাড়ি কেনা সাংগঠনিক ও নৈতিকতার দিক থেকে কতটুকু সঠিক মনে করেন?’
এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, খুবই গর্হিত কাজ। সেটা যেকোন সংগঠনের যে কেউ করলে সর্মথন করা যায় না। নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ। সাধারন সম্পাদক মইনুল যেটা করেছে তা ঠিক হয়নি। অনিয়ম করেছে। তার সাজা পাওয়া উচিৎ। অনৈতিক যে কাজ হয়েছে তা থেকে অব্যাহতি পাবার কথা আমি বলবো না। তাহলেতো মরাল পয়েন্ট থাকে না। মইনুল বলছে সে এখন বাড়িটি জালালাবাদ এসাসিয়েশনকে দিতে চায়। তার এ কথায় আন্তরিকতা থাকলেও থাকতে পারে। তবে তার প্রক্রিয়াটি সাংগঠনিক হয়নি। একটা ব্যাড উদাহরন হয়ে থাকলো। তারপরও বলবো, মইনুল আমাদেরই ছেলে। তাকে নিয়ে বসে সংগঠনের অর্থ কিভাবে ফেরৎ পাওয়া যায় বা বাড়িটি কিভাবে সংগঠনের নামে ট্রান্সফার করা যায় আলোচনা করা হোক। সমাধান নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে।
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আরেক সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সংকট প্রশ্নে বলেন, আমি হতাশ। আপসেট। চেষ্টা করেছিলাম। হলো না। এক দিকে মইনুল। অন্যদিকে পুরো কমিটি নিয়ে বদরুল খান। ট্রাস্টি বোর্ডের কুনুও আর ট্রাস্টিতে নেই। এখন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? কেউ এগিয়ে আসছে না। বদরুলরা মইনুলকে শাস্তি দেবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এটা জালালাবাদের জন্য সুখবর নয়। আদালত আদালত করছে ২ পক্ষ। নট গুড। দোয়া করি, আদালত পর্যন্ত যেন না গড়ায়। ওরা মইনুলকে শেষ করতে চায়। আর মইনুল বলে দেখি না কি করতে পারে। জালালাবাদবাসীর জন্য বদনামের বিষয় হয়ে গেছে এখন। এখনও শেষ করার যায়গা আছে।
‘কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া সংগঠনের ৩ লাখ ডলার উত্তোলন। নিজের নামে করপোরেশন করে সে অর্থে বাড়ি কেনা সাংগঠনিক ও নৈতিকতার দিক থেকে কতটুকু সঠিক মনে করেন?’ জবাবে শওকত আলী বলেন, বাড়িটি কিনার প্রক্রিয়া হয়েছে গত কমিটির সময়ে। এতে সভাপতি মইনুল হক হেলাল, সেক্রেটারি শেফাজ ও কোষাধ্যক্ষ মইনুল যোগসাজগে কাজটি করেছে। তারা দায়ি বা দায়ি না তার জবাব ওরা ৩ জন দেবে। কমিটির অনুমোদনের কথা আমি কিভাবে বলবো। তবে বদরুল খানরা বিদায়ী কমিটির কাছ থেকে দায়িত্ব নেবার সময় কেন আপত্তি তোলেন নি।
তিনি বলেন, মইনুলের কথা অনুসারে তাকে অনেস্ট মনে হচ্ছে। সেতো বাড়িটি সংগঠনের নামে লিখে দিতে চাচ্ছে। বর্তমান কমিটিতো এগিয়ে আসছে না। ইগো নিয়ে বসে থাকলে জালালাবাদের লাভ হবে না। সাধারন সভা ডেকে বিষয়টি আলোচনা করা উচিত বলে মনে করি।

সাধারন সম্পাদক কর্তৃক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সংক্রান্ত গত ৭ জানুয়ারি ইস্যুকৃত সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের চিঠি।

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সাধারন সম্পাদক এম এম শাহিন। তিনি নিউইয়র্ক কাগজকে বলেন, নির্বাচনের পর থেকে প্রেসিডেন্ট বদরুল খান ও সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলামের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ভবন ক্রয় নিয়ে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সাবেক ট্রাস্টি বোর্ড কয়েক দফা কার্যকরি কমিটির সাথে যৌথসভা করে। প্রেসিডেন্ট বদরুল খান ও সেক্রেটারি মইনুলকে সমঝোতায় আনা হয়। তারা বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করেন। তবে এটা ধ্রুব সত্য, কার্যকরি কমিটি ও ট্রোস্টি বোর্ডের কাছে মইনুলের দেয়া প্রতিশ্রতি ভঙ্গই জালালাবাদের আজকের সংকটের মূল কারন। তখন যদি মইনুল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন তাহলে পরিস্থিতি এতও দূর যেতো না।
এম এম শাহিন বলেন, মইনুল আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন। সবসময় আমি তার মঙ্গল প্রত্যাশী। সমাজে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হোক এটাই প্রত্যাশা। জালালাবাদ সোসাইটির সংকট অবশ্যই নিস্পত্তি করতে হবে। সমঝোতায় আসতে হবে। জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করতে হবে। এটা বৃহত্তর সিলেটবাসীর ঐতিহ্যের প্রশ্ন। ব্যক্তি সংগঠনের উর্ধ্বে নয়। অবশই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মাওলানা সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী জালালাবাদ এসোসিয়েশনের তিন তিনবার নির্বাচিত সহসভাপতি। সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। সাধারন সম্পাদক মইনুলের ‘ভবন ক্রয়ের একনিষ্ঠ সর্মথক’। তিনি গত শনিবার নিউইয়র্ক কাগজকে বলেন, সিলেটের ৯৯.৯ ভাগ মানুষ সংগঠনের ভবন ক্রয়ের পক্ষে। ৩৮ বছর যা হয়নি, মইনুল তা করেছেন। এস্টোরিয়ার মতো যাযগায় বাড়ি কিনেছেন। তার ইচ্ছে, বাড়িটি জালালাবাদকে হস্তান্তর করবেন। । ‘কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া সংগঠনের ৩ লাখ ডলার উত্তোলন। নিজের নামে করপোরেশন করে সে অর্থে বাড়ি কেনা সাংগঠনিক ও নৈতিকতার দিক থেকে কতটুকু সঠিক মনে করেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে মাওলানা সাইফুল বলেন, সাংগঠনিক নয়। নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। নেক উদ্দেশ্য আছে কিনা? সে ইচ্ছে করলেই যা খুশি করতে পারেন না। মনে রাখতে হবে তিনি নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি। তিনি তার পরিষদ নিয়ে চলবেন। এটাই স্বাভাবিক। আপনি (প্রতিবেদক) যা বললেন তা আমি আগে জানতাম না। শুধু জানতাম, মইনুল জালালাবাদবাসীর জন্য ভবন কিনেছেন। যা তার নির্বাচিত প্রতিশ্রুতি ছিল। বিষয়টিতো ভাববার বিষয়। আমরা ভেতরের খবর জানি না।
জ্বনাব সাইফুল বলেন, আজকের জটিলতায় জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারন সভা ডাকা হোক। মইনুল কোন ভুল করে থাকলে তাকে আত্মপক্ষ সর্মথন করে বলবার সুযোগ দেয়া হোক। আমরা জালালাবাদবাসী সংগঠনের অর্থ খোয়া যেতে দিব না। সুন্দর বাড়িটিও হাতছাড়া করতে চাই না। কিভাবে সমঝোতা হয় তা খুঁজে বের করতে হবে। মইনুল নিশ্চয়ই ঈমানের সাথে কাজ করবেন। তিনি সিলেটকে অনেক ভালোবাসেন।
রোববার ১২ ফেব্রুয়ারি জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডেও য়ৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রশ্নে সভাপতি বদরুল খান রাতে নিউইয়র্ক কাগজকে বলেন, সিদ্ধান্ত একটি হয়েছে। কিন্তু এখনই প্রেসকে জানানো যাবে না। তবে এটুকু বলতে পারি জটিলতার অবসানে অগ্রগতি কিছুটা আছে।

 

Facebook Comments Box

Posted ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com