
ডেস্ক রিপোর্ট | শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫ | প্রিন্ট | 173 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
নানা পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি নিজের নামেই বিরিয়ানির ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। একাধিক জায়গায় ফ্রাঞ্চাইজ খুলে ব্যবসার পরিসরও বড় করেছেন। তবে মাঝে পথ হারিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হয়েছে। মূল পেশা ও ব্যবসার দিকে নজর না দিয়ে নাম কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। লাখ লাখ ডলার অপচয় করেছেন খেতাব ও অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিতে। তার রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ও ধ্বস নামে। অর্থনৈতিকভাবে ভেংগে পড়েন। বাধ্য হন তারই প্রতিষ্ঠিত খলিল বিরিয়ানী চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট।
এখন আবার মনোযোগী হয়ে ফিরেছেন পুরনো পেশা শেফ হিসাবে। বলা হচ্ছে খলিল বিরিয়ানির স্বত্তাধিকারী শেফ খলিলুর রহমানের কথা। তবে বিলম্বিত বোধদোয় হলেও তা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। অংক শাস্ত্রে স্নাতোকত্তর করলেও খলিলুর খ্যাতি পেয়েছেন রন্ধন শিল্পী বা শেফ হিসাবে। ব্রঙ্কসে রেস্টুরেন্ট খুলে তা নিয়েই ব্যবসার শুরু। এর পর শাখা খুলেছেন জ্যামাইকা ও জ্যাকসন হাইটসেও। এরই মধ্যে কমিউনিটির অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিচের নামে প্রচারণায় নামেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্পন্সর করতে শুরু করেন। দেদারসে খরচ করতে থাকেন অর্থকড়ি। কমিউনিটিতে অনেকের মুখে মুখে তখন খলিল বিরিয়ানির খলিলুর রহমানের নামও শোনা যায়। তবে কমিউনিটি ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে গিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হয়তো সেভাবে নজর দিতে পারেন নি। খাবারসহ নানা বিষয়ে অভিযোগও উঠতে শুরু করে। এতে ব্যবসায় দেখা যা ভাটার টান, তাতে আয় রোজগারেও ভাটা পড়ে। এরই মধ্যে নিজের একটি রেস্টুরেন্টের শাখা বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি নিজের থাকার বাড়িটিও হাতছাড়া হবার উপক্রম বলে কমিউনিটিতে ফিসফাস রয়েছে।
এমন কঠিন বাস্তবতায় খরচে লাগাম টেনেছেন খলিলুর রহমান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্পন্সর করতে দেখা যাচ্ছে না। কমিউনিটির পিকনিকের মৌসুম শুরু হলেও তার উপস্থিতিও নেই। এমনকি রেস্টুরেন্টেও মানুষজনের আনাগোনা কমে গেছে। এমনকি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিউনিটির সংবাদ পত্রগুলোতেও বিজ্ঞাপন দেয়াও বন্ধ রেখেছেন।
এদিকে ব্যবসার দিকেও নজর দিতে শুরু করেছেন শেফ খলিল। রেস্টুরেন্টের উন্নতিও গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য নিয়তিম কিচেনে সময় দিচ্ছেন। রান্নার সেসব কিছু রিল ও ভিডিও আকারে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করছেন। কাছের মানুষজনও তা মেয়ার করছে। নতুন নতুন রেসিপি ও খাবারের কথাও ঘোষণা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় নিজের রেস্টুরেন্টের ইন্টিরিরিয়র বা ডিজাইনেও পরিবর্তন আনছেন। গ্রাহকদের আরো আরামদায়ক পরিবেশ দিতে উন্নত করছেন রেস্টুরেন্টের পরিবেশও।
ভোজন পর্ব আরো আরামদায়ক ও আকর্ষণীয় করে তুলতে ফাইন ডাইন চালু করতে যাচ্ছে ব্রঙ্কসের খলিল ফুড কোর্ট। সরেজমিন ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের ইউনিয়ন পোর্টের খলিল ফুড কোর্টে দেখা যায় রেস্টুরেন্টের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে ফাইন ডাইনিয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে বসানো হচ্ছে আরামদাক সরঞ্জাম। যাতে আরো প্রাইভেসি ও কমপোর্ট পান গ্রহকরা।
শেফ খলিলুর রহমান বলেন, এই সামার—কে সামনে নিয়ে ফুড কোর্টকে সাজানো হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গীকে। নান্দনিক পার্টিসান দিয়ে ফুডকোর্টের ভেতরেই আলাদাভাবে তৈরি করা হচ্ছে ফাইন ডাইনিং। গতানুগতিক চেয়ার—টেবিলের জায়গায় স্থান পাবে আরামদায়ক সোফা। প্রতিটি ফ্যামিলি প্রাইভেটলি বসে আমাদের মজাদার খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।
খলিলুর রহমান বলেন, আমার নিজস্ব রেসিপিতে তৈরি বাইডেন বিরিয়ানী ইতিমধ্যে দেশী—বিদেশী ক্রতাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। এর সাথে এবার যুক্ত হবে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী। ঐতিহ্যবাহী হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানীর সাথে আমার নিজস্ব রেসিপি যুক্ত হয়ে ভোজনবিলাসীদের কাছে টানবে বলে আমার বিশ্বাস। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্য ইনটেরিয়র ডেকোরেশন শেষ হলে ‘খলিল ফাইন ডাইনিং’ গ্রাহকদের সেবা দিতে সক্ষম হবে। জায়গার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক মানের খাবারও পরিবেশনা করা হবে।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, আমরা কোয়ালিটি খাবারে বিশ্বাস করি। এই পিকনিকের মৌসুমে যারা আমাদের খাবার দিয়ে পিকনিকের আনন্দকে আরো জমজমাট করতে চান তারা আগেভাগে অর্ডার দিলে সুস্বাদু খাবার যথাসময়ে পৌছে দেবার জন্য নিশ্চিত করবো। গ্রাহকরা তাদের সুবিধার্থে জ্যাকসন হাইটস শাখায়ও খাবারের অর্ডার দিতে পারবেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে এই শাখাটিও আমার একক মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে।
এক ছাদের নীচে হরেক রকম খাবার নিয়ে খলিল ফুড কোর্ট এখন জমজমাট। এখানে বাংলাদেশী নিয়মিত ঐতিহ্যবাহী খাবারের বাইরেও আছে নানা রকম হালাল ফাস্ট ফুড। পাওয়া যায় ফুচকা, চটপটি, শর্মা, টার্কিশ গ্রীল, বাবলটি, আইসক্রিম, নানা ধরনের পেস্টি্র, বার্গার, কেক, ওয়াফেল ইত্যাদি।
ব্রঙ্কসের নিজের গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘খলিল বিরিয়ানী হাউস’—এর বিরিয়ানী দিয়েই খ্যাতি পেয়েছেন শেফ খলিলুর রহমান। রন্ধনবিদ্যায়ও ডিপ্লোমা নিয়েছেন বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্কের ‘কুলিনারী ইন্সটিটিউট’ থেকে। কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রেরর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। ভূষিত হয়েছেন বৃটিশ কারী এ্যাওয়ার্ড ও ভারতের গুজরাটের কিংশেফ এ্যাওয়ার্ডে। কোলকাতার অভিজাত প্রতিষ্ঠান ‘রয়েল বেঙ্গল মাস্টার শেফ’ এর কাছ থেকে পেয়েছেন— ‘গোল্ডেন হ্যাট’ পুরস্কার। ইন্ডিয়ান কুলিনারী ফেডারেশন থেকে অর্জন করেছেন ‘মাস্টার শেফ’ সার্টিফিকেট। দেশে—বিদেশে রান্না বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় বিচারক ও মেন্টর হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বেশ কিছু দিন ধরে নতুন কোন এওয়ার্ড প্রাপ্তির খবর শোনা যাচ্ছে না।
Posted ৯:৫০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
nykagoj.com | Monwarul Islam