শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিক্রিয়া

কন্ঠশিল্পী প্রতিক হাসানের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   97 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

কন্ঠশিল্পী প্রতিক হাসানের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা

কন্ঠশিল্পী প্রতিক হাসানকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সরওয়ার চৌধুরী। তিনি ব্রংকস বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। সংগঠক ও কমিউনিটি একটিভিস্ট। গত ২৯ জুন ব্রংকসে বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন আয়োজিত স্ট্রিট ফেয়ারে শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রতিক হাসান। এ মেলায় উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস সহ কমিউনিটির হাজারো মানুষ। জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীর আচরনে মেলায় আগত হাজারো শ্রোতা ও দর্শক মর্মাহত হয়েছেন। তার আচরণে ক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সৌজন্যমূলক ব্যবহারের ঘাটতি ছিল চোখেমুখে। এই ক্ষোভকে ধারণ করে সরওয়ার চৌধুরী সোশাল মিডিয়ায় আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
পাঠকদের জানার প্রয়োজনে প্রতিক হাসানকে নিয়ে চৌধুরীর বর্ণনায় তুলে ধরা হলো।

সরওয়ার চৌধুরী:  যারা মুল ঘটনা জানতে চেয়েছিলেন, তারা কষ্ট করে পড়লে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন। আমার কিংবা আমাদের কারও প্রতি, কোন শিল্পী বা গোষ্ঠীর প্রতি কোন ব্যক্তিগত সমস্যা নেই, আমি পূর্বে কখনও প্রতীককে দেখিনি, তার সাথে কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতার তো প্রশ্নই উঠেনা। আমার ব্যক্তিগত বিষয় হলে হয়তো আমি সবার নজরেই বিষয়টি আনতাম না, কিন্তু প্রশ্নটা হল দেশপ্রেম এবং ভিনদেশে আত্মসম্মান নিয়ে বেড়ে উঠা কমিউনিটির প্রতি একজন প্রতিষ্ঠিত, পরিচিত স্বদেশীর চরম অবজ্ঞা, অবহেলা প্রদর্শন, যেটা প্রবাসী হিসেবে আমাদের কাছে খুবই দুঃখজনক, মানহানীকর, অপমানজনক।।

গত রবিবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন , যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় এবং মানবিক মুল্যবোধের প্রচার ও প্রসারকারী সংগঠন বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন এর দশম বাংলা মেলা। বরাবরের মত এবারও বাংলা মেলায় আগমন ঘটে কয়েক হাজার মানুষের। সারাদিনব্যাপী এই আয়োজনে ঘটে গিয়েছিল পারমিট নিয়ে কিঞ্চিত ভুল বুঝাবুঝি। মেলায় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা প্রথমে এসে জানান আমাদের মেলার পারমিট সাতটা পর্যন্ত, যদিও আমাদের পারমিট ছিল রাত নয়টা পর্যন্ত, কিন্তু খানিক ওভার রাইটিংয়ের কারণে এই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। একটা বিষয় আমাদের জেনে রাখা উচিত পারমিটের শেষ সময়ের অন্তত পনেরো বিশ মিনিট আগেই অনুষ্ঠান শেষ করতে হয় এবং বাকি সময়টা মুলত কর্তব্যরত অফিসারদের নিশ্চিত করতে হয় যে, অনুষ্ঠান পরবর্তী সবকিছু ঠিক আছে, অনুষ্ঠানস্থলে আগত সবাই নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে যেতে পেরেছে, অনুষ্ঠানস্থলটির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হয়েছে ইত্যাদি।

সেই সুত্রধরে কর্তব্যরত অফিসাররা আমাদের অনুষ্ঠান সাড়ে আটটার ভেতরে শেষ করে দেয়ার নির্দেশনা দেন, সিটি মেয়র আসেন আটটা দশে, উনি চলে যাওয়ার পর আর মাত্র আট দশ মিনিট ছিল, তখন আমরা আর কাউকে না ডেকে সরাসরি আমাদের মুল শিল্পী বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতীককে মঞ্চে আহবান করি, সে দুটো গান করার পরই সময় শেষ অর্থাৎ সাড়ে আটটা হয়ে যায় – অথচ অনুষ্ঠানে আগত বিশাল জনসমুদ্র অপেক্ষায় ছিল তার কাছ থেকে আরও কিছু গান শুনার তবে ঐ পুলিশ অফিসাররা আর সময় দিতে নারাজ তাই গায়ককে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে হয়।

এই সময়ে ঘটে মুল নাটকীয়তা। আমাদের মেলায় এসেছিলেন, নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব, উনারাও প্রচুর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিলোনা। মেলায় এসেছিলেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে লুটোন্যান্ট ( লেফটেনেন্ট ) হিসেবে কর্মরত আমাদের কমিউনিটির খুবই প্রিয় ও পরিচিত মুখ বিলাল উদ্দিন এবং অবসরপ্রাপ্ত ডিটেক্টিভ বর্তমানে বিশিষ্ট রিয়েলটর মাসুদ রহমান, উনারা দুজনই কর্তব্যরত অফিসারদের অনুষ্ঠানকে আরও কিছুটা সময় দেয়ার জন্যে বারবার অনুরোধ করছিলেন, তবে কর্তব্যরত অফিসাররা সেই অনুরোধও রাখতে চাচ্ছিলেননা, এমনকি উনাদের আসলে ঐ অনুরোধ রাখার এখতিয়ারও ছিলনা – যাইহোক তারপরও বিলাল ভাই ও মাসুদ ভাইয়ের বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং উনারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে যখন অফিসারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চান তখন কর্তবরত মহিলা অফিসার কল করে মোবাইল দিয়ে দেন বিলাল ভাইয়ের কাছে, আমার সামনেই লুটোন্যান্ট বিলাল উদ্দিন নিজের পরিচয় দিয়ে দায়িত্ব নেন, উনার নিজ দায়িত্বে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত কোন ধরনের সমস্যা হবেনা, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবেনা সেই নিশ্চয়তা দেন – এই নিশ্চয়তা অন্যকেউ দিলে কিন্তু কাজ হতনা –
বিলাল ভাই অফ ডিউটিতে থাকার পরও ডিপার্টমেন্ট উনার উপরে আস্থা রেখে আমাদেরকে অনুষ্ঠান রাত দশটা পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়, মেলায় দায়িত্বরত পুলিশ অফিসাররা তখন বিনা বাক্যব্যয়ে চলে যান। বিলাল ভাই এবং মাসুদ ভাই এটা এই জন্যেই করেছিলেন, উনাদের কাছে সবকিছুর উপরে তখন কমিউনিটি, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।
বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশী কমিউনাটির ভাবমুর্তি যেকোন মূল্য রক্ষাই তখন তাদের কাছে ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য। বিলাল ভাই অফ ডিউটিতে এবং মাসুদ ভাই রিটায়ার্ড, উনারা তো চাইলে খুব সহজেই এই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারতেন কিন্তু উনারা সেটা করেননি বরং নিজের কমিউনিটি, নিজের জন্মভূমি সর্বাগ্রে উপস্থিত হাজার হাজার স্বদেশীর একান্ত চাওয়াকে মুল্য দিয়ে নিজেদের অসাধারণ মানবিকতা ও দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দায়িত্ববোধের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

 

এই যে আস্থা নিউ ইয়র্ক সিটি এবং পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আমাদের মানুষের উপর রেখেছিল সেই আস্থার কথা সবাইকে আনন্দের সাথে জানানোর জন্যে আমি সাথে সাথেই প্রতীক সহ অন্যান্য শিল্পীদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করি যে, আমাদের এখানে উপস্থিত দশ হাজার মানুষের সামনে আমরা আমাদের এই দুই সত্যিকারের হিরোকে এপ্রিশিয়েট করতে চাই এবং প্রতীক সহ সবাই মিলে আমরা আমাদের দুই হিরোকে মঞ্চে এনে দশ হাজার মানুষ একত্রিতভাবে এটা করতে চাই, আমরা আমাদের এই দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ঘটনাকে স্মরণীয় করতে চাই – আমার এই অনুরোধ অন্য সব শিল্পীরা রাখলেও একমাত্র প্রতীক সেটা প্রত্যাখ্যান করে বলে যে ” সে একবার স্টেজ থেকে নেমে গেলে সেখানে আর উঠেনা। ”
আমি জানিনা এটা শিল্পীদের কোন সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে এবং সেটা যদি থাকেও তারপরও যেখানে দেশের সম্মানের প্রশ্ন, কমিউনিটির বিজয় আনন্দের প্রশ্ন, বিদেশে উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক ও আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশী অফিসারদের উপর অকৃত্রিম, অকুন্ঠ আস্থা প্রদর্শনের নজির – সেখানে কি ঐ ঠুনকো দাম্ভিকতা শোভনীয় ? বাঞ্ছনীয় ? গ্রহণযোগ্য ?
আমাদের অফিসারদের এই অসামান্য অর্জনের কথা বুঝিয়ে বলার পরও লক্ষ্য করলাম প্রতীকের কাছে এগুলো যেন খুবই সাধারন একটা ব্যপার, আমার কাছে তখন মনে হল তার সামনে প্রবাসী দুজন ব্যক্তির সত্যিকারের নায়ক বনে যাওয়া বিষয়টি যেন সে ভালভাবে নেয়নি, একধরণের অবজ্ঞা এবং হিংসা বোধহয় সেখানে কাজ করেছে ?

এরা দেশ থেকে প্রতিবছর এখানে আসে, অনেকেই থেকে যায়, প্রবাসীদের দেশপ্রেমের বিনিময়ে কাড়িকাড়ি ডলার কামায়, প্রবাসীদের সহযোগিতায় এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে, সকল সমস্যার সমাধান করে অথচ প্রবাসীদের প্রতি চরম হিংসাত্বক অবজ্ঞা বুকে পুষে রাখে সবসময়।
এরা আমাদেরকে ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনে, তাদের স্বার্থে এবং যখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ আসে তখনই আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রতি তাদের চরম হিংসাত্বক অবজ্ঞা, অসম্মান।।

Facebook Comments Box

Posted ১১:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com