রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ডে প্যারেড প্রবাসীদের মিলনমেলা পরিণত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   119 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

বাংলাদেশ ডে প্যারেড প্রবাসীদের মিলনমেলা পরিণত

চৈত্রের শেষ দিন ১৩ এপ্রিল নতুন সাজে সেজেছিল নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকা। এদিন এক এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেছে জ্যাকসন হাইটস বাসী। নানা রঙের পোশাকে সজ্জিত শিশু—কিশোর, তরুণ—তরুণী ও প্রবীণদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। ঢোল, তাল আর বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মনোমুগ্ধকর ধ্বনিতে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। এ আয়োজন ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলা ‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড’ উপলক্ষ্যে। সকাল থেকে দূপূর পর্যন্ত পুরো জ্যাকসন হাইটস হয়ে উঠে একখন্ড বাংলাদেশ।

প্যারেড উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় শুধু বাংলাদেশি কমিউনিটির আনন্দ আর উল্লাসের বহিঃপ্রকাশই ছিল না, ছিল এদেশের মূল ধারার মানুষের কাছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার এক উজ্জ্বল প্রয়াস।
এবারের প্যারেডে গ্র্যান্ড মার্শাল ছিলেন সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক শাহ নেওয়াজ। প্যারেডের চেয়ারম্যান হিসবে ছিলেন আতাউর রহমান সেলিম, চিফ এডভাইজার গিয়াস আহমেদ, কনভেনর মোহাম্মদ আলী, মেম্বার সেক্রেটারি ফাহাদ সোলায়মান, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি এফইএমডি রকি, চিফ ম্যানেজমেন্ট ডিরেক্টর জে মোল্লা সানি, চিফ কো—অর্ডিনেটর আহসান হাবিব, চিফ ইভেন্ট কো—অর্ডিনেটর ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। প্যারেডের কো—চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান কামরুল, কাজী শাখাওয়াত আজম, রিয়েলটর নুরুল আজিম, হারুন ভূঁইয়া, ফিরোজ আহমেদ, শাহ শহীদুল হক, তরিকুল ইসলাম বাদল, কো—কনভেনর শাকিল মিয়া, শাহ জে. চৌধুরী, তারেক হাসান খান, নুরুল আমিন ও আখতার হোসেন।

দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত বাংলাদেশ ডে প্যারেডে প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকানদের পাশাপাশি অংশ নেন নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসসহ শহরের নির্বাচিত কর্মকর্তারাসহ বেশ কয়েকজন সিনেটর ও কাউন্সেলর। অ্যাডামস ছিলেন প্যারেডের প্রধান অতিথির পাশাপাশি স্পেশাল মার্শাল। পুরো সময় তিনি প্যারেডের অগ্রভাগে ছিলেন।
মেয়রের পাশাপাশি সিটি কাউন্সিলের সদস্যসহ অন্যান্য নির্বাচিত কর্মকর্তারাও প্যারেডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতি তাদের উষ্ণ সমর্থন জানান। তারা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশি আমেরিকানদের কর্মঠ জীবন এবং নিউ ইয়র্কের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেয়র এরিক অ্যাডামস, গ্র্যান্ড মার্শাল শাহ নেওয়াজ, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, চিফ এডভাইজার গিয়াস আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, রানো নেওয়াজ, ফাহাদ সোলায়মান, মেয়র অফিসের প্রধান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কর্মকর্তা মীর বাশার, আজিমুর রহমান বুরহান, সিনেটর জন লু, স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি, জেসিকা গঞ্জালেস, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ড, মুশরাত শাহীন অনুভা প্রমুখ।

 

প্যারেডে অংশ নিয়ে মেয়র অ্যাডামস বাংলাদেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরেন। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো বাংলাদেশি কমিউনিটি। এই প্যারেড তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার এক চমৎকার সুযোগ। নিউ ইয়র্ক সিটি বাংলাদেশি আমেরিকানদের পাশে সর্বদা থাকবে এবং তাদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
প্যারেডে উপলক্ষ্যে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ এভিনিউয়ের ৬৯ স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে ৮৭ স্ট্রিট পর্যন্ত প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ পথজুড়ে এই প্যারেড বিস্তৃত ছিল। নানা রঙে, নানা ডিজাইনে, নানা সাজে সজ্জিত শিশু—কিশোর, তরুণ—তরুণী ও প্রবীণদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। ঢোল, তাল আর বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনিতে মেতে উঠে চারপাশ। প্রত্যেকের পতাকা হাতে, বুকে ও মাথায় পতাকার ব্যাজের পাশাপাশি পোশাকে ছিল সবুজের ছেঁায়া। ৬০টিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের পাশা পাশি সাধারণ মানুষজন প্যারেডে যোগ দেয়। প্যরোডের পুরো আয়োজনে সামনে ছিল বাংলাদেশ সোসাইটি। সহ আয়োজক ছিল হিউম্যানিটি এম্পাওয়ারমেন্ট রাইটস।

বাংলাদেশি আমেরিকানদের দ্বিতীয় প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল এই প্যারেডের একটি বিশেষ দিক। তারা তাদের উচ্ছ্বাস এবং ভালোলাগার কথা জানান। তাদের মতে, এই ধরনের আয়োজন তাদের বাংলাদেশের সংস্কৃ তি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও জানতে ও বুঝতে উৎসাহিত করে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে একটি আত্মিক যোগসূত্র তৈরি হয়, তেমনি অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সংস্কৃতিতেও নিজেদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আয়োজকরা মনে করেন, এই প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে যে আগামীতেও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য টিকে থাকবে এবং প্রসার লাভ করবে।
বেলা ১২টায় ৬৯ স্ট্রিটের পার্কিং এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করে এই প্যারেড শেষ হয় ৮৬ স্ট্রিটে। প্যারেডের সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেন বাংলাদেশি জনপ্রিয় শিল্পীরা। এই প্যারেডে ছিল ৭টি ফ্লোট ট্রাক, ৭টি পিকআপ এবং ৭টি এক্সোটিক কার। প্যারেডে শোভা পায় একটি গাড়িতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি ও বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র। প্যারেডের অন্যতম আকর্ষণ ছিল নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) দেড় শতাধিক অফিসারের অংশগ্রহণ। তাদের সুশৃঙ্খল উপস্থিতি প্যারেডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং একটি ইতিবাচক বার্তা প্রদান করে।

ছিল নিউইয়র্ক সিটির অশ্বারোহী বাহিনীর সদস্য, পুলিশের গাড়ি, এনওয়াইপিডির ব্যান্ড দল, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাপা, নিউইয়র্ক সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ফায়ার, নিউইয়র্ক সিটির ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন, নিউইয়র্ক সিটির পোস্ট অফিসে কর্মরত সংগঠনসহ নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা। এছাড়াও, এবারের আয়োজনে প্রথমবারের মতো অংশ নেন ইউএস আর্মিতে কর্মরত তিন জন বাংলাদেশি আমেরিকান।

নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ অ্যাভিনিউ ৬৯ স্ট্রিট থেকে ৮৭ স্ট্রিট পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ৬৯ স্ট্রিটের মঞ্চে আয়োজকেরা বক্তৃতা করেন। প্যারেড শেষে মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের সব জনপ্রিয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। মঞ্চ থেকে ভেসে আসে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, বাজে তাকদুম তাকদুম বাজে, আজ এলরে এল বৈশাখ। সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেন বাংলাদেশের শিল্পী নওশীন, রিচি সোলায়মান, এহসান মিলন, নাদিয়া লিখন, জায়েদ খান, প্রতীক হাসান, নোভা, দেবাশীষ বিশ্বাসসহ প্রবাসের শিল্পী রানো নেওয়াজসহ অনেক খ্যাতনামা শিল্পী।
প্যারেডে অংশ নেয় বাংলাদেশ সোসাইটি, বাংলাদেশি আমেরিকান সোসাইটি, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, এস্টোরিয়া ফ্রেন্ড সোসাইটি, প্রবাসী নরসিংদী জেলা অ্যাসোসিয়েশন, পোস্টাল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন, প্রবাসী মতলব জেলা অ্যাসোসিয়শন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ ইনক, বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি, সেফ, এ্যাম্পাওয়ারমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অর্ধশতাধিক সংগঠন।

Facebook Comments Box

Posted ১:৪৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com