পবিত্র রমজানের  অসামান্য শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধকে   সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে  সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দিতে   অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ  ইফতার ২০২৫ । এই  আন্ত:ধর্মীয় বা ইন্টার ফেইথ  ইফতার আয়োজনের মূল উদ্যােক্তা  ছিলেন কুইন্স কাউন্টি কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ ও কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান  এবং  এলমহার্স্ট হাসপাতাল  ।

গত বৃহস্পতিবার  ২০ মার্চ ) প্রবাসীদের  অন্যতম প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯  ক্যাফেটেরিয়ায়  সন্ধ্যায় ৬টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত চলা এই ইফতার আয়োজনে বাংলাদেশিরা তো বটেই অংশ নেন নিউইয়র্কের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা স্প্যানিশ,  আফ্রিকান, ভারতীয়, রোমানীয়সহ এথনিক কম্যুনিটির   নেতৃবৃন্দ । একই সাথে  বিশেষ ইনক্লুসিভ এ ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেন  প্রায়  ১৫ জন সিটি কাউন্সিল এবং অ্যাসেম্বলি মেম্বার। উপস্থিত ছিলেন, এল জি বিডি কমিউনিটির প্রতিনিধিরা।  এ সময়,৭জন স্টেট সিনেট এবং এসেম্বলিম্যান অলবেনিতে বাজেট এবং সিডিপ্যাপ সম্পর্কিত দর কষাকষির সমাধানে ব্যস্ত থাকায় যথা সময়ে জ্যাকসন হাইটসে পৌঁছাতে পারেনি।

প্রায় ২শ বেশি নারী পুরুষের আন্ত:ধর্মীয় এ ইফতার মাহফিলে  সৌহার্দপূর্ণ দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী মূল শক্তি ছিল বাংলা সিডিপ্যাপের রোজাদার সদস্য এবং স্পেনিশ সদস্যরা।  বাংলা সিডিপ্যাপের রোজাদার কর্মী  ও স্প্যানিশ কর্মীরা  অনুষ্ঠানে আগত বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী , এথনিক কমিউনিউটির মানুষদের সাথে ভাব বিনিময় করেন ।  অনুষ্ঠানের শুরুতে রোজাদারদের জন্য দোয়া পড়ান বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্যতম পরিচিত ইমাম আব্দুস সাদেক ।

এ সময়,  ইন্টারফেইথ ইফতার আয়োজনকে সকল জাতিগোষ্ঠীর পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে স্যার ডক্টর আবু জাফর মাহমুদ বলেন,   এখানে পবিত্র রমজানের ইফতার অনুষ্ঠানে যে পারস্পরিক বন্ধন ও যোগাযোগ গড়ে উঠলো তা গোটা কমিউনিটির জন্য অনেক বড় অর্জন। তিনি বলেন ,  আজকে এই আর্ন্ত:ধর্মীয় এই ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্ম ও জাতি গোষ্ঠী আমাদের শক্তি ও একাত্মতা দেখেছে। একই সাথে তাদের সাথে যে বাংলাদেশিদের মেলবন্ধন তাও প্রকাশ্যে এসেছে। বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে ইফতার আয়োজনে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির জন্য তিনি আগতদের ধন্যবাদ জানান। বলেন, বাংলাদেশিদের বিশ্বব্যাপী যে একাত্ম মনোভাব তা বলে দেয় এ জাতি কখনো দুর্বল হওয়ার নয়।

জ্যাকসন হাইটস এলাকার কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণানকে বাংলাদেশিদের ভাই উল্লেখ করে ড. আবু জাফর আরো বলেন , শুরু থেকে তাকে আমরা সমর্থন দিয়েছি একই সাথে তিনিও সবসময় আমাদের পাশে আছেন। বলেন, নিউইয়র্কের শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশিরা যাদের যাদের সমর্থন দিয়েছে তারা এখন নেতৃত্বে । বলেন, আমরা এখন যে ধর্ম-বর্ণ ও গোষ্ঠী বিবেচনায় এখন দলবদ্ধ আছি , সামনের দিকেও সেভাবে এগিয়ে যাবে এখানকার প্রবাসীরা।  কোন শক্তি বাংলাদেশিদের দম বা পিছিয়ে নিতে পারবে না উল্লেখ করে এ সময় সবাইকে এক হয়ে চলার আহ্বান জানান আবু জাফর । বলেন, গণমাধ্যমকেও এখানে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে  । বিশেষ করে কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা সেটি জানাবার বিষয়ে।

অনুষ্ঠানে  নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ২৫ ডিস্ট্রিক্ট এর কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান বলেন, এই ইনক্লুসিভ ইফতার আসলে জ্যাকসন হাইটস ও এলমার্স্টতে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যে হারমনি, বন্ধন , পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সেটি প্রতিফলন ঘটায়। এটি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম এলাকা যেখানে এক সাথে বহু জাতিগোষ্ঠী ও সত্তা বছরের পর বছর বসবাস করছে বলেও জানান তিনি।

এ সময় নিউইয়র্ক তথা জ্যাকসন হাইটস ও এলেমহার্স্ট এলাকায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের বহুমুখী অবদানের কথা তুলে ধরেন শেখর কৃষ্ণান । বিশেষ করে তিনি এলেমহার্স্ট হসপিটালের বিরতিহীন স্বাস্থ্যসেবার প্রসঙ্গ তুলে ধরে এর সকল ডাক্তার, সেবাকর্মীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি মানবিক সেবায় অনন্য অবদান রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান হোম কেয়ার সেবার সৃজনশীল কর্মবীর আবু জাফর মাহমুদের প্রতি। তিনি বলেন, সকল জাতিগোষ্ঠী এক হয়ে যখন মনুষ্যত্ব, শৃঙ্খলা ও একে অপরের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টান্ত গড়েন, তখন যে আবহ তৈরি হয়, তা এই সিটির মর্যাদা বৃদ্ধি করে। তিনি কমিউনিটির প্রতি তার দায়িত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এমন একান্ত সহায়ক মানবগোষ্ঠী যেখানে আছেন সেখানে যে কোনো কাজ সহজ হয়ে যায়।

ইফতার এ অনুষ্ঠানে মুসলীম ধর্মাবলম্বীকে পবিত্র  রমজানের  জন্য শুভকামনা জানান নিউ ইয়র্ক স্টেট এর জনপ্রিয় অ্যাসেম্বলি ওমেন জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস  । আনুষ্ঠিকভাবে ধন্যবাদ দেন ইনক্লুসিভ ইফতার আয়োজকদের ।