রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় দূরবিনে জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর

হাসান মাহমুদ   |   শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   61 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ভারতীয় দূরবিনে জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর

বাংলাদেশের অন্তর্বতীর্কালিন ড. মোহাম্মদ ইউনূস সরকার যখন দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন, জিও পলিটিক্স এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোণঠাসা সেই সময়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরাঁস বাংলাদেশে ব্যস্ততম দিন অতিবাহিত করছেন। সারা বিশ্ব তাঁর এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছে। ‘জিও পলিটিক্সে’র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সন্ধিক্ষণে তাঁর সফরকে ভারত সরকার দূরবিনের সামনে রেখেছে বলে কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজনীতির ক্রান্তিকালে ভারতের একচ্ছত্র সমর্থনে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার যখন নির্বাসিত তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের এবারের সফর অনেক তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচারও গত ৭ মাসে ব্যাপক নৈরাজ্য তৈরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আন্তোনিও গুতেরাঁসকে নিয়ে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার বিকালে ৫টায় এমিরেটসের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (ইকে—৫৮৬) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় তাঁকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এ সময় বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতিসংঘ মহাসচিবকে সরাসরি রমনায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বতীর্কালিন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের আগেই তিনি ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনিত পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রোবিও’র সঙ্গে একান্তে বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ বৈঠক সম্পন্ন করেন। যা কোন দেশের মিডিয়ায় প্রচার করা হয়নি। তবে এস জয়শঙ্কর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত না হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ নিয়ে এই বৈঠক সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ওই বৈঠকে তাঁদের একান্তে আলাপের বিষয়টি এস জয়শঙ্কর নিজেই তাঁর ‘এক্সে’ প্রকাশ করেছিলেন। তার কিছুদিন পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন সফর করেন। এই সময় তাঁর সঙ্গে আসা ভারতীয় সাংবাদিকরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেইট’—এর ভূমিকা রয়েছে কি—না এমন প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনে এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন কূটনৈতিক কায়দায়। তিনি প্রশ্নের উত্তর ভার ঠেলে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকে। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ইস্যুটি ভারতীয় মিডিয়া ব্যাপকভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারের চেষ্টা করে। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যুক্তরাজ্য সফরের সময় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সেখানেও আলোচনা করেছেন বলে ভারতীয় মিডিয়া তথ্য প্রকাশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর নানা দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহন করছে।

শুক্রবার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান সকাল ৯টায় হোটেলে গুতেরাঁসের সঙ্গে দেখা করেন। পরে জাতিসংঘ মহাসচিব সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্বমদ ইউনূসের সাথে দেখা করেছেন। এই বৈঠকের পর গুতেরাঁস প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কক্সবাজার যান।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর এই সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট এবং এর সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সহযোগিতা গুরুত্ব পেয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তনিও গুতেরাঁস প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশগ্রহণ করেন। দুই নেতা অনুষ্ঠান চলাকালীন রোহিঙ্গা, ইমাম এবং বিভিন্ন সমপ্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি রোহিঙ্গা যুবক ও শিশুদের সঙ্গেও আলাপ করেছেন।

 

Facebook Comments Box

Posted ৫:৩০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com