
ডেস্ক রিপোর্ট | শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 114 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
‘বাংলাদেশে জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কার অত্যাবশ্যক। তা না হলে লক্ষ জনতার রক্তে অর্জিত স্বাধীন দেশ আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। চলমান রাজনীতির অক্টোপাস থেকে মুক্ত হয়ে নতুন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র সংস্কারকে অগ্রাাধিকার দিয়ে রাজনীতিতে পরিবর্তন আনাকে এর পূর্বশর্ত হিসেবে স্থির করা উচিত। শুধুমাত্র একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই জাতির আকাঙ্ক্ষার পূরণ হবে না। জাতীয় সমঝোতার জন্য গণভোটের মাধ্যমে একটি সনদ গ্রহণ করা এবং তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি গ্রহন অত্যাবশ্যকীয়।’
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খানের লেখা ‘বাংলাদেশের স্বপ্ন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’ এর প্রকাশনা উৎসবে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি, সমাজনীতি ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আলোকেই বইটি রচিত। বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্ধশতাব্দীর পথ চলায় ক্লান্তিঘন অবসন্নতায় ভুগছিলো। স্বৈরতন্ত্র রুদ্ধ করে দিয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সকল দুয়ার। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান হয়ে উঠেছিল যার অনিবার্য পরিণতি।
ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে ডা. ওয়াজেদ খানের লেখা বই ‘বাংলাদেশের স্বপ্ন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’ —এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। গ্রন্থটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আহমদ পাবলিশিং হাউস এর সত্ত্বাধিকারী মেসবাহউদ্দিন আহমেদ পাশার সভাপতিত্বে ও চ্যানেল আই এর বিশিষ্ট সাংবাদিক আদিত্য শাহীন এর সঞ্চালনায় প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন এর সহ—সভাপতি আলী রীয়াজ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর মহা—পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের কো—চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসসক্লাব সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম ।
প্রধান অতিথি আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে স্বপ্নরাজ তরুণ শিক্ষার্থী ও গণমানুষ। অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে দেশ ও জাতিকে। ছাত্র জনতার এই অভ্যুত্থান বিশ্ব ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এজন্য প্রাণ দিতে হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক মানুষকে। আহতের সংখ্যা ত্রিশ হাজার। চিরতরে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন চার শতাধিক মানুষ। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চেয়েছিলো স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার। এজন্য চালিয়েছে গণহত্যা সহ সব ধরনের নৃশংসতা। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে স্বৈরাচার, এমন কি জাতীয় সমজিদে ইমামও পালিয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের নাগরিকদের চাহিদা ভোটের আধিকার, নিরাপত্তা এবং বৈষম্যের শিকার না হলে আমাদের সপ্ন পুরণ হবে। তিনি বলেন,স্বাধীনতার তেপ্পান্ন বছর পরও বাংলাদেশ পৌঁছতে পারেনি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। পূরণ করতে পারেনি মানুষের স্বপ্ন। এসব নিয়ে ক্ষোভ, দুঃখ ও অভিযোগ উঠে স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময়ে ও পঁচাত্তরে দু’দফা সামরিক এবং নব্বইয়ে এক দফা গণঅভ্যুত্থানের মুখে পড়েছিলো বাংলাদেশ। দীর্ঘ ষোলো বছরে স্বৈরাচার দেশকে দাঁড় করিয়েছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সব অধিকার হরণ করে দেশের মানুষকে পরিণত করে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে। সমাজে বৈষম্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে। স্বৈরাচারের নির্বতনমূলক সকল উপাদান দৃশ্যমান হয় রাষ্ট্রীয় জীবনে। যে বৈষম্যের কারণে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়, সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন থেকে সময়ও সুযোগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন তারা।
বিশেষ অতিথি মনির হায়দার বলেন, গত ৫৩ বছর ধরে জাতি বার বার স্বপ্ন দেখেছে। ডাঃ ওয়াজেদ খান তার গ্রন্থে সেইসব স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন, যে স্বপ্ন আমরা বাস্তবে স্পর্শ করতে পারিনি। আজও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাল্টে গিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার ধারা। দলটি হাত দেয় পঁচাত্তরের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাকশালী আইনকে পুনঃমেরামতে। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ট্রেনকে তুলে দেয় পুরনো বাকশালী ট্র্যাকে। মাফিয়া স্টেটে পরিণত করে বাংলাদেশকে। এ সময় আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দেয় বেশিরভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা নিজেরা হয়ে যান জনবিচ্ছিন্ন।
‘বাংলাদেশের স্বপ্ন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’ এর লেখক ডাঃ ওয়াজেদ খান বলেন, আমার গ্রন্থে আজকের বাংলাদেশ ভূ—খণ্ডকে ঘিরে দীর্ঘদিনের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন ছিলো আমাদের পূর্ব পুরুষের এর উদ্দেশ্য লেখা। স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, করে তুলে সাহসী, আশাবাদী। প্রেরণা জোগায় সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার। মানুষের এ স্বপ্ন শুধুই আত্মকেন্দ্রিক নয়। তার স্বপ্নের বিস্তৃতি ঘটে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঘিরে। স্বপ্ন তখন হারাম করে দেয় ঘুম। নিজের অজান্তেই মানুষ বড় হয়ে উঠে তার স্বপ্নের পরিধির চেয়ে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে রুখে দাঁড়ায় অন্যায়, অবিচার ও নির্মমতার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলন, সংগ্রাম ও বিল্পবে। মোকাবিলা করে অনিবার্য সংঘাত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিঃশঙ্ক চিত্তে আলিঙ্গন করতে উদ্ধত হয় ভয়াল মৃত্যুকে। বুক চিতিয়ে দেয় বন্দুকের নলের মুখে। তারপরও মিছিলে এগিয়ে চলে। একজনের মৃত্যুর পর ঘাতককে অবাক করে দিয়ে নিরস্ত্র অপর যোদ্ধা দাঁড়িয়ে যায় বন্দুকের সামনে। পিছু হটতে বাধ্য করে ঘাতকের দলকে। স্বপ্ন পূরণের অভিযানে জিতে যায় মানুষ। পতন ঘটে অত্যাচারী শাসকের। রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস।
বিশেষ অতিথি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্রশাসনে এখনো অনেক জেলায় ডিসি সহ গুরুত্ব পূর্ণ পদে বসে আছেন, দীর্ঘ ষোলো বছরে স্বৈরাচার দেশকে দাঁড় করিয়েছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সব অধিকার হরণ করে দেশের মানুষকে পরিণত করে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে। সমাজে বৈষম্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে। স্বৈরাচারের নির্বতনমূলক সকল উপাদান দৃশ্যমান হয় রাষ্ট্রীয় জীবনে। যে বৈষম্যের কারণে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়, সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন থেকে সময়ও সুযোগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন তারা। চব্বিশের জুলাইর শুরুতে কোটা সংস্কার ইস্যুতে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা নেমে আসেন রাস্তায়। বাংলাদেশে নবজাগরনের সৃষ্টি করে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে এতোদিন যারা ছিলেন হতাশায় এবং অন্ধকারে, তাদেরকে বাতিঘরের সন্ধান দেন তারা। কাঁটার মুখ যেমন চুখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তেমনি শিক্ষার্থীরা বিবেকের তাড়নায় প্রস্তুত করেন নিজেদেরকে। এখন দেশকে এগিয়ে নিতে নির্বাচন ব্যাবস্থা পরিবর্তন করে সঠিক পথে আসতে হবে।
Posted ১০:২৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫
nykagoj.com | Monwarul Islam