রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

`দেশটিতো ভালো হলো না’

মনোয়ারুল ইসলাম   |   রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   138 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

`দেশটিতো ভালো হলো না’

দেশটি ভালো নেই।ভালো রেখে যায়নি। ভালো করতে পারছে না। মানুষ আশাহত। ক্ষুব্ধ। হতাশ। আস্থার যায়গাটি খুঁজে পাচ্ছে না। হতাশার বেড়াজাল সবাইকে গ্রাস করছে। অথচ একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা প্রতিটি মানুষের। এমন আকুতি আজ কোটি মানুষের মনে।

প্রবাসে থাকি। ৪ বছর পর দেশে এসেছি। নতুন করে স্বাধীণতার সুফল দেখার ইচ্ছে ছিল দুর্নিবার। ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত’ বাংলাদেশে বিচরনের মজাই আলাদা হবে।’— এমন ধারণাটি পেয়ে বসেছিল ৫ আগষ্টের পর থেকে। কিন্তু আশাহতের প্রতিচ্ছবি সর্বত্র। বাংলাদেশে অবস্থানের ৭ দিন। ঢাকা শহরে এ সময়ে শতাধিক মানুষের সাথে কথা বলেছি। রিকশাওয়ালা, বাদাম বিক্রেতা, রেষ্টুরেন্টের বয়, ড্রাইভার, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী ও আইনজীবি। একবাক্যে সবাই হতাশ। দেশ কোন পথে এগুচ্ছে কেউ বলতে পারছে না। একজন মানুষও আশাবাদীর কথা শুনাতে পারেননি। একজন মানুষও বলেননি দেশ সঠিক পথে এগুেচ্ছে। একজন মানুষও বলেননি সব ঠিক হয়ে যাবে। কি ভয়ংকর। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনে যেসব সাংবাদিক কলম ধরেছেন, টিভি’র পর্দায় বাক্যবানে ঝড় তুলেছেন। তাদের মুখেও হতাশার সুর। এসবের জন্যতো মুগ্ধরা আত্মহুতি দেননি।

কথা হলো একজন জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকের সাথে। তিনি বলেন, যে কাজটি ৫ আগষ্টের পরপরই করা উচিৎ ছিল— তা ছাত্ররা করছেন ৬ মাস পরে। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের মুলোৎপাট করা উচিৎ ছিল প্রথম ৭ দিনেই। এতোদিনে পতিতরা অনেকভাবেই সংঘবদ্ধ হয়ে উঠছে। ৫ ফেব্রয়ারি ৩২ নম্বরের বাড়ি ধুলিসাৎ সহ সারাদেশে ফ্যাসিবাদের দোসরদের স্থাপনায় হামলা নিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনের (বাকশাল সৃষ্টি বাদে) স্মৃতি বিজরিত এই ভবনটি ধ্বংস করা ঠিক হয়নি। এটি আমাদের সকল গনতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনের স্মৃতিফলক (১৯৭১ পর্যন্ত)। বিদেশে বসে হাসিনার উস্কানী ও দেশবিরোধী তৎপরতার প্রতিক্রিয়া অন্যভাবেও দেখানো যেত। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেয়া সর্মথন যোগ্য নয়। অধিকাংশ মানুষ এহন ঘটনার প্রকাশ্য না হলেও মনে মনে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। জাতীয়তাবাদী এই সাংবাদিক বলেন, ১৭ বছরের দূর্নীতি , নিমর্ম অত্যাচার, ব্যাভিচার, সন্ত্রাস, হত্যা ও গুমের প্রতিশোধে সারাদেশে হাসিনার দোসরদের গ্রেফতার, তাদের বাড়ি ঘরে আগুন দিলেও কোন অভিযোগ নেই। তা স্বৈরাচারের দোসরদের প্রাপ্য। কিন্তু আমি ৩২ নম্বর ভাংগার পক্ষে নেই।
একজন ড্রাইভার ক্ষোভের সাথে বললেন, দেশটা আর ভালো হবে না। ১ থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত রাস্তায় ছিলাম। আশা ছিল, ডাইনি হাসিনা সরে গেলে দেশটার ভালো হবে। মানুষ নির্ভয়ে চলতে পারবে। কাজ করতে পারবে। ঢাকা শহরে শৃংখলা ফিরে আসবে। কিন্তু কিছুইতো হলো না।

ঢাকা শহর ঘুরে আরেকটি চিত্র পরিষ্কার, মানুষ হাসিনাকে কোনভাবেই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না। বরং আজকে দেশের এই অবস্থার জন্য তাকেই দায়ি করছেন। একজন মানুষও পাইনি, যিনি বলেছেন, হাসিনা সঠিকভাবে দেশ চালিয়েছেন। এমনকি আওয়ামী সর্মথক অনেকে বলেছেন, গনতান্ত্রিক নিবাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস, ভোটের সংস্কৃতি গুঁড়িয়ে দেয়া, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস, পুলিশ বাহিনীকে দলীয়করন ও মানুষকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন হাসিনা। তার জন্য দল ও কর্মিরা আজ নির্যাতিত। গভীর সংকটের মুখোমুখি। দেশের বাইরে বসে উস্কানী দেওয়াকে আওযামী লীগের অধিকাংশ সর্মথকই সর্মথন করছেন না। তারা বলছেন, এই দুর্দিনে তিনি আরও আমাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।

রোববার। বাংলাদেশে ৮ ফেব্রুয়ারি। ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম মুক্তি মির্জা গ্রেফতার। মনটা খারাপ হয়ে গেল। উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণমানুষের নেতা ছিলেন আব্দুল লতিফ মির্জা। সাবেক সংসদ সদস্য। উত্তরবঙ্গে এক নামে মানুষ তাকে চিনতনে। স্কুলে নবম শ্রেনীতে পড়াবস্থায় হাত ধরে ছাত্র রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। সে সময় আকাশচুম্বি জনপ্রিয় নেতা লতিফ মির্জার সান্নিধ্য পাওয়া ছিল উঠতি বালক, বালিকা যুবক যবতীদের রাজনৈতিক ক্রেজ। তার কাছে বক্তৃতা শিখেছি। কিভাবে মানুষের সাথে মিশতে হয় তা বলতেন। হাজারো মানুষের নাম মনে রাখার জাদুকরি তার টেকনিক দেখে বিস্মিত হতাম। পকেটে টাকা থাকলে অকাতরে মানুষের মধ্যেই বিলিয়ে দিতেন। একটি ঘটনা না বললেই নয়, ১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে সংসদ ভেংগে দেয়া হয়। এমপিত্ব হারান মির্জা। ১ মাসের মধ্যেই তার সিরাগগঞ্জের বাসায় ভাত রান্নার চুলা বন্ধ হবার উপক্রম হয়। শুরু হয় সংসারের টানাপেড়েন। বাসায় বাজার করার টাকা থাকতো না। একজন এমপি’র সংসারে এমন অবস্থা দেখে তখন খুবই খারাপ লাগতো। মুক্তির বয়স তখন ১০ কি ১২। আমি ওকে গণিত ও ইরেজি পড়াতাম। সে অনেক লম্বা কাহিনী। মুক্তির বিয়ে হলো উল্লাপাড়ায় । ব্যাংকে একটি চাকুরি নিলো। গেল বছর সে চাকুরিটি ইস্তফা দিয়ে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করলো। দলীয় আওয়ামী লীগ সর্মথিত প্রার্থীকে হারিয়ে মুক্তি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান হয়ে বসার ২ মাসের মাথায় ৫ আগষ্টের ঘটনার পর উপজেলা পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। মেয়েটি ব্যাংকের চাকুরি হারালেন। চলে গেল চেয়ারম্যানশীপ। ঢাকায় শনিবার সে গ্রেফতার হয়। আমার জানামতে, মুক্তি এমন কোন কাজ করেনি যাতে সে গ্রেফতার হতে পারে। সে কি স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার?

Facebook Comments Box

Posted ৩:১০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com