রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মন্তব্য প্রতিবেদন

জনগন ইউনূসে নাখোশ ।। হাসিনায় না

মনোয়ারুল ইসলাম   |   শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   117 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

জনগন ইউনূসে নাখোশ ।। হাসিনায় না

 

দেশের মানুষ আবারও আশাহত হচ্ছেন। ছাত্রজনতার গনঅভ্যুত্থান পর পাহাড়সম জনসর্মথন নিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল। ড. ইউনূসের দেশে ও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি, সততা ও ক্যারিশমায় বাংলার মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। ১৭টি বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ও কতৃর্ত্ববাদী ব্যবস্থার অবসানের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ। শুরুটা ভালই ছিল। ৪ মাস না গড়াতে তা ফিকে হতে থাকে। ১ দফার জিয়ের পর ক্ষমতার হাতছানিতে ছাত্র নেতৃত্ব স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ঘোষণা দেন রাজনৈতিক দল গঠনের। দ্রুতই আইনশৃংখলার অবনতি ও কারসাজিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে থাকে। উপদেষ্টাদের অতীব বাচালতা ও সমন্বয় নেতাদের বেপরোয়া তৎপরতায় মানুষের আস্থার যায়গাটিতে হেঁাচট খায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠনের উচ্চাকাংখাকে মানুষ সহজভাবে নিতে পারছে না। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের শাখাপ্রশাখাকে ব্যবহার করছে দল গঠনে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারছে না। শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামি কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেনি। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদের কারনে জনগনের প্রত্যাশা এখন প্রতিদিন হতাশায় পরিণত হচ্ছে। গত ৬ মাসে সবকিছুতেই লেজেগোবরে করে ফেলেছে। একটা সমস্যারও শান্তিপূর্ন সমাধান করতে পারছে না। বরং সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আরও জট পাকিয়ে ফেলছে। শতভাগ জনপ্রিয় সরকারের সর্মথন এখন কতটুকু তা যাচাই করলে ২৪ এর শহীদেরা কবর থেকে অভিসাপই দেবে। ঢাকার রাস্তায় কিংবা শহর গ্রামে কান পাতলেই ক্ষোভ ও হতাশার আওয়াজ পাওয়া যায়।
হাসিনা সময় পেয়েছিলেন মাত্র ৪৫ মিনিট। এরমধ্যে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও একমাত্র বোন শেখ রেহানার পরমর্শ নেবার সুযোগ পেয়েছিলেন। আশ্রয় নিতে হলো সোজা ভারতে। কিন্তু আপনাদের হাতে কিন্তু সে সময়ও থাকবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (সুশীল), বিপ্লবী ছাত্রনেতা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লেজে গোবরে অবস্থা। তাদের কুল কিনারা আছে বলে মনে হয় না। আল্লাহ’র ওয়াস্তে সব চলছে। এতও দুর্বল ও অগোছালো সরকার বাংলাদেশ অতীতে দেখেছে কিনা সন্দেহ আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর সায়েম ও মুশতাকের গদি দখল এমনকি জিয়ার আগমনের আগ পর্যন্ত সমগ্র জাতি এক ধরনের অস্থিরতা দেখেছে। প্রতিটি রাতে ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কূটনৈতিক পাড়ায় গুজব ঘুরে বেড়াত। সন্ধ্যা হলেই ফিসফাস শুরু হতো পাওয়ার হাউজগুলোতে। কত মানুষের প্রাণ গিয়েছে রাতের অন্ধকারে।

 

৫০ বছর পরে তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাংলাদেশে। সময় বদলেছে। কিছু ঘটলেই মুহুর্তে তা সোশাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সয়লাব হয়ে যায়। এর সাথে যুক্ত হয় গুজবের ঢালপালা। কোনটা সত্য আর কোটনা মিথ্যে তা নির্ধারন করতে হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে পতিত সরকারের সর্মথকরা বিদেশে বসে প্রতিদিন গুজব ছড়াচ্ছেন। এমনও নজীর আছে, একজন আওয়ামী একটিভিস্ট একদিনে ৩০০টি গুজব পোষ্ট করেছেন। সরকার বিরোধী গুজব সৃষ্টিকারির সংখ্যা অবশ্য নিউইয়র্কেই বেশি। গত ৭ দিনে শতশত বার ড. ইউনূসের পদত্যাগ দেখিয়ে পোষ্ট করেছেন। শেখ হাসিনার বায়বীয় হরতাল নিয়ে তারা কম যান নি। সরকারকে বির্তকিত ও দুর্বল করে রাজনীতির কৌশল বিরোধীরা নেবেই। এটাই স্বাভাবিক।

 

ইউনূস সরকারের দুর্বল চিত্ত বিপ্লবের পেছনে লাথি মেরেছে। বিড়ালটি মারা উচিৎ ছিল প্রথম রাতেই। ‘জামাতের সুফীবাদ’ ও বিএনপির অস্থিরতায় সময় গড়িয়েছে দ্রুত। প্রায়োরিটি এজেন্ডা সংস্কার ও মুখ থুবরে পড়েছে। এতও নড়বড়ে সরকারের পক্ষে জন প্রত্যাশিত সংস্কার তৈরি ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লবে সারা জাতির অকুন্ঠ সর্মথন দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেরাই আজ প্রশ্নের সন্মুখিন। নিজেদের মধ্যেই কোন্দলে জড়িত। বিপ্লবী ছাত্রদের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। তাদের ‘খোয়াব’ নিয়ে অযথাই বিএনপির মতো দল বির্তকে জড়াচ্ছে। সাথে সাথে সরকারের ওপরও নাখোশ সাধারন মানুষ। প্রশ্ন উঠতে পারে ১৭ বছরের সাজানো ফ্যাসিবাদের রাজত্বে ৬ মাসেই সব ফয়সালা হবে না। আর এই অজুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপন করলে ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসতে পরে। প্রতি বিপ্লব ঘটতে পারে পতিতদের সহায়তায়। তখন তারা ৪৫ মিনিট সময় দেবে না। নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার যায়গাটিও নেই। িনির্বাচনের আয়োজনই একমাত্র পথ সুস্থ ধারাবাহিকতার পথ।।

 

জনগনের ম্যান্ডেটে একটি নির্বাচিত সরকারই সমস্যার সমাধান করতে পারে। ফ্যাসিবাদ দমনে তারাই হতে পারেন নিয়ামক শক্তি। বিশ্ব মোড়লরাও সে পথে হাঁটবার তাগিদ দিচ্ছেন। একটি অংশগ্রহণমুলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই স্বাভাাকি ধারাবাহিকতার কন্টকমুক্ত বাগান। শেখ হাসিনা আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করেছিলেন। গনতন্ত্রের মানসকণ্যা খ্যাত শেখ হাসিনা কখন যে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেন তা নিজেও জানতেন না। ছেলে—মেয়ে, বোন ও ভাগ্নী সহ পুরো পরিবার দুর্নীতির প্রতীক হয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। পরিনতিতে ৪৫ মিনিটের নোটিশে বিদায় নিতে হয়েছিল। এই ধরনের বিদায় আর কোন সরকারের জন্যই তা প্রত্যাশিত নয়।

মনে রাখতে হবে, ৫ আগষ্ট এর ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে নব্য ফ্যাসিবাদ বাংলার জনগনকে গিলে ফেলবে। বাংলাদেশের মানুষ পতিত স্বৈরাচারকে কোনভাবেই গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকারই কেবল জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরতে পারে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটিও বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহনমূলক অবাধ ও নিরপেক্ষ দেখার অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৩৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com