রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনায় একাত্তরের প্রহরী’র বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   124 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনায় একাত্তরের প্রহরী’র বিবৃতি

নিউইয়র্কে সম্প্রতি গঠিত একাত্তুরের প্রহরী নামের একটি সংগঠন। ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর গঠিত এই সংসঠনের সিংহভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ড. ইউনূস সরকারের কর্মকান্ড বিরোধীতে সোচ্চার। গত ২৩ জানুয়ারি এমনি একটি বিবৃতি তারা সংবাদ মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। এতে স্বাক্ষরকারি উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন ড. নুরুন নবী, শিল্পী তাজুল ইমাম,ফকির ইলিয়াস, বিপার এ্যানি ফেরদৌস ও লুৎফুন নাহার লতা। বিবৃতিটি তুলে এখানে ধরা হলো।

একাত্তরের প্রহরী, একদল স্বতোঃ প্রণোদিত দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিদের এক মুক্ত মঞ্চ। এখানে সমাবিষ্ট সবাই একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তরের সংবিধান, এবং সর্বোপরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অবিচল ও গভীর আস্থা স্থাপনকারী।

আমরা অকুণ্ঠচিত্তে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। নতশিরে কৃতজ্ঞতা জানাই মুক্তিযুদ্ধে আত্মবলিদানকারী তিরিশ লক্ষ শহীদ এবং তিন লক্ষ ধর্ষিতা মা—বোনের প্রতি। আমরা গর্বিত সেসব মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, যারা একাত্তরের প্রহরী হিসেবে আজও জাতিকে নির্মোহ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
আমাদের অস্তিত্বে মিশে আছে জয় বাংলা শ্লোগান, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত — আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, এবং সবুজ জমিনে সূর্যের মতো তেজোদ্দীপ্ত রক্তগোলক খচিত জাতীয় পতাকা। এগুলো আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা, সামনে এগিয়ে চলার শক্তি।

একাত্তরের প্রহরীর সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত সরল। আমাদের কারো কোনো ব্যক্তিস্বার্থ নেই, কোনো একক নেতৃত্বও নেই। দেশের দুর্দিনে ও দেশের প্রয়োজনে জাগ্রত দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ আমাদের করণীয় নির্ধারণ করে দেয়। এই দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ আমাদেরকে একাত্তরের অতন্দ্র, সদা জাগ্রত, সদা প্রস্তুত প্রহরীতে পরিণত করেছে।

বিশেষ রাজনৈতিক দল, আদর্শ, কিংবা জোটের সাথে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের আদর্শ, আনুগত্য ও কর্মসূচি সম্পূর্ণ বাংলাদেশকেন্দ্রীক। কোনো ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আমাদের আনুকূল্য বা বিরোধ নেই। একাত্তরের প্রহরী বাংলাদেশি রাষ্ট্রীয় উদ্বুদ্ধ অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা এক বৃহত্তর দেশপ্রেমিক জনতা। প্রকাশ্য উচ্চারণে ঘোষণা দিয়ে একাত্তরে অর্জিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।
স¤প্রতি একদল বিপথগামী, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধহীন সেনা কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর রাজাকার আলবদর ও তাদের আন্তর্জাতিক মিত্র জঙ্গবাদীরা বাংলাদেশের সহজ—সরল মানুষদের তথাকথিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করে ধেঁাকা দিয়ে বেআইনি, অরাজনৈতিক, অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও জবরদস্তিমূলক পন্থায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে একদল সা¤প্রদায়িক, স্বার্থপর, মেরুদণ্ডহীন, নীতিবোধহীন, অবৈধ সুবিধা—প্রত্যাশী, জনগণ—প্রত্যাখ্যাত পরজীবী রাজনীতিবিদ, যাদের প্রতিনিধিত্ব করছে দরীদ্র মানুষের রক্তচোষা অমানবিক সুদ ব্যবসায়ী, আদালত কর্তৃক একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী ড: ইউনুস। তারা নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করে বাংলাদেশের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতাসহ সকল নাগরিক ও মানবিক অধিকার; জনমত, সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যম; স্বাধীন—সার্বভৌম বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় সংবিধান ও জাতীয় সম্পদ; বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও জয়বাংলা শ্লোগান; শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষা উপকরণ ও পাঠ্যক্রম; অসা¤প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক চেতনা; আইন, বিচার ও প্রশাসন; ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, পীর আউলিয়ার মাজার, শহীদদের কবরস্থান ও স্মৃতিসৌধ; জল, সমতল, দ্বীপ, পার্বত্যভূমি ও পার্বত্য জনগোষ্ঠী— সবকিছুকে আক্রমণ করেছে।

বাংলাদেশের এই অগণতান্ত্রিক সরকার ইতোমধ্যে নিজেদের অকার্যকর প্রমাণ করেছে, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করেছে। সরকারি বাহিনীর দ্বারা ও তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষদের গণ—গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। ড: ইউনুসসহ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের দণ্ড প্রত্যহার করেছে, দাগী আসামীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করেছে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা জনজীবনকে মারাত্মক দুর্বিসহ করে তোলেছে।
আমরা বিশ্বাস করি, যারা একাত্তরের প্রেক্ষাপটকে অস্বীকার করেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এবং সা¤প্রতিককালে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করছে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত হতে দেখেও কোনো প্রতিবাদ করেনি, তারা এই বাংলার সন্তান নয়। তাদের বাংলাদেশে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। একাত্তরের প্রহরীর সাথেও তাদের কোনো সামাজিক সম্পর্ক থাকতে পারেনা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চেতনাকে ধ্বংস করতে উদ্যত এই উশৃঙ্খল, হিংস্র, প্রগতি—বিরোধী অপশক্তিকে যে কোনো মূল্যে অপসারণ করে জনগণের অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার লক্ষ্যে সকল পদক্ষেপে একাত্তরের প্রহরী সর্বাত্মক সমর্থন দেবে।
আমরা জানি, আমাদের এক সময়ের সহযাত্রী অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃবৃন্দ, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মচারি, এবং বিগত সরকারের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ন অনেক মানুষ, ইউনুস সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের ভুল বুঝতে পেরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের মূলধারায় প্রত্যাবর্তন করেছেন। দুঃখজনকভাবে এদের আরেকটি অংশ এখনও অনড় ও অপরিবর্তিতভাবে নিজেদেরকে অপরাধসম নিরপেক্ষ অবস্থানে ধরে রেখেছেন। একথা স্পষ্ট যে, বর্তমান সরকারকে সমর্থনকারী, এবং অপরাধসম নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনকারীরা একযোগে একাত্তরে পরাজিত ঘাতক—দালাল—রাজাকার ও পাকিস্তানিদের পক্ষে, প্রকারান্তরে একাত্তরে স্বাধীন হওয়া মুক্ত—স্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষেই কাজ করছেন। এদের সবার প্রতি আমাদের স্পষ্ট এবং হৃদয়খোলা আহ্বান— আপনারা অবিলম্বে এই ভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনারা জেনে রাখুন, পাকিস্তানের বিশ্বস্ত মিত্র বর্তমান বাংলাদেশ সরকারকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সহায়তা করার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে একাত্তরের পরাজিত ঘাতক—দালালদের হাতে তুলে দেওয়া। তাই একাত্তরের প্রহরীর পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন, সকল রাজনৈতিক দল, মতাদর্শ, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস কিংবা নৃগোষ্ঠী নির্বিশেষে একজোট হয়ে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল আদর্শ বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে অবিচল থেকে একাত্তরের প্রহরী হয়ে বাংলাদেশের কল্যাণে সর্বোচ্চ ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। মনে রাখবেন, দেশপ্রেমের এই আহ্বানকে যারা প্রত্যাখ্যান করবে, তারা বিশ্বাসঘাতক বেঈমান হিসেবে ইতিহাসের পাতায় চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিরা সচেতন কিংবা অবচেতনভাবে উপরে বর্ণিত একাত্তরের প্রহরীর আদর্শ, লক্ষ্য এবং কর্মসূচির প্রতি আস্থাশীল। আমাদের প্রত্যাশা, একাত্তরের প্রহরী নিউ ইয়র্কে স্বতোঃপ্রণোদিত হয়ে যে যাত্রা শুরু করেছে, বাংলাদেশে ও পৃথিবীর অন্যত্র সবাই সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন নামে ও কাঠামোতে অনুরূপভাবে ঐক্যবদ্ধ হবেন, এবং অচিরেই সেসব প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ একই ধারায় মিলিত হবেন। এই মিলিত ধারাই বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অবিকৃতভাবে অক্ষুণ্ণ রাখতে, দেশ থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পক্ষের সংগঠন ‘একাত্তরের প্রহরী’ স্বাক্ষর: ড: নুরুন নবী (মুক্তিযোদ্ধা), বেলাল বেগ (সমাজ চিন্তক) , ড: জিনাত নবী (মুক্তিযোদ্ধা) তাজুল ইমাম (মুক্তিযোদ্ধা), ডঃ হাসান মামুন (অধ্যাপক), ডঃ নাহিদ বানু (বিজ্ঞানী), ডঃ দিলিপ নাথ (লেখক ও মূলধারার রাজনীতিবিদ), রাফায়েত চৌধুরী (সংগঠক) , ড: দেলোয়ার আরিফ (অধ্যাপক), ড: নীরু কামরুন নাহার (অধ্যাপক), ফকির ইলিয়াস (কবি) , লুৎফুন নাহার লতা (লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব), মিথুন আহমেদ (সাংস্কৃতিক সংগঠক) , মিনহাজ আহমেদ (লেখক এবং সংগঠক), ফাহিম রেজা নুর (লেখক ও কলামিস্ট), সেলিমা আশরাফ ইসলাম (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব) , এ্যানি ফেরদৌস (সাংস্কৃতিক সংগঠক) , ডঃ বিলকিস রহমান দোলা (আবৃত্তিকার) , জি, এইচ আরজু (সংগঠক, বাচিক শিল্পী), দস্তগীর জাহাঙ্গীর (গণমাধ্যমকর্মী ও লেখক) , সিসিলিয়া মোরাল (সাংস্কৃতিক কর্মী), সাবিনা নীরু (বাচিক শিল্পী) তাহরিনা পারভীন প্রীতি (বাচিক শিল্পী), এডভোকেট আসলাম আহমেদ খান, গোপাল স্যানাল (একটিভিস্ট), গোপন সাহা (বাচিক শিল্পী), আবু সাঈদ রতন (লেখক, সংগঠক), ফারহানা ইলিয়াস তুলি (কবি), স্বাধীন মজুমদার (বাচিক শিল্পী), খালেদ সরফুদ্দিন (লেখক, সংগঠক), মনজুর কাদের ( ছড়াকার), রওশন আরা নীপা (সংগঠক, চলচ্চিত্র নির্মাতা), মিল্টন আহমেদ (নাট্যশিল্পী, সংগঠক), মিশুক সেলিম (লেখক, সংগঠক), আনোয়ার সেলিম (কবি, নাট্যশিল্পী), পারভিন সুলতানা (আবৃত্তিকার), স্মৃতি ভদ্র (লেখক), জয়তূর্য চৌধুরী (একটিভিস্ট), ঝর্ণা চৌধুরী (একটিভিস্ট), স্বিকৃতি বড়ুয়া (একটিভিস্ট ও সংগঠক), পঙ্কজ তালুকদার (সংগঠক)
##

 

 

Facebook Comments Box

Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com