খেলাধুলা ডেস্ক | মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 8 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
বিদায়মঞ্চ কেমন হয়, জানা নেই পঞ্চপাণ্ডবের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাদের কেউই তো এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিদায় নেননি। মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায় বলাতে আপত্তি আছে। বিদায় বলার সাহস বা ইচ্ছা কোনোটিই দেখাতে পারেননি তিনি। তামিম ইকবালের নীরব বিদায় অনেকটা দুঃখ বিলাসের মতো। কোনো মঞ্চেই তাঁকে বলতে শোনা যায়নি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখনও সাদা বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেন। মুশফিকুর রহিম টেস্ট ও ওয়ানডে দলে আছেন। মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, তামিম যে আংশিক ছেড়েছেন, সেটাও ঘটা করে উদযাপন করা সম্ভব হয়নি তারা না চাওয়ায়।
সে তুলনায় সাকিব আল হাসান খুবই স্বচ্ছ। কানপুর টেস্ট শুরুর আগের দিন অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, টেস্ট ও টি২০ থেকে অবসরের কথা। কবে ওয়ানডে ছাড়তে চান তারও একটা রূপরেখা দিয়েছেন। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডারের কিছু চাওয়া হয়তো পূরণ হওয়ার নয়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাঁকে ওয়ানডে দলে রাখা নিয়েও নির্বাচকদের মধ্যে মতদ্বৈততা আছে। তাই বিচার-বিশ্লেষণ করে বলে দেওয়া যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আজই শেষ সাকিবের। কারণ তাঁকে আর দেশের প্রয়োজন নেই!
দেশে ক্রিকেটারের চেয়েও সাকিবের নাম এখন বেশি উচ্চারিত ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের দোসর হিসেবে, ভোটবিহীন নির্বাচনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য হিসেবে। সাকিবকে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করার কথা বলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এক দিন আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, সমাদরহীনতার কথা। আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়ে সাকিব কি একটি আনুষ্ঠানিক বিদায়ের জন্য নতজানু হবেন? ক্ষমা চেয়ে নতশিরে দেশে ফিরতে চাইবেন? ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে যে মাথার ওপর থেকে হত্যা মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে বা নিরাপদে দেশে প্রত্যাবর্তন ও প্রত্যাগমন করার নিশ্চয়তা পাবেন, তাও না।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা ধরে নিচ্ছেন, সাকিব তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলছেন ভারতের মাটিতে। কারণ দেশের মাটিতে তাঁর খেলা অনেক যদি-কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে। দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকলেও ফেরার পর জীবনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে সন্দেহ সাকিবের স্বজনের। ক্রীড়া উপদেষ্টার কথায় সে ইঙ্গিতও রয়েছে বলে মনে করেন তারা। উপদেষ্টা বলেছেন, ‘খেলোয়াড় সাকিবের যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই আছে। তবে ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে জনমনে তৈরি হওয়া ক্রোধের বিপরীতে নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা চাওয়া অবান্তর।’ এর পর বিসিবির কাছে ‘ফেয়ারওয়েল’ আর রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া সাকিবের জন্য উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতোই মনে করা হচ্ছে।
টেস্ট ও টি২০ ছেড়ে দিলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলতে চেয়েছেন সাকিব। বিসিবি নির্বাচক প্যানেল ও টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছিল। কারণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলা বিদেশের মাটিতে। নভেম্বরে শারজাহতে খেলবে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আছে আরও তিন ম্যাচ। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তানের মাটিতে ফেব্রুয়ারি-মার্চে। কিন্তু প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দল ঘোষণার দিনই বলে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হলে জাতীয় দলের সঙ্গে দেশে অনুশীলন করতে হবে সাকিবকে। জীবনের ঝুঁকি থাকায় সাকিব দেশে না ফিরলে অনুশীলনে যোগ দিতে পারবেন না। ফলে জাতীয় দলে খেলার জন্য নির্বাচকরাও হয়তো বিবেচনা করবেন না তাঁকে।
সেদিক থেকে বলে দেওয়া যায়, আজই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ করছেন সাকিব! অন্যভাবেও বলা যায়, সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ দেখে ফেলেছেন দর্শক। এই অনুমানই সত্য হবে সরকার থেকে আন্তরিক সমর্থন না পেলে।
Posted ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter