মঙ্গলবার ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইন্ডিয়া জোটে ভাঙনের সুর!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক   |   শুক্রবার, ১৮ আগস্ট ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   73 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ইন্ডিয়া জোটে ভাঙনের সুর!

দুয়ারে কড়া নাড়ছে ভারতের জাতীয় লোকসভা নির্বাচন। এর মধ্যেই ফের বিরোধী শিবিরে ভাঙনের সুর। জোটের আপত্তি উপেক্ষা করে গত কয়েকদিনে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন শারদ পাওয়ার। অন্যদিকে বিরোধী জোটকেই কার্যত এড়িয়ে চলছেন নিতিশ কুমার। দিল্লিতে আসন বোঝাপড়া নিয়ে বিবাদ বেঁধেছে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে। কলকাতায় আবার জোটকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এমন অবস্থায় নির্বাচনের আগে বিরোধী ঐক্যের বার্তা দেওয়ার আগেই প্রকাশ্যে এসে পড়েছে বিরোধী জোট শিবিরের ছন্নছাড়া ছবি।

গত জুন মাসের ২৩ তারিখ ও জুলাই মাসের ১৮ তারিখ পরপর দুই মাস প্রথমে বিহার ও পরে ব্যাঙ্গালোরে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন বিজেপি বিরোধী সমমনাভাবাপন্ন ২৬ বিরোধী দলের নেতা নেত্রীরা। এরপর ’২৪ এর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বৃহৎ স্বার্থে বৃহত্তর জোট জোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। যেখানে ইউপিএকে কার্যত কবর দিয়ে গঠন করা হয় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ বা ইন্ডিয়ার। যে জোট গঠনের অন্যতম কারিগর ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার।

ব্যাঙ্গালোর বৈঠকের পর থেকেই নীতীশের নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আসলে বিরোধী দলগুলির বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পর থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন না তিনি। পাটনায় ফিরেও বৈঠক নিয়ে প্রায় দশদিন কোনও কথা বলেননি জনতা দল ইউনাইটেডের এই নেতা।

তাঁর দল সূত্রে খবর, একাধিক কারণে বিরোধী জোটের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে নীতিশের। যার প্রথম কারণ হিসেবেই সামনে এসেছে বিরোধী জোটের ইন্ডিয়া নাম । এই নাম অপছন্দ বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর। তার ব্যাখ্যা, সাধারণ মানুষকে এই নাম টানবে না। এটা শহুরে নাম। কিন্তু ভোটের ময়দানে গ্রামের লড়াই মূল লড়াই। নীতীশের গোস্বার আরও একটি কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে তাঁকে ইন্ডিয়া জোটের চেয়ারপারসন না করে সনিয়া গান্ধীকে ওই পদে বসানোর চেষ্টা হচ্ছে। নীতীশকে আহ্বায়ক করার ভাবনা আছে জোটে। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এই পদ নিতে রাজি নন। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন,বিরোধী দলগুলিকে তিনিই একমঞ্চে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু জোটের নেতৃত্ব চলে গিয়েছে কংগ্রেসের হাতে। কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও অভিযোগ নীতীশের ঘনিষ্ঠ মহলের।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দিল্লি সফর করেন একদা বিজেপির জোট সঙ্গী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যু দিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সমাধিতে। এরপর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী চোখ দেখাতে গিয়েছিলেন এইমসে। কিন্তু তারপর থেকে রাজধানীতে অবসর সময় কাটালেও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সকলেই দিল্লিতে থাকলেও নীতীশ কারও সঙ্গেই দেখা করার সময় চাননি। ইন্ডিয়া জোটের বাকি কোনও দলের নেতার সঙ্গেও কথা বলেননি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। এমন অবস্থায় নীতীশের এমন সিদ্ধান্তের পিছনে কোনও রাজনৈতিক পথ বদলের আভাস রয়েছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছেন বিরোধী নেতারা।

জোটের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মহারাষ্ট্রের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপির শরদ পাওয়ারকে নিয়েও ইন্ডিয়া জোটে সংশয় দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহ্বান দাবি করেছেন, অজিত পাওয়ারের মাধ্যমে বিজেপি শরদ পাওয়ারের কাছে বড় প্রস্তাব দিয়েছে। বিজেপির তরফে শরদ পাওয়ারকে কৃষিমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি নীতি আয়োগের চেয়ারম্যান পদের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও মেয়ে তথা সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে ও ঘনিষ্ঠ বিধায়ক জয়ন্ত পাতিলকে মন্ত্রী করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে শনিবার পুনেতে শিল্পপতির বাড়িতে গোপন বৈঠক হয়েছে বলেও জানান ওই কংগ্রেস নেতা।

কংগ্রেসের এমন দাবির পর গোপন থাকলেও পরে প্রকাশ্যে এসে পড়ে বৈঠকের ঘটনা। যা নিয়ে শুধু মহারাষ্ট্রের রাজ্য রাজনীতিতেই নয়, ইন্ডিয়া জোটের মুম্বাই বৈঠকের আগে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের মহারাষ্ট্র রাজ্য সভাপতি নানা পাটোলে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করবেন। মহা বিকাশ আঘাদির জোট সঙ্গী কংগ্রেস এই বৈঠক নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। ইন্ডিয়া জোটেও এব্যাপারে আলোচনা হবে। তাই তিনি এব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলবেন না। যদিও মহারাষ্ট্র থেকেই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম জোটসঙ্গী শিবসেনা। তাদের দলীয় মুখপাত্র সামনায় লিখেছে, ‘মহারাষ্ট্রের উপ–মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার বারে বারে শারদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু শারদ পাওয়ার কোনও বৈঠক পিছিয়ে দিচ্ছেন না। কিছু বৈঠক হয়েছে প্রকাশ্যে আর কিছু গোপনে, যে কারণে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।’

যদিও শারদ পাওয়ারের তরফে দাবী করা হয়েছে তিনি তার মত ও পদ বদল করেননি। তিনি তার পুরনো অবস্থানেই অনড় আছেন। শারদ পাওয়ার দাবি করেছেন মহাবিকাশ আঘাদিতেও কোনও বিভ্রান্তি নেই। প্রমাণ হিসেবে মহারাষ্ট্রের বিজেপির বিরুদ্ধে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি। এছাড়াও আগামী ৩১ অগাস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া জোটের প্রস্তুতি বৈঠক নিয়ে তিনি ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন শারদ পাওয়ার। যদিও এর আগে জোটের আপত্তি উপেক্ষা করে মহারাষ্ট্র পুনেতে স্বাধীনতা সংগ্রামী গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চ ভাগ করেন মারাঠা স্ট্রংম্যান। করমর্দনের পাশাপাশি কুশল বিনিময় করেন দুই নেতা।

অন্যদিকে দিল্লিতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সাতটি আসনে আসন সমঝোতাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এল আপ-কংগ্রেস চিরাচরিত সংঘাত। ঘটনার সূত্রপাত হয় কংগ্রেস শিবির থেকে। বুধবার কংগ্রেসের দিল্লি সংগঠনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বৈঠকে বসেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সাংসদ রাহুল গান্ধী। তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সাতটি লোকসভা আসনে কংগ্রেসের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে নিয়েই আলোচনা করা হয়। বৈঠকের পর কংগ্রেস নেতা অলকা লাম্বার মন্তব্যেই বিতর্ক তৈরি হয়। তিনি জানান, দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনেই লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

বিতর্ক আরও উসকে দেন দিল্লির কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত নেতা দীপক বাবারিয়া। আম আদমি পার্টির নাম না করে তিনি বলেন, শীলা দীক্ষিতের নেতৃত্বে যে দিল্লি উন্নয়নের শিখরে পৌঁছেছিল, সেই দিল্লি এখন দিক-নির্দেশ বিহীনভাবে চলছে।

এরপরই পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়েন আম আদমি পার্টির নেতারাও। আপের মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা কক্কর বলেন, যদি কংগ্রেস মনে করে তারা দিল্লিতে কোনও সমঝোতায় আসবেনা, তাহলে ইন্ডিয়া জোটে বৈঠকে যোগ দিয়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশেষে দুই দলের পক্ষ থেকে পরবর্তীকালে নেতাদের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত মতামত বলে বিবৃতি দেওয়া হয়। যদিও আপ-কংগ্রেসের এমন বিরোধের জেরে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন দিল্লী, পাঞ্জাব হরিয়ানার মত আপের প্রভাব বলয়ে ইন্ডিয়া জোটের ভবিতব্য কী , তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

এদিকে জোট গঠনের পর থেকে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে জোরালো দাবি উঠেছে মমতাকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার জন্য। মমতা নিজে প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য লালায়িত নয় বলে জানালেও তার দলের নেতাকর্মীরা রীতিমতো সভা সমাবেশ করে মমতাকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবিতে সরব হয়েছেন। বিরোধী বাম কংগ্রেস বলছেন মমতার সম্মতি ছাড়া কখনোই তার দলের নেতাকর্মীরা এমন প্রচার-প্রচারণা করতে পারেন না।

যদিও যে জোট গঠনের মাধ্যমে মমতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সেই জোটকেও রাজ্য স্তরের রাজনৈতিক অর্জনের জন্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না মমতা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলার এক সমাবেশ থেকে জোট কেই কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘যদিও এখন রাম-বাম, জগাই-মাধাই-গদাই মানে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি সব এক হয়ে গিয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় ওখানে ন্যাশনাল পার্টিতে ইন্ডিয়া আর এখানে বিজেন্ডিয়া। বিজেপির সঙ্গে বসে আছে। লজ্জাও করে না! মানুষের একটা নীতি থাকে। সেটা মেনে চলতে হয়। আমাদের লড়াই সিপিএমের বিরুদ্ধে বাংলায়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাংলায়। যদি এরকম করতে থাকে ওরা। আর বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই থাকবেই।’ মমতার এই অবস্থান নিয়েই বর্তমানে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, বোধ থাকলে এ কথা বলতেন না। উনি তো তাহলে ইন্ডিয়াতে নেই বলে মনে হচ্ছে। আসলে নেই তো বটেই। আসলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা যখন শুরু হয়েছে তখন তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন না। তাই ইন্ডিয়াটা এখনও বোঝেননি।

কংগ্রেস নেতা ঋজু ঘোষাল বলেন, ইন্ডিয়ার অ্যালায়েন্স হয়েছে মানে তো কংগ্রেসের তরফে বলা হয়নি তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা যাবে না। সব দেখেও চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে! সে কারণেই আমরা তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে সরব। আর ঠিক সে কারণেই আমরা মমতার গাত্রদাহ হচ্ছি। এটা তো খুবই স্বাভাবিক।

Facebook Comments Box

Posted ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৮ আগস্ট ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com