নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট | 348 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে যাতায়াতে ভারত এখন বাণিজ্যিকভাবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এর জন্য তাদেরকে স্বল্প পরিমান ব্যয় বহন করতে হবে। বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যমে যাকে বলা হয়েছে ‘নামমাত্র খরচে’। অনেকে একে ‘প্রায় বিনা মূল্য’ বলেও অভিহিত করেছেন। এ সংবাদ পড়ে ফেসকে প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক সোহেল হোসেন লিখেছেন, ‘ভারত শুধু নিয়েই গেলো। বাংলাদেশ পেলো শুধু বন্যা’। প্রবীণ সাংবাদিক মনজুর আহমদ ফেসবুকে লিখেছেন, নেহায়েতই ছড়া।
“রাস্তা দিলাম, ঘাট দিলাম
এবার দিলাম বন্দর।
তোমার জন্য দিলাম খুলে
আমার সারা অন্দর”
ভারতের মূল ভূখ- থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় যাতায়াতে পরীক্ষামূলক পরিবহন শুরু হয় ২০২০ সালে। তবে এবার বাণিজ্যিকভাবে তাদের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার শুরু হতে যাচ্ছে। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত সোমবার একটি স্থায়ী আদেশ জারি করেছে, যেখানে বিস্তারিত বলা হয়েছে এই ট্রানজিটের প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
এই যাতায়াতের জন্য ভারতীয় যানবাহনগুলিকে খুবই সামান্য ব্যয় বহন করতে হবে। এনবিআর-এর এই চূড়ান্ত স্থায়ী বিধিমালায় বলা হয়েছে, সড়ক পথ ব্যবহারে ভারতীয় যানবাহনকে প্রতি কিলোমিটারের জন্য টন প্রতি ১ টাকা ৮৫ পয়সা ফি দিতে হবে। আর চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ফি ধার্য করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে টন প্রতি ৫৮৯ টাকা। পরীক্ষামূলক পরিবহনের সময় যে চার্জ তাদের দিতে হোত এই নতুন ফি তার থেকে মাত্র ৩৫ টাকা বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই বিধিমালা প্রকাশের মাধ্যমে ভারত চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সড়ক ব্যবহারের পার্মানেন্ট ট্রানজিট অর্ডার লাভ করল। এর ফলে ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে যেতে একদা যেখানে তিন থেকে চারদিন সময় লাগত সেখানে এখন সময় লাগবে মাত্র কয়েক ঘন্টা। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ছাড়াও ভারতীয় পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দিতে মোট ৮টি রাস্তার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আদেশ অনুযায়ী, প্রতি চালানের প্রক্রিয়াকরণ মাশুল বা প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা। আর প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা, নিরাপত্তা ফি ১০০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কনটেইনার স্ক্যানিং ফি (প্রতি কনটেইনারে) ২৫৪ টাকা। এছাড়া প্রতি কনটেইনার বা গাড়ির জন্য কিলোমিটারপ্রতি এসকর্ট (পাহারা) ফি ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক চালানে এসকর্ট ফি ছিল ৫০ টাকা।
এর বাইরে ইলেকট্রিক লক ও সিল ফি নামের আরেকটি খাত রয়েছে, যেটি এখনও নির্ধারিত হয়নি। এক্ষেত্রে বিধিমালা অনুযায়ী ফি আরোপ করা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
নির্ধারিত আটটি রুটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব মোংলা বন্দর-গোপালগঞ্জ-মাওয়া-ঢাকা-নরসিংদী-আশুগঞ্জ-সিলেট-তামাবিল রুটের। এই রুটে মোট ৪৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য টোলসহ মাঝারি ক্ষমতার ট্রাকের আদায়যোগ্য মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ১৯৫ টাকা। সবচেয়ে কম দূরত্ব চট্টগ্রাম বন্দর-ফেনী-কুমিল্লা-বিবিরবাজার রুটের, ১৪৩ কিলোমিটার। এই রুটে সড়কপথের মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৯৮৮ টাকা। তবে বিভিন্ন ধরনের মাশুলের ওপর মূল্য সংযোজন কর, মূসক বা ভ্যাট, আরোপ হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ভারতীয় পণ্যের কয়েকটি চালান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আনা-নেয়া হয়েছে। তখন বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে সেটা করা হয়েছিল। এখন এনবিআর স্থায়ী আদেশ জারির মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিট কার্যক্রম শুরুর পথ খুলে গেছে।
এনবিআরের আদেশে ট্রানজিট অপারেটর নিয়োগ, বন্দরে জাহাজ ভেড়া, ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্টের ঘোষণা, শুল্কায়ন, পণ্যের কায়িক পরীক্ষা, ট্রানজিটকাল ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত প্রক্রিয়ার কথা উল্রেখ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক চালানে মাশুলের যেসব খাত ছিল, নতুন আদেশে তা বহাল রাখা হয়েছে। আদেশটিতে ট্রানজিট অপারেটর হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত করা এবং সড়কপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি যানবাহন ব্যবহারের কথা রয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি হয়। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ-সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়।
সেই এসওপির আওতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য ২০২০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রথম পরীক্ষামূলক চালান ভারতে যায়। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আরও কয়েকটি চালান পরীক্ষামূলকভাবে যায়।
এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, ভারতের পণ্য চালান চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আটটি রুটে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে স্থলবন্দর হয়ে ভারতে নেয়া যাবে। এগুলো হলো, চট্টগ্রাম বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা, মোংলা বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা, চট্টগ্রাম বন্দর-তামাবিল ডাউকি, মোংলা বন্দর-তামাবিল-ডাউকি, চট্টগ্রাম বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি, মোংলা বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি, চট্টগ্রাম বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর এবং মোংলা বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর।
Posted ৬:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam