
জাতীয় ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫ | প্রিন্ট | 31 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
ত্যাগের বাণী নিয়ে বছর ঘুরে এসেছে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষকে পরাভূত করার সময়। এসেছে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম সময়। আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাত ময়দান। সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল। বাংলাদেশে শনিবার উদযাপিত হবে ঈদ।
বাংলাদেশ থেকে হজ করতে সৌদি আরব গেছেন ৮৭ হাজার ১৫৭ জন। বিভিন্ন দেশের ও স্থানীয় হজযাত্রী মিলে এই সংখ্যা ২০ লাখের মতো। ধর্মপ্রাণ এই মুসলমানরা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে আজ পবিত্র হজের প্রধান আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিচ্ছেন। ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতির মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ হজের দ্বিতীয় রুকন আদায়ের জন্য তারা মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত এই ময়দানে অবস্থান করবেন তারা।
আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে জোহরের নামাজের আগে হজের খুতবা পাঠ করা হবে। এরপর সেখানে সমবেতরা এক আজান ও দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে জামাতে আদায় করবেন। কারও অবস্থান মসজিদে নামিরা থেকে দূরে থাকলে তিনি নিজের তাঁবুতে আলাদাভাবে আদায় করবেন জোহর ও আসরের নামাজ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু সময় পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানেই অবস্থান করবেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই তারা আরাফাত ময়দান থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
আনন্দে মাতবেন সবাই
বাংলাদেশে ঈদে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহর পথে পশু কোরবানি করবেন। পশু প্রতীক মাত্র। কবি নজরুল বলেছেন– ‘মনের পশুরে করো জবাই,/ পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই।’
পবিত্র কোরআনের বর্ণনানুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা কোরবানি করেন।
এই পশু কোরবানি সম্পূর্ণ রূপক। আল্লাহর পথে ত্যাগই ঈদুল আজহার প্রধান শিক্ষা। পশু জবাই করে তা বিলিয়ে দেওয়া দান নয়, ত্যাগ। তাই তো কবি নজরুল ঈদজ্জোহা কবিতায় বলে গেছেন– ‘চাহি নাকো দুম্বা উট, কতটুকু দান? ও দান ঝুট। চাই কোরবানি, চাই না দান।’
সামর্থ্যবানরা নিজেদের নামে, প্রিয়জনের নামে পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ে সচেষ্ট হবেন। যাদের সামর্থ্য নেই, তারাও বাদ যাবেন না ঈদের আনন্দ থেকে। কোরবানির গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার বিধান রয়েছে ইসলামে। প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। তবে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পবিত্র এই মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। সে হিসাবে আগামী রবি ও সোমবারও কোরবানি করা যাবে।
ত্যাগের দিন হলেও তো ঈদ বলে কথা! ঈদ মানেই আনন্দ। আজ শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। গতকাল বুধবার শেষ কর্মদিবসে কাজ সেরে শহুরে অনেক মানুষ নাড়ির টানে বাড়ির পথ ধরেছেন। মহাসড়কে যানজট, ফেরিতে দীর্ঘ লাইন, ট্রেনে বিলম্ব– সব উপেক্ষা করে ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’ স্বজনের কাছে ফিরছেন।
কোরবানির তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রগুলো। আগামীকাল থেকে পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে সংবাদপত্র প্রকাশ। তবে বন্ধ নেই অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে সাত দিনের বিশেষ বিনোদন অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সরকারি উদ্যোগে বর্ণিল সাজে সাজানো হবে। জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হবে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপে। ঈদের খুশি থেকে বাদ যাবে না হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, শিশু সদনের অনাথ শিশু, কারাবন্দিরাও। হাসপাতাল, শিশু সদন, আশ্রয়কেন্দ্র ও কারাগারে বিশেষ খাবার দেওয়া হবে ঈদের দিন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকিটে জাদুঘর, চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্কে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবে।
Posted ১১:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫
nykagoj.com | Stuff Reporter