রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্দরনগরীতে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তাঙ্গন, ফেরাতে তৎপরতা

জাতীয় ডেস্ক   |   রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   75 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

বন্দরনগরীতে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তাঙ্গন, ফেরাতে তৎপরতা

পাহাড়, নদী, সাগর– এই তিন মিলে অনিন্দ্যসুন্দর শহর বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এক সময় এখানে বুকভরে শ্বাস নেওয়া এবং নিজের মতো দু’দণ্ড সময় কাটানোর জন্য ছিল উন্মুক্ত পরিসর তথা মুক্তাঙ্গন। এগুলো নগরীর সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এক সময় চট্টগ্রামকে ‘স্বাস্থ্যকর নগরী’ও বলা হতো। কিন্তু ইট-পাথরের অট্টালিকায় হারিয়ে গেছে আলো-হাওয়ায় ভরা উদ্যান, খেলার মাঠ, পাহাড় ও জলাশয়। বর্তমানে এগুলো উদ্ধারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের দাবির মুখে কয়েকটি মুক্তাঙ্গন ইতোমধ্যে উদ্ধার করে সাজিয়েও তোলা হয়েছে। অবশ্য দখলদারের কবল থেকে এগুলো উদ্ধার করে নতুন করে সাজাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্যান, জলাশয়সহ সব উন্মুক্ত স্থান তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ ও বন্যা রোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রাম শহরে মুক্তাঙ্গন ক্রমেই দুর্লভ হয়ে পড়েছে। তাই নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা উন্মুক্ত পরিসরগুলো সংরক্ষণ জরুরি।

শুধু উন্মুক্ত জায়গা নয়; নির্বিচার কর্তনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পাহাড়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা দুটি গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক সময় চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশে ছোট-বড় ২০০ পাহাড় ছিল। এখন এর অর্ধেকও নেই। পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব যাদের, সেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) পাহাড় কেটে বানিয়েছে রাস্তাসহ বসতবাড়ি, প্লট।

১৯১৩ সালে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস এবং এর আশপাশে ৩ দশমিক ৮৯ একরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ কয়েক যুগ ধরে উন্মুক্ত নাগরিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালে নেওয়া এক সিদ্ধান্তে এখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের ফলে পরিসরটি ধ্বংস হয়ে যায়। এখন সেটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সার্কিট হাউসের বিপরীতে আউটার স্টেডিয়াম। বছরজুড়ে এখানে মেলাসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ লেগেই থাকত। সম্প্রতি এটিকে খেলা ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।

কাজীর দেউড়ি এলাকায় সার্কিট হাউস-সংলগ্ন শিশু পার্কটি কিছুদিন আগে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে উন্মুক্ত পরিসর। জায়গাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হলেও একে পরিকল্পিত উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে দেখতে চায় নগরবাসী। এ জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপিও দিয়েছে পরিকল্পিত নগর নিয়ে কাজ করা ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন। এ ছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এক সময় অবহেলায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি সিডিএ এটিকে আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তুলেছে। ফলে বর্তমানে সেখানে লোকসমাগম বেড়েছে।

চট্টগ্রাম পরিকল্পিত ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, সার্কিট হাউস-সংলগ্ন শিশু পার্কটি উচ্ছেদ করায় এখন সেখানে বিশাল উন্মুক্ত পরিসর তৈরি হয়েছে। এটাকে উদ্যানে পরিণত করা গেলে নগরবাসী অন্তত দু’দণ্ড সময় কাটানোর সুযোগ পাবে। এ জন্য আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বিষয়টি দেখবেন, বলেছেন। আউটার স্টেডিয়ামকে পুরোপুরি খেলার মাঠে পরিণত করায় এখন শিশুরা সেখানে খেলতে পারছে।

ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতি ধরে রাখতে চট্টগ্রামের ষোলশহর ২ নম্বর গেটে গড়ে তোলা হয় উন্মুক্ত একটি উদ্যান। এর নামকরণ করা হয় ‘বিপ্লব উদ্যান’। নানা রকম ফুলগাছ দিয়ে বানানো তোরণ, ঘন গাছ-গাছালির ফাঁকে কংক্রিটের ছাতা, ছোট্ট একটি কৃত্রিম সরোবর ছিল সেখানে। সবাই অবাধে সেখানে ঘুরতে করতে পারত। কিন্তু আধুনিকায়নের নামে উদ্যানটি এক প্রকার ধ্বংস করে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই বিপ্লব উদ্যানকে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, বিপ্লব উদ্যান আধুনিকায়নের বেশির ভাগ আয়োজনই বাণিজ্যমুখী। দুই একরের উদ্যানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে ফুডকোর্ট। সেই ফুডকোর্টের সামনে তৈরি করা হয়েছে ইট-পাথরের সারি সারি বেঞ্চ।

এদিকে চরম অবহেলায় বছরের পর বছর পড়ে ছিল চট্টগ্রামের ১০ একরের বেশি বিস্তৃত জাম্বুরি মাঠ। ২০১৮ সালে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মাঠকে পরিকল্পিতভাবে উদ্যানে রূপান্তর করা হয়। ফলে এটি এখন চট্টগ্রাম নগরীর আইকনিক সবুজ উদ্যানে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচলাইশ থানার জাতিসংঘ পার্ককে বাণিজ্যিক স্থাপনায় ভরে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে নগরবাসীর দাবির মুখে সেটিকে সবুজ উদ্যানে পরিণত করা হচ্ছে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী শাহরিয়ার খালেদ ও পরিবেশবিদ তাসলিমা মুনা জানান, নগরীর বেশির ভাগ উন্মুক্ত পরিসর ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। জনদাবির মুখে কয়েকটি উদ্যান উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, বিপ্লব উদ্যান আগের মতো সাজাতে আমি কাজ করছি। নগরীর অন্যান্য খোলা পরিসরও রক্ষায় কাজ করব।
শহরকে গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে পরিণত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।

Facebook Comments Box

Posted ৩:০০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com