রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না সরকার

রাজনীতি ডেস্ক   |   শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   40 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

নির্বাচন বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না সরকার

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন বিলম্বিত হোক, তা তারা চান না। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকার দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। তবে জামায়াত আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন চায়। একাত্তরের ভূমিকার জন্য সেই সময়ে আমিরের দায়িত্বে থাকা গোলাম আযম ক্ষমা চেয়েছেন। আবার কেন ক্ষমা চাইতে হবে? জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সব দলকে নির্বাচনে স্বাগত জানাবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহাম্মদ

আলোচনায় সংস্কার এবং নির্বাচন। জামায়াত সংস্কার ও নির্বাচনের পৃথক রোডম্যাপ চেয়েছিল। জামায়াতের গুরুত্ব কীসে– সংস্কারে, না নির্বাচনে?

শফিকুর রহমান : দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। জামায়াত সংস্কার ও নির্বাচনের পৃথক রোডম্যাপ চেয়েছিল। যুক্তিসংগতভাবে বোঝা যাবে, আগে সংস্কার হবে, পরে নির্বাচন। তবে সংস্কার পর্যন্ত নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রয়োজন নেই।
অন্য দলগুলোর মতো জামায়াতও নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ বলেনি। সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় লাগবে। আবার বছরের পর বছর টেনে লম্বা করাও ঠিক হবে না। ধারণা রাখতে চাই, সরকার সেদিকে এগোবে। এই সরকারের মেয়াদকাল অতি দীর্ঘ হলে জাতির জন্য যেমন কোনো কল্যাণ নেই, আবার অতি সংক্ষিপ্ত হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে না।

নির্বাচন কমিশন গঠনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আবার নির্বাচন কমিশনের সংস্কারে কাজ চলছে। সংস্কারের আগে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেল! আওয়ামী লীগ শাসনামলে ক্ষমতাসীন এবং তাদের সহযোগীদের পছন্দে নির্বাচন কমিশন গঠন হতো, এবারও তাই হলো। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম বিএনপি এবং জামায়াতের তালিকাতেও ছিল। আপনি বলছেন, ‘যারা আসবেন তারা যেন পক্ষপাতদুষ্ট না হন।’ যারা আপনাদের তালিকা থেকে এসেছেন, তারা কি পক্ষপাতদুষ্ট হবেন না?

শফিকুর রহমান : আপনারা (সাংবাদিক) কীভাবে জানলেন, কার নাম দিয়েছি? এটা তো রাষ্ট্রীয় আমানত।

কাজী হাবিবুল আউয়াল, কে এম নূরুল হুদারা আওয়ামী লীগের পছন্দে এসে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে। আপনাদের পছন্দের ব্যক্তি আপনাদের পক্ষে কাজ করবে না– নিশ্চয়তা কী?

শফিকুর রহমান : তখন তো এমন অন্তর্বর্তী সরকার ছিল না। দলীয় সরকার ছিল, দলীয়ভাবেই সব হয়েছে।

বিএনপি স্পষ্ট করে বলছে, সব সংস্কার এই সরকারের করার দরকার নেই।

শফিকুর রহমান : আমরাও তাই বলছি। জামায়াতের ৪১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মাত্র ১০টি এই সরকারকে করতে বলেছি। বাকিগুলো নির্বাচিত সরকার করবে।

আওয়ামী লীগ প্রশ্নে একেক দলের অবস্থান একেক রকম দেখা যাচ্ছে। বিএনপি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে চায়। ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে। ছাত্রনেতৃত্বও একই কথা বলছে। জামায়াত আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে চায়?

শফিকুর রহমান : সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। পরিষ্কার করে বলেছি, আওয়ামী লীগ নির্বাচন বিশ্বাস করে না। তাদের অধীনে তিনটি নির্বাচন হয়েছে। তারা উদাহরণ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে।
যে আওয়ামী লীগ নিজেই গণতন্ত্রে, ভোটে বিশ্বাসী নয়, সেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনার দায়িত্ব কে নেবে? কেন নেবে? আগে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করুক, তারা গণতান্ত্রিক দল। তারা প্রমাণ করতে পারলে, জনগণ বিবেচনায় নেবে।

এটা প্রমাণের কোনো পথ আছে?

শফিকুর রহমান : অবশ্যই আছে। উনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে গেলেন কেন বিদেশে? সত্যিকারের রাজনীতিবিদ হলে বাংলাদেশে থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত ছিল। রাজনীতিবিদরা পালায় না। পালায় অপরাধীরা। জামায়াতের ওপর তাণ্ডব চালানো হয়েছে, আমরা তো কোনোদিন পালাইনি। আত্মগোপন করিনি। যারা এই সমাজকে অস্থির করতে চান, তারা আবার রাজনীতি করবেন! তারা আবার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী! নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নেবেন! একটার সঙ্গে আরেকটার মিল নেই। ওনারা (আওয়ামী লীগ) আগে ঠিক করুন, ওনারা কী করবেন। রাজনীতি করতে চান নাকি দেশকে বিশৃঙ্খল করতে চান?

আপনার বক্তব্যে বুঝতে পারছি, জামায়াত আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে চায় না। আওয়ামী লীগ ১০ থেকে ২০ শতাংশ– যতটাই জনসমর্থন থাকুক, দলটি নির্বাচনে না থাকলে তো, আপনারা বহু বছর ধরে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছেন, তা হবে না।

শফিকুর রহমান : গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সব দলকে নির্বাচনে স্বাগত জানাব। কিন্তু গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এটা প্রমাণ করতে হবে।

গত ১৫ বছরের গুম, খুন, ভোট ডাকাতি, দুর্নীতি, গণহত্যার জন্য কি পুরো আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন? নাকি শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবার বা তাঁর সরকারকে দায়ী করছেন? উপজেলা, গ্রামে যে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মী রয়েছে, তারা তো নিশ্চয় দায়ী নয়।

শফিকুর রহমান : দায় সবাইকেই নিতে হবে।

এগুলো তো সাধারণ ফৌজদারি অপরাধ। কথা হচ্ছে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম এবং গণহত্যা নিয়ে।

শফিকুর রহমান : খুন আর চুরির শাস্তি এক হবে না, তা বুঝি। কিন্তু দুটিই অপরাধ। বলছি না, সবাই চুরি করেছে। যারা দৃশ্যমান ছিল, তারা কোনো না কোনো অপরাধ করেছে। গ্রামগঞ্জে বাবা-ছেলে একসঙ্গে ভাত খেতে পারেনি। সেখান থেকে নিয়ে গেছে পুলিশ? শেখ হাসিনা নেয়নি তো। তাঁর গ্রামের কর্মীই তো নিয়ে গেছে।

ফুটপাতের চাঁদাবাজি আর গণহত্যাকে এক করলে গণহত্যার অপরাধ হালকা হয়ে যায়।

শফিকুর রহমান : সব অপরাধীকে শাস্তি পেতে হবে। নইলে অপরাধ চলতে থাকবে। এখনও সমাজে অপরাধ বন্ধ হয়নি।

খুলনার কয়রায় আপনাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর এক শিক্ষককে ধরে স্থানীয় জামায়াত কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

শফিকুর রহমান : জামায়াতের কেউ অপরাধ করলে বিচার হবে। আমার আপত্তি নেই।

এসব ঘটনায় দল বিচার করবে না?

শফিকুর রহমান : আমরা কাউকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করি না। আমরা পত্রিকাতে বিবৃতি দিয়েও শাস্তি দিই না। আমাদের মতো করেই শাস্তি দিই।

তর্কের খাতিরে ধরে নিই, জামায়াত শুধু রাজনৈতিকভাবে এক পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। আপনার ভাষ্যমতেই জুলাই গণহত্যার জন্য পুরো আওয়ামী লীগ দায়ী। তাহলে একাত্তরের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার জন্য কেন জামায়াত দায়ী হবে না?

শফিকুর রহমান: কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ভুল এক জিনিস, অপরাধ আরেক জিনিস। ধরুন একজন অসহায় বন্দুকের নলের মুখে…। এখনও তো হয়েছে। সমন্বয়কদের ধরে নিয়ে কী করা হলো। এটা চিরদিন ছিল। একাত্তরে গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলার কোনো পরিবেশ ছিল এই দেশে? তখন সামরিক শাসন ছিল। জামায়াত বলেনি, অমুক দল বলতে পেরেছে, এমন কোনো নজির আছে?
সবাই বলে, পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন করা বড় কোনো ভুল ছিল না। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হলেও, স্বাধীনতার বাস্তবতা অর্জিত হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর। এর পরও কথা আছে। জামায়াত কি ফেরেশতার দল? ভুলে কেউ করে থাকলে, জামায়াত বিশ্লেষণে নেবে। কিন্তু ঘাড়ে ধরে চাপ দিয়ে ভুল স্বীকার করা, এর জন্য ক্ষমা চাওয়া, এটা তো হতে পারে না।

ভুল না থাকলে, গোলাম আযম কীসের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন?

শফিকুর রহমান: ১৯৯২ সালে নাগরিকত্ব মামলায় কারামুক্তির পর গোলাম আযম পরিষ্কারভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। উনি একাত্তরে জামায়াতের আমির ছিলেন। উনার ক্ষমা চাওয়ায় যদি ক্ষমা চাওয়া না হয়, তাহলে আমি কে ক্ষমা চাওয়ার? তিনিই সঠিক এবং রেসপনসিবল ব্যক্তি ছিলেন ক্ষমা চাওয়ার জন্য। উনার ক্ষমা চাওয়া জাতি কবুল করে নেয়, আলহামদুলিল্লাহ।
তারপরও জামায়াত যদি মনে করে, জাতির মনে দুঃখ আছে, তাহলে দু’কথা বলতে সমস্যা নেই।

জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার কারণে যদি অপরাধী হয়, তাহলে মালেক মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া জামায়াত কেন অপরাধী হবে না?

শফিকুর রহমান: মানুষ জাতীয় পার্টিকে অপরাধী মনে করে গণহত্যাকারীর সঙ্গে থাকায়। তারা করেছে, এই কথা কেউ বলছে না। আওয়ামী লীগের সময় কিন্তু সামরিক আইন ছিল না।

জামায়াতের দুই নেতাকে বন্দুকের মুখে শপথ নিতে বাধ্য করা হয়েছে, এমন তো প্রমাণ নেই। বরং সংগ্রাম পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি অনুযায়ী হাসিমুখে শপথ নিচ্ছেন।

শফিকুর রহমান: জামায়াতের অনেককে কিন্তু পাকিস্তান বাহিনী মেরেছে। আওয়ামী লীগ তো বলে, পঁচাত্তরে বন্দুকের মুখে আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্ত্রী করা হয়েছিল।
জামায়াতের দুই মন্ত্রীর দ্বারা একাত্তরে যদি জুলুম হয়ে থাকে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, জামায়াতের ক্ষমা চাইতে অসুবিধা নেই।

মন্ত্রী হিসেবে জামায়াতের আবুল কালাম ইউসুফ রাজাকার বাহিনীর কুচকাওয়াজে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান যদি জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী হন, রাজাকারের গণহত্যার জন্য আবুল কালাম ইউসুফ কেন দায়ী হবেন না?

শফিকুর রহমান: তাদের মন্ত্রিসভায় যাওয়া যদি অপরাধ হয়, আমরা বিবেচনায় নেব। আসাদুজ্জামান তো গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। আবুল কালাম ইউসুফ তো স্বরাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিলেন না। তিনি রাজস্বের দায়িত্বে ছিলেন।

শেখ হাসিনার পুরো মন্ত্রিসভাকে যেভাবে দায়ী করছেন, তাহলে মালেক মন্ত্রিসভার জামায়াতের মন্ত্রীদের কেন দায়ী করছেন না একাত্তরের গণহত্যার জন্য?

শফিকুর রহমান: হ্যাঁ এই মাইনর রেসপনসিবিলিটি তো নিতে হবে।

বিএনপির সঙ্গে ২৩ বছর জোটে ছিল। এখন সম্পর্কের স্ট্যাটাস কী? প্রতিযোগী, প্রতিদ্বন্দ্বী না সহযোগী?

শফিকুর রহমান: সহযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিরোধিতা নিয়েই রাজনীতি। জনগণের জন্য আবার কিছু মিলও থাকবে। ২০২২ সাল থেকে বিএনপি ও জামায়াত জোটে নেই। এখন দল দুটি আলাদা। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তাদের কর্মসূচিতে আমরা যাই, তারাও আসে।

আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কাদের মধ্যে? আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মতো হয়ে যাবে না তো?

শফিকুর রহমান: আওয়ামী লীগ তো জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব ঠিক করে দিত। এ রকম আর দেখতে চাই না। মর্যাদার সঙ্গে সবাই রাজনীতি করবে।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের জোটের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। জামায়াত গত আগস্টে অনেক দলের সঙ্গে বসেছিল। জোট করবেন নাকি?

শফিকুর রহমান: এখনও জোটের সিদ্ধান্ত নেই। নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হলে সিদ্ধান্ত হবে।

বর্তমান সরকারের কাছ থেকে জামায়াত সমর্থন পাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

শফিকুর রহমান: সরকারের কেউ জামায়াতের কর্মী রুকন নয়। এটা জামায়াতের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচারের একটি।

আরেকটি গুঞ্জন হলো, ভোটে জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জামায়াত নির্বাচন দেরিতে চায়।

শফিকুর রহমান: জামায়াত তা চায় না। নির্বাচন বেশি বিলম্বিত হলে সরকার দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না।

Facebook Comments Box

Posted ৫:১০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com