সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপবাদ ঘুচে ছাত্রলীগে ফিরবে কি ঐতিহ্য

রাজনীতি ডেস্ক   |   বুধবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   99 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

অপবাদ ঘুচে ছাত্রলীগে ফিরবে কি ঐতিহ্য

বিজয়ের মাসে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিচালনার ভার। অনেক প্রত্যাশা নিয়েই নতুন নেতাদের বরণ করে নিয়েছেন সংগঠনটির কর্মী-সমর্থকরা। সেই প্রত্যাশার জায়গাটা হচ্ছে, ছাত্রলীগ নামের ঐতিহ্যবাহী সংঠনটির ললাটে এতদিন ধরে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে রাখা হয়েছে, এবার অন্তত নতুন নেতাদের হাত ধরে সেটি ঘুচে যাবে। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামে যে ঐতিহ্য, সেই ধারায় ফিরে আসবে সংগঠনটি।

এ অবস্থায় দেশের সুপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ এই ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি আজ বুধবার। সে হিসাবে ছাত্রলীগের ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ও। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাঙালি জাতির মুক্তি আর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ যাত্রাপথ পেরিয়ে আসা বর্তমান ছাত্রলীগ কি সঠিক পথে আছে? জবাবে অনেকেই বলছেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড বর্তমানে যেন এক লজ্জাজনক ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। জাতির আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও গৌরবের প্রকাশ ঘটত যেই ছাত্রলীগ নিয়ে, সেই সংগঠনটির মর্যাদা এখন যেন অনেকটাই ম্রিয়মাণ।

তবে আশার কথা, গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের দুই সপ্তাহ পর ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তথা যে শীর্ষ নেতৃত্ব ঘোষিত হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অভিযোগ নেই। অনেক যাচাই-বাছাই ও চুলচেরা বিচার-বিশ্নেষণ করেই সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামের প্রথম সারিতে ছিল ছাত্রলীগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা ও ১১ দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ছিয়ানব্বইয়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। সব আন্দোলন-সংগ্রামেই সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন।

কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ কখনও প্রতিপক্ষের সঙ্গে আবার কখনও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে একের পর এক কলঙ্কজনক ঘটনার জন্ম দিতে থাকে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি হলেও সংগঠনটির অনেক সদস্য নিজেদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা, মারধর, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্যের মতো নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। আধিপত্য বিস্তার, ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির দ্বন্দ্বে খুনোখুনিসহ সারাদেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্তাক্ত ও বন্ধ ঘোষণা করতে হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের সহিংসতার হার আরও বেড়েছে। বিদায়ী বছরেও প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভয়ংকর হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কয়েক দফা রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে সঙ্গে আলাপকালে সংগঠনের সাবেক নেতাদের অনেকেও ছাত্রলীগের বর্তমান কার্যক্রমে নানা হতাশা প্রকাশ করেছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এমপি বলেছেন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক রাজনীতির ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারলেই শুধু ছাত্ররাজনীতি বিকশিত হবে। ছাত্রলীগের রাজনীতিকেও একই কাঠামোয় আনা গেলে এর অতীত ঐতিহ্য ফিরে আসবে। সঠিক ছাত্র নেতৃত্বের পাশাপাশি অতীতের মতো জাতীয় নেতৃত্বও সৃষ্টি হবে।

ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনি আছে। সামনে আমরা ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত থেকে দেশের বিদ্যমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট থাকব। ‘স্মার্ট ছাত্রলীগ’-এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাব।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ছাত্রলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীর মধ্যে দু-একজন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন, তা আমরা অস্বীকার করছি না। তবে ভবিষ্যতে এমনটি যাতে না হয়, সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী দক্ষ ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব যাতে আসতে পারেন- সেই চেষ্টাই আমরা করব।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি :রাজনীতির নানা সমীকরণে বিভক্তির ধারায় ছাত্রলীগের কয়েকটি অংশ এখন সক্রিয়। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মূল ধারার সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে ১৯৭২ সালে জাসদের সহযোগী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এবং বছর কয়েক আগে জাসদের বিভক্তিতে সৃষ্ট বাংলাদেশ জাসদের সহযোগী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগ (অদলীয়) নামের আরও একটি অংশও সক্রিয় রয়েছে। ছাত্রলীগের সবগুলো অংশই আজ পৃথকভাবে সংগঠনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। উদ্বোধনী দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে, আজ সকাল ৬টায় সংগঠন কার্যালয়ে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, ৮টায় ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ও টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা এবং বিকেল ৩টায় শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ। আগামী শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পর্যন্ত শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

ছাত্রলীগ (জাসদ) আজ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৪টায় স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ছাত্র সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

Facebook Comments Box

Posted ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com