
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 91 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
নির্বাচিত হয়েই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জানান দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধ অনুমতি নেই এমন লোকদের গণপ্রত্যর্পণ ছাড়া তাঁর সামনে কোনো বিকল্প নেই।
এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছেন, ‘অভিবাসীদের প্রত্যর্পণে কত খরচ হবে, তা বড় প্রশ্ন নয়। আসলেই আমাদের কোনো বিকল্প নেই। অবৈধ অভিবাসীরা মানুষ খুন করেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশকে ধ্বংস করেছে। এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে না, তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।’
বিবিসি বলেছে, নতুন মার্কিন প্রশাসন গণপ্রত্যর্পণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এজন্য কর্তৃপক্ষকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি মিলিয়ন মানুষকে বিতাড়িত করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হবে।
পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কর্মস্থলে বিতর্কিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ বিদেশিদের ধরপাকড় করা হতো। বাইডেন নির্বাচিত হয়ে ২০২১ সালে তা স্থগিত করেন। ওবামা প্রশাসনের প্রাথমিক বছরগুলোতে প্রতিবছর ২ লাখ ৩০ হাজারের মতো অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হতো। তবে গত এক দশক ধরে গড়ে বছরে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখের নিচে।
৫ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রথম সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার হবে সীমান্তকে ‘শক্তিশালী’ করা। তিনি বলেন, তাঁর জয়ের অন্যতম কারণ অভিবাসন নীতি।
দোদুল্যমান সাত রাজ্যের ছয়টিই এখন ‘লাল’
এই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যের ছয়টিই এখন পর্যন্ত রিপাবলিকানদের দখলে চলে গেছে। পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং নেভাদা সবই নীল থেকে লালে রূপান্তরিত হয়েছে।
নেভাদায় ট্রাম্পের বিজয় বিধ্বস্ত ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য আরেকটি ধাক্কা। সাতটি রণক্ষেত্র রাজ্যের মধ্যে অ্যারিজোনার ফলাফল এখনও ঘোষণা করা হয়নি। বাকিগুলোর একটিতেও জিততে পারেননি কমলা হ্যারিস।
ডেমোক্র্যাটরা ভেবেছিলেন, এসব রাজ্যের ভোট প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং তা তাদের বিজয়ের পথ সুগম করবে। নেভাদায় বিপুল সংখ্যক লাতিনো জনগোষ্ঠী রয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লাতিনো ভোটারদের, বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষদের ভোট পেয়েছেন।
একীভূত সরকার
প্রতিনিধি পরিষদের চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে ট্রাম্পের রিপাবলিকানরা বেশ এগিয়ে রয়েছেন। দলটি ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউস এবং সিনেট দখল করেছে। এখন প্রতিনিধি পরিষদে জয় পেলে তারা ‘একীভূত সরকার’ গঠন করতে সক্ষম হবে। এতে ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম দুই বছরের জন্য সরকারের আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী শাখায় নিয়ন্ত্রণ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
বাইডেনের আমলে ডেমোক্র্যাটরা ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একীভূত সরকার পরিচালনা করেন যা তাদের মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইনসহ বড় বিল পাস করতে সহায়তা করে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে রিপাবলিকানরা তিনটিই নিয়ন্ত্রণ করত। এর ফলে তিনি সহজেই কর হ্রাসসহ বিভিন্ন আইস পাস করতে সক্ষম হন। ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২১৮ আসন। রিপালিকানরা ইতোমধ্যেই ২১১টিতে জয় নিশ্চিত করেছেন। এখনও ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি ২৪টি। ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হয়েছে ২০০টিতে।
প্রথম নারী চিফ অব স্টাফ পাচ্ছে হোয়াইট হাউস
ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সুসি উইলসকে বেছে নিয়েছেন। ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ৬৭ বছর বয়সী সুসির নাম ঘোষণা করেন। তিনি হচ্ছেন হোয়াইট হাউসের প্রথম নারী চিফ অব স্টাফ। আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফেরার প্রস্তুতি হিসেবে প্রথম তিনি কোনো কর্মীর নাম ঘোষণা করলেন।
হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি হোয়াইট হাউসের কর্মীদের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও সামলান। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের প্রতিদিনের কর্মসূচি ঠিক করার পাশাপাশি সরকারি বিভাগ ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ঘিরে এখন নতুন কিছু নাম আলোচনায় এসেছে। যারা তাঁর মন্ত্রিসভা, হোয়াইট হাউস ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা এবং পেশায় পরিবেশবাদী আইনজীবী কেনেডি জুনিয়রকে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এবং খাদ্য ও ওষুধ সুরক্ষা প্রশাসনের (এফডিএ) মতো জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্থার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ককে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে আমলাতন্ত্র সংস্কারে। ট্রাম্পের শেষ দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মাইক পম্পেওকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হতে পারে।
ট্রাম্পের প্রশংসায় পুতিন
ট্রাম্পকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের নেতারা অনেক আগেই অভিনন্দন জানালেও নীরব ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শেষ পর্যন্ত তিনিও অভিনন্দন জানালেন ট্রাম্পকে। নির্বাচিত নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য মস্কো প্রস্তুত বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের জয়ের পর বৃহস্পতিবার প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্যে পুতিন বলেন, গত জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার সময় সত্যিকারের সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী সোচি রিসোর্টের ভালদাই ডিসকাশন ক্লাবে পুতিন এই প্রশংসা করেন ট্রাম্পের।
Posted ৪:০১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter