
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 84 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তন পুরো বিশ্বে কমবেশি প্রভাব ফেলে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে বিশ্ব ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। বাংলাদেশেও অফিস-আদালত থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে আলোচনার অন্যতম বিষয় যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রায় ট্রাম্পের পক্ষে গেলে এ দেশের রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে– এমন আশঙ্কা করেন অনেকে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর, অন্য দেশের প্রভাবে নয়। অন্য দেশের ভোট নিয়ে এখানে উদ্বেগ বা উচ্ছ্বাসের কিছু নেই।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলছেন, দলটির সুদিন ফিরবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চট করে চলে আসবেন। এই আলোচনায় ডালপালা গজিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায়। বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বর সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট এক্সে লিখেন, ‘এটা আমার নজরদারিতে থাকলে ঘটত না। কমলা ও জো (বাইডেন) সারাবিশ্বে এবং আমেরিকায় হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন। তারা ইসরায়েল থেকে ইউক্রেন, এমনকি আমাদের দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত বিপর্যয় এনেছেন। কিন্তু আমরা আমেরিকাকে আবার শক্তিশালী করব এবং শক্তির মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনব।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে তিনি লিখেন, ‘আমরা হিন্দু আমেরিকানদেরও কট্টরপন্থি বামপন্থিদের ধর্মবিরোধী এজেন্ডা থেকে রক্ষা করব। আমরা আপনার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করব। আমার প্রশাসনের অধীনে আমরা ভারত ও আমার ভালো বন্ধু মোদির সঙ্গে আমাদের মহান অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করব।’
তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের বিষয়টি নাকচ করে দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। সমকালকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সহযোগিতা ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের। তবে তারা কি গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে? বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে বলা যায়, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নির্ধারণ করবে দেশের আগামীর পথ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে– তাঁর এই অর্ধসত্য তথ্য এ দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
এর আগে ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যখন রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় এসেছিল, তখন বিদেশ প্রশ্নে নীতিতে পরিবর্তন এনেছিল দেশটি। বিশেষ করে আগে বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সোচ্চার ছিল। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তাঁর মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে সে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা। তখন বিশ্বের অনেক বিষয় থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে জো বাইডেনের নেতৃত্বে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে আবারও বিশ্বে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান সমকালকে বলেন, নির্বাচনে যদি ডেমোক্র্যাটরা বিজয়ী হয়, তাহলে বাংলাদেশ প্রশ্নে নীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। রিপাবলিকান প্রার্থী বিজয়ী হলে দেখতে হবে আইপিএস ও কোয়াডকে তারা কতটুকু গুরুত্ব দেয়। কারণ, এগুলো ডেমোক্র্যাটদের মাথা থেকে আসা। দেশটিতে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, চীন নিয়ে তাদের নীতির খুব একটা পরিবর্তন হবে না। তবে রক্ষণশীলতা ও উদারপন্থি মত– দুটি দলের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের এ ধরনের দেশগুলোর গণতন্ত্র বিকাশে কোনো ভূমিকা রাখবে না; বরং তারা মার্কিন অর্থনীতিসহ নিজ দেশ উন্নয়নের দিকে বেশি মনোযোগী হবে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে রিপাবলিকানরা এলেও যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে, বিষয়টি এমন নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান– যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে ইউক্রেন-রাশিয়া ও ইসরায়েল-মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ। তাদের মতে, বাংলাদেশে একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। এখানকার রাজনৈতিক দলগুলোও এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। তারা পুরোনো ধারার রাজনৈতিক চর্চা থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। এ দেশের রাজনীতির গতিপথ ঠিক করবে জনগণ ও রাজনৈতিক দল।
Posted ৪:২৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter