শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আদালতে আ’লীগের ন্যায়বিচার চায় জামায়াত

রাজনীতি ডেস্ক   |   সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   80 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

আদালতে আ’লীগের ন্যায়বিচার চায় জামায়াত

আওয়ামী লীগ শাসনামলে যত হত্যা হয়েছে, আদালতের কাছে তার ন্যায়বিচার চায় জামায়াতে ইসলামী। এ দাবি জানিয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আদালতের কাছে দাবি স্পষ্ট, জামায়াতের ওপর যেমন জুলুম করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ওপর যেন তা করা না হয়। ওদের যেন ন্যায়বিচারের মাধ্যমে আসল পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আয়োজিত ‘শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়’ এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর। এতে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যার শিকার অনেকের স্বজন উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতা ও বিদেশি কূটনীতিকরা।

সভায় ১৮ জুলাই ধানমন্ডিতে গুলিতে প্রাণ হারানো কলেজছাত্র ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম দ্রুত জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্নের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান আওয়ামী লীগ কাঁটছাট করে নিজের মতো করেছে। সে রকম সংবিধান থাকলে আমাদের সন্তানদের ত্যাগ বৃথা যাবে।’

৪ আগস্ট নিহত আসাদের স্ত্রী নবজাতক কোলে মঞ্চে ওঠেন। আহাজারি করে তিনি বলেন, ‘সন্তানের মুখ আমার স্বামী দেখতে পারেনি। কী অপরাধ করেছিল সে? তাঁকে তিনটি গুলি করা হয়েছিল। স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

আওয়ামী লীগ আমলের হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে জামায়াত আমির বলেন, ‘বিচারে কারও ফাঁসি, আমৃত্যু কারাদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন হলে হবে। যার যেটা পাওনা তা যেন হয়। প্রতিশোধের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী না। ওরা ছিল দায়িত্বহীন বর্বর। এ জাতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীর সঙ্গে কিছুই হয়নি দাবি করেন তিনি। ডা. শফিকুর বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ক্ষমতা থেকে সরে গেলে দুই দিনে পাঁচ লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হবে।’ আমি জিজ্ঞেস করি, এত বড় গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচ লাখ কর্মীকে কি হত্যা করা হয়েছে? ৫ হাজার, ৫০০, ৫০ কিংবা পাঁচজন? কিছুই হয়নি। আওয়ামী লীগ দানব হতে পারে। কিন্তু এ দেশের মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ আছে। দায়িত্ববোধ আছে।

শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো দেশপ্রেমিক পালায় না, পালাবে না। কারা পালায়, আপনারা জানেন। খুনি ও চোর পালায়। অর্থ বিদেশে পাচার করে তারা এ দেশে থাকার নৈতিক সাহস হারিয়ে ফেলেছে। আপনারাই বলতেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না। আপনিও (শেখ হাসিনা) তো আইনের ঊর্ধ্বে না। কী অপকর্ম করেছেন, আজ প্রত্যক্ষ করতে হবে এবং তার স্বাদও নিতে হবে।

হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ডা. শফিকুর বলেন, শহীদদের আমরা জাতীয় বীর মনে করি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যুতে বিতর্ক চললেও অনুষ্ঠানে এ নিয়ে কথা বলেননি আমির থেকে জামায়াতের অন্য নেতারা। তবে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আবারও স্পষ্ট করেন, তাঁর দল রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের পক্ষে নয়।

তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। সংকটের পেছনে কী শক্তি আছে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। ফলাফল কী হবে, বিচার করতে হবে। বিপ্লবের ফসল ছিনতাই হয় কিনা– চিন্তা করতে হবে।’ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা, তা জনগণের আদালতে ফয়সালা হবে।’

মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজার রহমান ইরান, ১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপি সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আব্দুল কাদের প্রমুখ।

অভ্যুত্থানে চোখ, হাত ও পা হারানো কয়েকশ মানুষ জামায়াতের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। সেখানে আওয়ামী লীগের হত্যাযজ্ঞের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

Facebook Comments Box

Posted ৩:০০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com