
জাতীয় ডেস্ক | মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 22 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে শপথ নেয় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। সংস্কার ও পরিবর্তনের অঙ্গীকারে যাত্রা শুরু করা সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা আকাশচুম্বী। তারা বর্তমান সরকারের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন দিলেও নিত্যপণ্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে ভর করেছে দুশ্চিন্তা।
সরকারের প্রথম দুই সপ্তাহে বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। এর পর থেকে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। যদিও গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দু’জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রেখে প্রতি জেলায় ১০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ রয়েছে। বাজারের লাগাম টানা না গেলে তাদের প্রতিশ্রুত সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সরকারের দুই মাসের কার্যক্রম সম্পর্কে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেছেন, এটা ঠিক, গত দুই মাসে জনপ্রশাসনে অন্তর্বর্তী সরকারের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি ছিল। এ খাতে পরিবর্তনের ফলে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে সামনে পরিস্থিতি উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। সরকার বিশাল ব্যাপ্তির বিষয়। সব কাজই তাকে সময়মতো করতে হবে। জনপ্রশাসনে মনোযোগ দিতে গিয়ে দ্রব্যমূল্যে নজর দেওয়া যায়নি বললে চলবে না।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার হোমওয়ার্ক ছাড়াই দায়িত্ব পেয়েছে। দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা ও বিচার বিভাগের কাজ চালু করতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। কারণ আগের সরকার বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাহিনীসহ রাষ্ট্রযন্ত্র পুরোপুরি স্থবির ছিল। এখন দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে সাধারণ মানুষ ধৈর্যহারা হয়ে পড়তে পারে।
টানা সাড়ে ১৫ বছর পর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পরের তিন দিন দেশে প্রশাসন যন্ত্র বলতে কিছুই ছিল না। ছাত্র-জনতা সবকিছু সামলাতে গিয়ে বিশৃঙ্খলাও হয়েছে। তবে কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর আর্থিক খাতে নতুন সরকারের গৃহীত কিছু উদ্যোগ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রত্যাশা বাড়ালেও পুঁজিবাজারে শুরু হয়েছে নতুন অস্থিরতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে দুই মাসের সরকারের সাফল্য নেহায়েত কম নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সৃষ্ট যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব কমাতে পদক্ষেপ দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে ঘুরে গেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৫৭ বাংলাদেশির দণ্ড মওকুফ করে মুক্তি দিয়েছে।
সরকারকে তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর এবং বিভিন্ন স্থানে ‘মব জাস্টিস’ বা আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা নতুন করে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেকটা বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য বিচারিক ক্ষমতা দিয়েছে। পোশাক খাতের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও কাটেনি ভয়ের পরিবেশ।
ছয় সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম শুরু
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। কমিশনগুলোর সদস্যদের নাম প্রজ্ঞাপনের পর দুই কার্যদিবস পার হয়েছে। কার্যালয়, জনবল ও অন্যান্য কারণে তিনটি কমিশনের কাজ এখনও গতি পায়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন জানিয়েছেন, তারা আলাপ-আলোচনা ও কাজ শুরু করেছেন। বিচার বিভাগ সংস্কারের কমিশন রোববার প্রথম বৈঠক করে। কিন্তু দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, তারা এখনও বসতে পারেননি।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, কাজ শুরু হয়েছে। আর সংবিধান সংশোধনে গঠিত কমিশনের সদস্যদের নামের গেজেট হয়েছে গতকাল রাতে। এ কমিশনে প্রধান ড. আলী রীয়াজ।
বাড়ছে নির্বাচন নিয়ে চাপ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইতোমধ্যে দু’দফা সংলাপ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। এতে ‘দ্রুত নির্বাচন’ কিংবা ‘নির্বাচন কবে হবে, সেই রোডম্যাপ’ দেওয়ার দাবি তুলেছে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ন্যূনতম ঐকমত্যে এলে তার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের টাইমলাইন বা সময়সীমা।
প্রশাসনিক কাজে ধীরগতি
রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারকাজে গতি বাড়ানোর চাপ দিলেও সরকারের কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে না। জনপ্রশাসনের চরম বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় সরকার প্রথম দুই মাসে নজিরবিহীন বদলি ও পদোন্নতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকের শাসনামলে জনপ্রশাসনে অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে দেড় গুণ বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা দুই গুণ ছাড়িয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি দেওয়ায় বাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা সামনে আসতে শুরু করেন। পদোন্নতি-পদায়নের দাবিতে অনেকে বিক্ষোভ করছেন, এমনকি বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধা পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নতুন সরকারকে সহযোগিতা করছেন না। সব মিলিয়ে ক্ষমতা বদলের দুই মাস পরেও প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা ও সরকারি কাজে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে, যা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ড. ইউনূসের সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ নতুন সরকারকে সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও বিষয়টি স্বীকার করছেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা ছাড়া সবাই সরকারকে সহযোগিতা করছেন।
Posted ৩:০২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter