
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 32 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
সর্বশেষ যখন লেবাননের মাটিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বুট পড়ে, তখন তারা সম্পূর্ণ পরাজিত হয়েই ফিরেছিল। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে ওই মাসব্যাপী যুদ্ধ শুরু হয়। এতে ইসরায়েলের সেনারা তীব্র লড়াইয়ে হারের মুখ দেখে।
সম্মুখযুদ্ধে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা একের পর এক ট্যাঙ্ক ধ্বংস করতে থাকে। ওই যুদ্ধে ইসরায়েলের ২০টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়। মারা যান ১২১ সেনাসদস্য। এ প্রেক্ষাপটে সরকার একটি মূল্যায়ন কমিশন গঠন করেছিল। তখন ওই কমিশন জানায়, ‘ইসরায়েলে একটি দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল, যা কোনো স্পষ্ট সামরিক জয় ছাড়াই শেষ হয়েছে।’
গতকাল বুধবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রায় দুই দশক আগের ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন চেঞ্জ দ্য ডিরেকশন’। কার্যত এটি ছিল ইসরায়েলের সম্পূর্ণ ব্যর্থ এক অভিযান। কমিশন বলেছিল, সামরিক বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ও স্থল অভিযান– উভয় ক্ষেত্রেই ইসরায়েলের সেনারা ব্যর্থ হয়েছে। লেবানন যুদ্ধে তারা কার্যকরি সামরিক জবাব দিতে পারেনি।
দীর্ঘকাল পর গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘সীমিত, স্থানীয় ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু’তে স্থল অভিযান শুরু করে। কিন্তু ওই স্থানের প্রমাণ, প্রকৃতি, ইসরায়েলের সেনার সংখ্যা ও ট্যাঙ্কের হার বিচার-বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হয়, ইসরায়েল সম্ভবত লেবাননে দীর্ঘস্থায়ী অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। এর জেরে ইসরায়েল গাজায় নজিরবিহীন নৃশংসতা শুরু করে। বিমান হামলায় পুরো গাজা উপত্যকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে ৪১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজায় হামলার জবাবে ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ বলে আসছে, ইসরায়েল গাজায় হামলা বন্ধ করলে তারাও রকেট ছোঁড়া বন্ধ করবে।
গত এক বছরে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে এক লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে তারা হামলা বাড়িয়েছে এবং ইরান সমর্থিত সংগঠন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছে। এর জেরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্ধারিত লক্ষ্য অনেকটাই পরিচিত– হিজবুল্লাহ আর ইসরায়েলিদের জন্য হুমকির কারণ হবে না, এমনটা তিনি নিশ্চিত করতে চান। তিনি ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুতদের নিজ নিজ বাড়িঘরে ফেরাতে চান। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাঁর সরকার নিজ ভূমিতে হিজবুল্লাহর লড়াইয়ের সক্ষমতাকে খাটো করে দেখছে। তারা মনে করেন, লেবাননে আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে ইসরায়েল ফের হারের মুখ দেখতে পারে।
গত সপ্তাহে স্থল অভিযান শুরুর আগে ইসরায়েলের সপ্তম সাঁজোয়া ব্রিগেডকে সেনাবাহিনীর প্রধান স্টাফ হারজি হালেভি ২০০৬ সালের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন। একদল সেনার উদ্দেশে তিনি বলেন, হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা অত্যন্ত পেশাদার, দক্ষ ও যুদ্ধে অভিজ্ঞ। কিন্তু আপনারা তাদের চেয়েও বেশি শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ। তাই যান ‘শত্রুদের’ ধ্বংস করুন; তাদের অবকাঠামো নষ্ট করুন।
আলজাজিরার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এলেক্স গ্যাটোপৌলস বলেন, ইসরায়েল তাদের সবচেয়ে অভিজাত ইউনিটের সেনাদের পাঠাচ্ছে। তারা এ বার্তা দিতে চাচ্ছে, হিজবুল্লাকে দমনের বিষয়টি তারা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। তিনি জানান, অন্তত ১২ থেকে ১৪ হাজার অভিজাত সেনা পাঠানো হচ্ছে। তাদের সঙ্গে থাকবে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান।
Posted ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter