
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বুধবার, ২১ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 55 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বন্দি শিবির থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়ে অন্তত ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে কিছুদিন আগে। ৫ আগস্ট সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোর ওপর ওই হামলা চালানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, কাদার মধ্যে লাশের পর লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেই দিনের ওই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে ফেরা কয়েকজন রোহিঙ্গা বিবিসিকে তাদের এই ভয়ংকর জীবন যুদ্ধের কথা জানান।
ফায়াজ ও তাঁর স্ত্রী সেই দিনের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, হাজার হাজার ভীতসন্ত্রস্ত রোহিঙ্গা রাখাইনের মংডু শহরের কাছে নাফ নদের তীরে পৌঁছে নৌকায় ওঠা শুরু করেছে, তখনই তাদের ওপর ড্রোনের সাহায্যে হামলা শুরু হয়।
ফায়াজ বলেন, তখন চারদিকে চিৎকার ও আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্টের এই নির্বিচার হামলার আগ থেকেই ওই এলাকার গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালানো হচ্ছিল। তখন একমাত্র বিকল্প হিসেবে নিরাপদ আশ্রয় নিতে তারা বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
ফায়াজ তাদের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে দৌড়াচ্ছিল, সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তান।
আট মাসের ছোট সন্তান ছিল ফায়াজের শ্যালিকার কোলে। প্রথম গোলাটি মুহূর্তেই তাঁর শ্যালিকার জীবন কেড়ে নেয়। কোলে থাকা ফায়াজ দম্পতির ছোট্ট শিশুটি মারাত্মকভাবে আহত হলেও তখন জীবিত ছিল। আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলাম। আমরা একটু নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়ে হামলা থামার অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সন্তান নিস্তেজ হয়ে পড়ে, বুঝতে পারি মারা গেছে, বলেন ফায়াজ।
এর পর স্ত্রী, দুই সন্তানসহ পালিয়ে নৌকাযোগ নদ পার হন তিনি। অনেক অনুনয়-বিনয় করা সত্ত্বেও মাঝি নিহত শিশুটির লাশ সঙ্গে আনতে দিতে রাজি হননি। তাই নদের তীরে একটি গর্ত খুঁড়ে তাড়াতাড়ি তাকে কবর দিয়ে চলে আসেন বলে জানান ফায়াজ।
নিসারও তাঁর মা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও বোনকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রায় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে নদের তীরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আমরা মাথার ওপর ড্রোনের উপস্থিতি টের পাই। এর পর বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাই, বলেন তিনি। তারা ড্রোন ব্যবহার করে আমাদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। নিসারের সঙ্গে থাকা তাঁর পুরো পরিবার এই হামলায় নিহত হয়। এই হামলা থেকে একমাত্র নিসারই বেঁচে ফিরেছেন।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ, এই লম্বা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। নিঃস্ব হয়েছে শত শত পরিবার। বেঁচে যাওয়াদের ভিডিও বিশ্লেষণ করে
বিবিসি দেখেছে, নদের তীর রক্তাক্ত লাশে ঢেকে গেছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
নিহতের সংখ্যা যাচাই করা না গেলেও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা অসংখ্য মৃতদেহ দেখেছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষগুলো জানান, তাদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের অন্যতম শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
তারা আরও জানান, প্রথমে তাদের গ্রামে হামলা করা হয়, পালাতে বাধ্য করা হয় এবং পালাতে গেলে নদের তীরে আবারও হামলা চালানো হয়।
Posted ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ আগস্ট ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter