
জাতীয় ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 44 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পুলিশ সদস্যরা। সহকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং ১১ দফা দাবিতে গতকাল বুধবার অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করেন তারা। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে কান্না করেছেন অনেক পুলিশ সদস্য। তারা বলছেন, ক্ষমতার তাঁবেদারি করতে গিয়ে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আমরা জনগণের জন্য মরব, কখনও জনগণকে মারব না। আমরা জনগণের পুলিশ হয়ে চাকরি করতে চাই। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ চাই।
১১ দফা দাবি জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও স্থাপনায় হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার, নিহত সদস্যদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা ক্ষতিপূরণ, পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ব্যবহার রোধে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন ও কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা নির্ধারণ।
গতকাল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে বিক্ষোভ করেন পুলিশ সদস্যরা। এদিন ইউনিফর্ম পরেননি কেউ। সকালে মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের মাল্টিপারপাস শেডে জড়ো হন পুলিশ সদস্যরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর তারা পুলিশ লাইনের ভেতরের সড়কগুলোতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিকেলে আরেক দফা বিক্ষোভ করেন তারা।
কয়েক পুলিশ সদস্য বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারণে তারা বিভিন্ন অন্যায় কাজ করতে বাধ্য হন। তাদের দিয়ে রাতের বেলা ভোট কাটা, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করানো হয়।
গতকাল বাগেরহাটে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ পুলিশ সদস্য। এ সময় বিভিন্ন স্থানে হামলায় নিহত সহকর্মীদের হত্যার ঘটনা তুলে ধরে অনেক পুলিশ সদস্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিক্ষোভের খবর পেয়ে সেখানে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপাররা। এ সময় সব কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা পুলিশের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন লাঞ্ছনা-বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তারা বিভিন্ন কর্মকর্তার অসদাচরণ, ব্যক্তিগত কাজ করানোর বিচার চান।
পুলিশ সুপারদের কাছে বাগেরহাটের রামপাল ও মোংলা ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের ব্যক্তিগত সহকারী ফিরোজুলকে বাগেরহাট ছাড়তে সহযোগিতা করার বিষয়ে ক্ষোভ জানানো হয়।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান পুলিশ লাইনে যান। বিক্ষোভকারীদের দাবির সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন তিনি। এ সময় তাঁকে উদ্দেশ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানও দেন পুলিশ সদস্যরা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের ১১ দফা দাবি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন কনস্টেবল থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। গতকাল বিকেলে দামপাড়া পুলিশ লাইন্স সদরদপ্তরের সামনে প্রথমে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কনস্টেবলরা। পরে সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসে হাজির হন। সরকার পতনের পর তৈরি হওয়া ভীতিকর পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়। নগরের কোনো থানাতে গতকালও কার্যক্রম শুরু করেননি পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে গতকাল কর্মবিরতি পালন করেছে আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশ। সকাল ৯টা থেকে তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে চেকপোস্টে ভারত ও বাংলাদেশের অন্তত অর্ধশত যাত্রী আটকা পড়েন। দুপুর ১টার পর বিশেষ বিবেচনায় কার্যক্রম শুরু করে শুধু ভারত ও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার করা হয়। তবে বন্ধ রয়েছে ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসার যাত্রী পারাপার।
গতকাল সিলেট পুলিশ লাইন্সে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, এসপি আবদুল মান্নানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ১০-১৫ পুলিশ সদস্য পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক ব্যবহারের কঠোর সমালোচনা করে কাজে যোগ দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। এক সদস্য চাকরি করবেন না হুমকি দিয়ে তেড়েও যান। ১১ দফা দাবিতে ঝিনাইদহে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন পুলিশ সদস্যরা।
গতকাল সকাল থেকেই পুলিশ সদরদপ্তরে ভিড় করতে শুরু করেন এতদিন পদোন্নতিবঞ্চিত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং পরে আইজিপির সঙ্গে দেখা করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আইজিপি তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
Posted ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ আগস্ট ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter