
জাতীয় ডেস্ক | সোমবার, ০৫ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 52 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
রোববার দুপুর ১২টা। ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাতেই অস্বস্তি আর গুমোট পরিবেশের আঁচ পাওয়া গেল। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হলেও রাজধানী অন্যতম ব্যস্ত এ এলাকা তখন অনেকটাই ফাঁকা। দোকানপাটও বন্ধ। পথচারীদের আনাগোনা কম। কিছুক্ষণ পরেই চোখে পড়ে আতঙ্কিত কয়েকজন সোনারগাঁও মোড় থেকে ফার্মগেটের দিকে ছুটে আসছে। এ সময় পুলিশের ২৫-৩০ সদস্য পুলিশ বক্স থেকে বেরিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন।
কারওয়ান বাজারের দিকে পা বাড়াতেই পথচারীদের আলাপ থেকে কানে আসে সোনারগাঁও মোড়ে ঝামেলা চলছে। সেখানে পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর অবস্থান দেখা গেল সার্ক ফোয়ারায়। তাদের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক, রামদা ও কিরিচ। অধিকাংশ নেতাকর্মীর মাথায় হেলমেট। পুলিশের সঙ্গে দাঁড়িয়ে তাদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল বাংলামটর মোড়ের দিকে। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ছিল কয়েকশ আন্দোলনকারী।
সোনারগাঁও মোড় পেরিয়ে বাংলামটরের দিকে এগোতে দেখা গেল, টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির গাড়ি আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে ফিরে আসছে। বাধ্য হয়ে সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে হাতিরঝিলের গলিতে ঢুকে বিয়াম ভবনের সামনে দিয়ে পার হওয়ার সময় চোখে পড়ল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর বাসভবনের সামনে গজারির লাঠি হাতে কয়েক যুবক পাহারা দিচ্ছেন।
জনকণ্ঠ ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাস্তায় চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের হাতেও ছিল গজারির লাঠি। কেউ কেউ হেলমেট পরিহিত। তবে কোথাও পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
মগবাজার মোড় পেরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কার্যালয়ের সামনে পুলিশের কড়া পাহারা দেখা যায়। সেখান থেকে অফিসার্স ক্লাব হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়ক, কাকরাইল মোড়, নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয়নগর পানির ট্যাংক পর্যন্ত কোথাও পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বা আন্দোলনকারীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি। সড়ক ছিল প্রায় যানশূন্য।
পল্টন মোড়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর বড় জটলা ছিল। তারাও ছিল লাঠিসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত। খবর পাওয়া গেল, প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের সঙ্গে আন্দালনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। এরপর শোনা যায় সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেলের শব্দ। পাওয়া গেল ঝাঁজালো ধোয়ার আঁচ।
বেলা ১টার দিকে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড পেরিয়ে মূল সড়কে উঠতেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেখা যায়। সেখানে অসহযোগ আন্দোলনে নামা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সংঘর্ষ চলছিল।
ধানমন্ডি ৩/এ সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলটির কয়েকশ নেতাকর্মীর জমায়েত ছিল। সিটি কলেজ থেকে জিগাতলামুখী সড়কে ছিল বিক্ষোভকারীদের অবস্থান। তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছিল। লাঠি হাতে তাদের প্রতিহত করছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীর জটলার মধ্যে অন্তত দু’জনকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা যায়। তাদের কেউ কেউ বিক্ষোভকারীর দিকে গুলি ছুড়ছিল। তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ছিল বিক্ষোভকারীরা। পরে জানা যায়, গুলিতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থানে থাকা এক তরুণ নিহত হয়েছেন।
এর আগে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে হেলমেট পরিহিত এক ব্যক্তিকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে দেখা যায়। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর জটলার মধ্যে। আশপাশে পুলিশ থাকলেও তাদের ভূমিকা দেখা যায়নি।
দুপুর আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। পাশে ছিল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত শতাধিক ব্যক্তি। তারা সরকারের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিল। সেখানে শোনা যায়, বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বেড়িবাঁধ-বছিলা সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে লাঠি হাতে অবস্থান দেখা যায়। আসাদ গেটে দেখা যায়, গণভবনমুখী সড়কটি বন্ধ। সেখানে সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। কলাবাগানের রাসেল স্কয়ারে লাঠি হাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ছিল। সেখান থেকে এগিয়ে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে দেখা যায়, কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছে। চারদিকের সব সড়ক বন্ধ।
হাতিরপুল, পরীবাগ হয়ে বাংলামটরে দেখা যায়, সেখানেও বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় এর কয়েক ঘণ্টা আগে পুড়িয়ে দেয় তারা। তখনও ধোঁয়া উড়ছিল।
সেখান দিয়ে এগোতে না পেরে কারওয়ান বাজার, এফডিসি মোড়, মগবাজার, মৌচাক, বিজয়নগরে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের একটি বিশাল মিছিল মৎস্য ভবনের দিকে যাচ্ছে। তারা পুলিশকে দেখে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিচ্ছে। সেই মিছিলে নারী, তরুণী, কিশোরী ছিল। বিকেল ৫টার দিকে আবার কাকরাইল মোড়ে দেখা যায়, শত শত নারী-পুরুষ শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ফিরছে। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাঠি।
Posted ৩:২৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ আগস্ট ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter