আন্তর্জাতিক ডেস্ক | শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 40 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রতীক্ষিত প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ধরাশায়ী হয়েছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর দলের নেতারাই। অনেকেই মনে করেছেন, প্রবীণ এই রাজনীতিক আরেকবার দেশ চালানোর উপযুক্ত নন। দ্বিতীয় দফায় জয়ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিতর্কে তাঁর নাজুক পারফরম্যান্সে।
বিপরীতে একের পর এক কথার বাণ ছুড়েছেন বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তাঁর বক্তব্য ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরা। সেগুলোর জবাব দিতে গিয়েই মাঝেমধ্যে হোঁচট খাচ্ছিলেন বাইডেন।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঠে নামার আগে বৃহস্পতিবার প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে মুখোমুখি হয়ে দুই প্রার্থী একে অপরের প্রতি শানিয়েছেন ব্যক্তিগত আক্রমণ। দু’জনই গর্ভপাত, অভিবাসন, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ, অর্থনীতি এমনকি গলফ খেলা নিয়েও একে অপরকে খোঁচা দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের দু’জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিতর্কে নামার আগে থেকে সর্দিতে ভুগছিলেন বাইডেন। তবে প্রেসিডেন্টের নড়বড়ে পারফরম্যান্সে কিছুটা বিচলিত ডেমোক্র্যাটরা। এমনকি বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরবর্তী চার বছর সামাল দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হতে পারে। বাইডেনের এক শীর্ষ তহবিল জোগানদাতা তাঁর পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেই ফেলেছেন, প্রেসিডেন্ট ‘অযোগ্য’ প্রমাণিত হয়েছেন।
আগস্টে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বাইডেনের ভোটের লড়াই থেকে সরে যেতে নতুন করে আহ্বান জানানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।
সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাইডেন ও ট্রাম্প বছর পর প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন। বিতর্ক মঞ্চে উঠলে প্রথা অনুসারে করমর্দন করেননি তারা। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিতর্কে ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেন। অপর দিকে বাইডেন কথা বলেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড।
বিতর্ক শুরুর প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যে বাইডেনকে বেশ কয়েকবারই কর্কশকণ্ঠে কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খেতে দেখা গেছে। তবে মাঝামাঝি সময়ে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনা নিয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে তিনি পায়ের তলায় মাটি পেতে শুরু করেন। বাইডেন এ সময় প্রতিপক্ষকে ‘অপরাধী’ বলেও সম্বোধন করেন। জবাবে মাদককাণ্ড এবং আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের ছেলে হান্টার বাইডেনের আইনি ঝামেলায় জড়ানোর বিষয় সামনে আনেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট হতে নিজেদের ফিটনেস প্রমাণের জন্য ৮১ বছর বয়সী বাইডেন এবং ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প– দু’জনই চাপে আছেন।
ট্রাম্প বলেন, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন, যার ফলে অনেক অপরাধী প্রবেশ করেছে। তিনি একে বাইডেনের অভিবাসন অপরাধ বলে থাকেন। জবাবে বিভিন্ন জরিপের তথ্য তুলে ধরে বাইডেন বলেন, স্থানীয়দের তুলনায় অভিবাসীদের অপরাধের হার বেশি নয়।
বিতর্ক শেষে অবশ্য বাইডেনের নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে হতাশা দেখা গেছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর দুর্বল পারফরম্যান্স শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের শঙ্কিত করে তুলেছে। অবশ্য বাইডেন মনে করেন, তিনি ভালোই করেছেন। একই সঙ্গে বলেন, একজন মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বিতর্ক করা কঠিন।
অন্যদিকে, বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের প্রচার শিবির তাঁর জয় দাবি করে। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান দলের নেতা স্টিভ স্কালিস বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রাম্প বিতর্কে জয়ী হয়েছেন। বাইডেন আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত নন। ট্রাম্পই আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের একমাত্র পছন্দের প্রার্থী।
ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পকে শক্তভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি বাইডেন। বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস অবশ্য বলেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী (বাইডেন) ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে পরে দৃঢ়ভাবে বিতর্ক শেষ করতে পেরেছেন। ভোটারদের বাইডেনের কৃতিত্বের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, বিতর্কের দিকে নয়।
সিএনএনের তাৎক্ষণিক জরিপে ১০ জনের মধ্যে আট বিতর্ক পর্যবেক্ষক বলেছেন, প্রার্থীদের পারফরম্যান্স তাদের পছন্দের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি।
ডেমোক্র্যাটদের কেউ কেউ বাইডেনের পারফরম্যান্সকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেনের পরিবর্তে ‘অন্য কাউকে মনোনীত করার সময়’ এসেছে বলে মত দিয়েছেন। তবে বাইডেনের প্রিন্সিপাল ডেপুটি ক্যাম্পেইন ম্যানেজার কুয়েন্টিন ফাল্কস বলেছেন, বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে যাবেন না। তিনি বলেছেন, বিতর্কে প্রেসিডেন্ট আমেরিকার জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে নতুন একজন প্রার্থী নির্বাচন কার্যত অসম্ভব। বাইডেন পদত্যাগ করলেও ডেমোক্র্যাটদের আরেকটি বড় সমস্যা হবে তাঁর পরিবর্তে কে দাঁড়াবেন? সমীক্ষা বলছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস আমেরিকান জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হবেন না। ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারেন এমন অন্য কোনো সুস্পষ্ট বিকল্প নেই।
Posted ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter