
জাতীয় ডেস্ক | সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 78 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
দেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এই সক্ষমতা দেশের অর্থনীতির জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন না করলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দিতে হয় ক্যাপাসিটি চার্জ। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে সরকারের তহবিল থেকে। গতকাল রোববার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ আয়োজন করে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধে বলেন, দেশে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট; কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ব্যবহার করা না গেলেও কেন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে? সরকার এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করেছে, তা ২০৩০ সালেও প্রয়োজন হবে না। ছয় বছর পর চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ২৫ শতাংশ রিজার্ভ ধরলে তখন ২৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা হলেই চলবে। অতিরিক্ত সক্ষমতার কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি দিতে হচ্ছে। ১৪ বছরে এ খাতে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। তবে সক্ষমতা বাড়লেও দেশে লোডশেডিং হচ্ছে। আমদানিনির্ভর জ্বালানির কারণে অর্থনীতি চাপে পড়ছে। তার পরও এলএনজি খাতে আগামী অর্থবছরে সাত হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় জ্বালানির উন্নয়নে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের কথা বলা হলেও খনন হয়েছে মাত্র আটটি। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লোকসান দিন দিন বাড়ছে। আগামী বছর তা ১৯৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিপিসি বছরের শুরুতে লোকসান দেখায়; কিন্তু বছর শেষে লাভ করে। সংস্থাটির আর্থিক হিসাবনিকাশ প্রশ্নবিদ্ধ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদ বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাসের কথা বলে দাম বাড়ানো হলো; কিন্তু লোডশেডিং কমেনি। সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ডিজেল দিয়ে, সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস এনে কারখানা চালাতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ না থাকায় দেশে বিনিয়োগ আসছে না। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ আরও বলেন, প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২২ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়। গতবার এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এবার ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। এনবিআর চেয়ারম্যান নিজে এটা স্বীকার করেছেন। এভাবে চললে বিদ্যুৎ খাতে বাজেটে যে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেটা আদৌ সরকার দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিবিএসের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দেশে প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ বেকার। যুবসমাজের কর্মসংস্থানের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের বিকল্প নেই। সরকারের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে কোনো কিছুই অর্জন সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোয় দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। জিডিপি বেড়েছে। দেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এটা সরকারের বড় সাফল্য। কিন্তু এর পরও কিছু ভুলত্রুটি আছে। বিষয়গুলো সরকারের কাছে আমাদের তুলে ধরতে হবে। আশা করছি, সরকার এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশে সুবিধা মিলছে না ডলারের দাম বেশি হওয়ায়। এর প্রভাব বিদ্যুৎ খাতেও পড়ছে। বাড়তি চাহিদার বিপরীতে বাড়তি সক্ষমতার প্রয়োজন আছে। তাঁর মতে, সরকার দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎসেবার আওতায় এনেছে। এখন মূল লক্ষ্য হতে হবে মানসম্মত বিদ্যুৎসেবা দেওয়া।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, সবার আগে আধুনিক জ্বালানি নীতিমালা প্রয়োজন। তা না করে জোড়াতালি দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ জন্য একের পর এক মাস্টারপ্ল্যান অকার্যকর হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের বিশেষ বিধান বাতিল করতে হবে। টেন্ডার ছাড়া প্রকল্প নেওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও ১২ থেকে ১৩ টাকায় সৌরবিদ্যুতের চুক্তি হচ্ছে। অথচ দর প্রক্রিয়ায় গেলে এটি ৮ থেকে ৯ টাকায় করা সম্ভব।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের নামে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সমন্বয় করা হয়েছে। সরকার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিদ্যুৎ কিনছে। আবার কমিশনকে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে। কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা, বিদেশ ভ্রমণ, ঘুষের টাকা, কমিশন– সবই জনগণের টাকা থেকে মেটানো হচ্ছে। এর পরও জনগণকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। বাজেটে যত বেশি বরাদ্দ বাড়বে, তত বেশি লুট হবে।
Posted ৫:১২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter