
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | শনিবার, ২২ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 89 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থি প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান দুটি স্পর্শকাতর ইস্যুতে তাঁর কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছু হটতে বাধ্য করেছেন। বিশ্বশক্তির সঙ্গে পারমাণবিক প্রযুক্তির আলোচনার পুনরুজ্জীবন এবং রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা বাধ্যতামূলক হিজাব নিয়ে খোলামেলা কথা বলে তিনি নির্বাচনী মাঠে ঝাঁকুনি দিয়েছেন। ফলে শুরুতে এ নির্বাচন নিরুত্তাপ হবে বলে মনে করা হলেও এখন অবস্থা বদলাতে শুরু করেছে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের
গত সপ্তাহে প্রচারাভিযানে মাসুদ স্পষ্ট করেছেন, তিনি ২৮ জুনের ভোটে জয়ী হলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে উন্নত সম্পর্কের চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি নারীদের হিজাব পরার নিয়ম নিয়ে প্রয়োজনে নরম অবস্থান নেবেন।
বিতর্কিত দুটি ইস্যুতে তাঁর এ আলোচনায় প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিচলিত বোধ করছেন। কর্তৃপক্ষ কীভাবে আশ্চর্যজনক সিদ্ধান্তে সংস্কারপন্থি এই নেতার প্রার্থিতা অনুমোদন করল, তাতে অনেকেই বিস্মিত। এ নির্বাচনে দেশটির নীতিনির্ধারকদের অনুমোদিত রক্ষণশীল প্রার্থীদের মধ্যেই শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা করেছিলেন তারা।
৬৯ বছর বয়সী মাসুদের নির্বাচনী কৌশল হতাশাগ্রস্ত ভোটারদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে পারবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। মাসুদ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ এবং ভোটের ফলাফল পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
আগের বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কম ভোটদানের রেকর্ড হয়েছে। অনেক ভোটার সরকারকে বৈধতা দেওয়া এড়াতে এবং ‘ত্রুটিপূর্ণ’ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে ভোটদানে বিরত ছিলেন।
সংস্কারবাদী ভোটারদের উজ্জীবিত করার জন্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাসুদ এ নির্বাচনে সম্পূর্ণ ভিন্ন নীতির প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। গত মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পরে দেশটিতে ভোট আয়োজন করা হচ্ছে।
একটি সমাবেশে মাসুদ বলেন, ‘আমি আপনাদের সমস্যার সমাধান করতে এসেছি। …তাদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে যাদের কণ্ঠ শোনা যায় না। তরুণ প্রজন্মের জন্য আমরাই (প্রবীণরা) সমস্যা। তারা পরিবর্তন চায়, কিন্তু আমরা পরিবর্তন করিনি। তারা উদ্ভাবন চায়, কিন্তু আমরা উদ্ভাবন করিনি।’
তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছেন। ওই নিধেষাজ্ঞা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের রুগ্ণ অর্থনীতির জন্য ‘বিপর্যয়’ সৃষ্টি করেছে। এটা সরকারের মধ্যে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছে।
পেশায় শল্যচিকিৎসক মাসুদ বলছেন, ইসলামে এমন কোনো নিয়ম নেই যা হিজাব না পরার জন্য নারীদের হয়রানি বা গ্রেপ্তার করার অনুমতি দেয়। হিজাবের কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরে ২০২২ সালে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের পর থেকে দেশটিতে বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
নেতৃস্থানীয় কট্টরপন্থি প্রার্থীরা মাসুদের প্রচারের জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নির্বাচনে দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ এবং সাঈদ জালিলি উভয়ই পারমাণবিক সংকট এবং হিজাব সম্পর্কে স্পষ্টতই অস্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের মূল সমর্থকরা হিজাব আইনের কোনো শিথিলতা চান না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিপরীতে ইরানের উল্লেখযোগ্য ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রেও তারা আদর্শিকভাবে বিরোধী। কিন্তু তারা এ বিষয়েও সচেতন, ইরানিদের একটি বড় অংশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং পাশ্চাত্যের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির জন্য মরিয়া। হিজাব আইনসহ সরকারের সামাজিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধেও তারা সোচ্চার।
মাসুদের চ্যালেঞ্জ হলো, নির্বাচনের ওপর আস্থা হারানো লাখ লাখ ইরানিকে আবার কেন্দ্রমুখী করা এবং তাদের বোঝানো, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করতে বা অন্ততপক্ষে তাঁকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে সহায়তা করতে পারে তাদের ভোট।
২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ৪৮ শতাংশ ভোট পড়ে, যা রাইসিকে ক্ষমতায় এনেছিল। লাখ লাখ ইরানি ভোট বয়কট করায় একমাত্র সংস্কারপন্থি প্রার্থী আবদোলনাসের হেম্মতি পিছিয়ে পড়েন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, হেম্মতির চেয়ে জনগণের মধ্যে মাসুদের আবেদন ব্যাপক।
Posted ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
nykagoj.com | Stuff Reporter