রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে ইরান কি ঝুঁকিতে পড়ল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক   |   বুধবার, ২২ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   76 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে ইরান কি ঝুঁকিতে পড়ল

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ায় দেশটির অভ্যন্তরে যেমন রাজনৈতিক পালাবদল আসছে, তেমনি আকস্মিক এ ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি। প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংঘাত তাদের ওপর চাপ আরও বাড়াতে পারে। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনার পটভূমিতে প্রশ্ন উঠছে, ‘ঠান্ডা মাথার রাজনীতিক’ ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু ইরানকে কি দেশের ভেতরে ও বাইরে ঝুঁকিতে ফেলল?

রাইসি ছিলেন ভবিষ্যতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার দৌড়ে অগ্রভাগে। অনেকে মনে করতেন, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর তিনি হতে পারেন ইরানের কর্ণধার। তাঁর মৃত্যুতে দেশের অনেক মানুষের সেই স্বপ্নও ভেঙেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত নেতা নির্বাচন করার জটিল প্রক্রিয়ায় যেতে হচ্ছে ইরানকে। তারা এমন নেতা বেছে নিতে চাইবেন যাতে দেশটির নীতির ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন না আসে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, জনগণের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। রাইসি মূলত তাঁর আদেশ-উপদেশই পালন করতেন।

প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের নির্দেশ দেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি। এটি যান্ত্রিক ত্রুটি, নাকি তীব্র কুয়াশার কারণে ঘটেছে, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি সরকার। এদিকে ইসরায়েলকে ঘিরে নাশকতার সন্দেহও আছে। পুরো তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার পরই তথ্য জানানো হবে। এরই মধ্যে বিধ্বস্ত ওই হেলিকপ্টারে রেডিও সংকেত পাঠানোর ‘ট্রান্সপন্ডার’ ছিল না বা বন্ধ ছিল বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তুরস্ক।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাইসির দাফন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাঁর কফিন দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবরিজ শহরে পৌঁছালে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে। লাশবাহী গাড়ি ঘিরে লোকজন পদযাত্রা করেন। সেখান থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হয় কোম শহরে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার জন্মস্থান মাশহাদে রাইসি চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন। আজ রাজধানী তেহরানে নেওয়া হবে কফিন। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। রাইসির মৃত্যুতে পাঁচ দিনের জাতীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ সজাগ। এ পরিস্থিতিতে রাইসির মৃত্যু ইরানে অস্থিরতা বাড়াতে পারে। গত মাসে ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও ইরান প্রজেক্টের পরিচালক আলি ভায়েজ সোমবার কাতারে এক প্যানেল আলোচনায় বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগের নিয়ম এখন আর চলছে না। তবে নতুন নিয়ম এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি বলেন, রাইসির মৃত্যু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে জটিলতা চলছে, তাতে অনিশ্চয়তা যুক্ত করল। এতে প্রতিপক্ষের সক্ষমতা সম্পর্কে ভুল হিসাবের ঝুঁকিও বাড়াল।

ইরান ইন্টারন্যাশনাল অনলাইনে এক বিশ্লেষণে বলা হয়, রাইসিকে খামেনি-পরবর্তী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলে মনে করা হতো। এ কারণে তাঁর মৃত্যুতে ইরান দুই ধরনের সংকটে পড়েছে। রাইসির মধ্যে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনি কেবল একজন রাষ্ট্রনায়কই পাননি, ভবিষ্যতের উত্তরাধিকারীও পেয়েছিলেন। সূত্র জানায়, খামেনির একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভবিষ্যৎ সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার দৌড়ে আছেন। এ ছাড়া খামেনির ছেলে মুজতবাও ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ নেতা হতে পারেন। তাদের মধ্য থেকেই একজন হতে পারেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। নতুন প্রেসিডেন্ট পেতে নির্বাচন হবে আগামী ২৮ জুন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সহায়তা চেয়েছিল ইরান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানান, ইরান সরকার তাদের কাছে সহায়তা চেয়েছিল। তারা ইরানকে স্পষ্ট করে জানান, সহায়তা দেবেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে কোনো বিদেশি সরকারের কাছ থেকে আসা অনুরোধে তারা সাড়া দিয়ে থাকেন। তবে শেষ পর্যন্ত লজিস্টিক কারণে তারা সহায়তা দিতে পারেননি। মিলার জানান, ইরানের কাছ থেকে আসা এ ধরনের অনুরোধ বিরল। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

রাইসির মৃত্যুতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সময়ে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাকেরি কানি।

Facebook Comments Box

Posted ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ মে ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com