রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এমপিদের পদত্যাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না আ’লীগ

রাজনীতি ডেস্ক   |   সোমবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   135 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

এমপিদের পদত্যাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না আ’লীগ

বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের (এমপি) পদত্যাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলের যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণায় ভেতরে ভেতরে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এই আন্দোলনের ঘোষণা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরেক দফা সংঘাতময় করে তুলবে কিনা- তা নিয়ে দল ও সরকারের মধ্যে সংশয়ও দেখা দিয়েছে।

তবে এই মুহূর্তে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আগামী ২৪ ডিসেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিল সফল করার পাশাপাশি চলমান তৃণমূল সম্মেলনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনগুলো শেষ করতে চায় দলটি। এসব সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতিকেও এগিয়ে রাখতে চায় তারা।

গত শনিবার বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে দলের সাত এমপির পদত্যাগের ঘোষণা আসে। রোববার স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে এই ঘোষণার বাস্তবায়ন করেছে দলটি। যদিও শনিবারই সাভারে দলীয় এক জনসভা থেকে এ বিষয়ে ‘গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই’ বলে সাফ জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ওই জনসভায় একাধিক নেতা বলেছেন, ৩৫০ এমপির মধ্যে মাত্র সাতজনের পদত্যাগে জাতীয় সংসদের কিছু আসে যায় না। সরকারেরও কিছু আসে যায় না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওই জনসভায় বলেছেন, বিএনপির সাত এমপি গেলে জাতীয় সংসদ অচল হয়ে যাবে- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং সাত এমপির পদত্যাগের মাশুল দিতে হবে বিএনপিকে। এ ভুলের জন্য অনুতাপও তাদেরই করতে হবে।

ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা বলেছেন, সাত এমপির পদত্যাগ ইস্যুতে প্রকাশ্যে এমন বক্তৃতা-বিবৃতি এবং হুঁশিয়ারি অব্যাহত রাখবেন তাঁরা। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপি ও তার মিত্রদের পরবর্তী তৎপরতা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কেননা, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে নতুন কিছু না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীসহ স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিতে ভাবনার বিষয় রয়েছে। আগের আন্দোলনগুলোতে এই উগ্র গোষ্ঠী যুক্ত হওয়ার কারণেই সেগুলো বেশি সহিংসতায় রূপ নেয় বলে জনমনে ধারণা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন বানচাল ও আন্দোলনের নামে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসন্ত্রাসের উদাহরণ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য বলেছেন, বিএনপি তাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবেই হয়তো সাত এমপিকে পদত্যাগ করিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আশির দশকে এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনকালে ১৯৮৮ সালে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনকালে ১৯৯৫ সালে ওই সময়ের সংসদ থেকে আওয়ামী লীগ ও তার তৎকালীন মিত্রদের একযোগে পদত্যাগের সফলতাই হয়তোবা বিবেচনায় নিয়েছে বিএনপি।

তাঁরা বলছেন, তবে এবার সাত এমপির পদত্যাগ বিএনপির আন্দোলনকে মোটেই ত্বরান্বিত করতে পারবে না। কেননা, বর্তমান একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসহ ৩৫০ আসনের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই আওয়ামী লীগের। আবার সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বিএনপির সাত এমপি পদত্যাগ করলেও তারা এ পথে হাঁটবেন না। এ ছাড়া ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় সেখানে বিএনপি ও তার মিত্রদের কোনো আসন না থাকার পরও সেটি জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে এবারও বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগ ইস্যু সংসদীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারবে না।

এ পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে প্রচেষ্টা জোরদার করছে আওয়ামী লীগ। নেতারা বলছেন, কাউন্সিলের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আরও আগেই। তবে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপরতা থাকার কারণে এই প্রস্তুতিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছিল। এরপরও কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত ১১ উপকমিটির মাধ্যমে প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই উপকমিটিগুলোর বৈঠকের মাধ্যমে কাউন্সিলের সবকিছু চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এখন কাউন্সিলের শেষ সময়ের প্রস্তুতি কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হবে।

জাতীয় কাউন্সিলের আগে আগামী ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের জাতীয় সম্মেলন রয়েছে। এর আগে মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলন হয়েছে সফলভাবে। চলমান তৃণমূল সম্মেলনের অংশ হিসেবে দলের জেলা-উপজেলা সম্মেলনসহ সদস্য সংগ্রহ অভিযানও ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের পরপরই সারাদেশে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদারের অংশ হিসেবে শুরু হয়েছিল এই তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম। গত তিন বছরে দলের ৭৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ৬৪ জেলা এবং চার শতাধিক উপজেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন দলের জাতীয় কাউন্সিলের পর আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকিগুলোর সম্মেলনও শেষ হওয়ার কথা। জাতীয় কাউন্সিল শেষে দলের নির্বাচনকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদারের প্রচেষ্টায়ও মনোযোগী থাকবে ক্ষমতাসীন দলটি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপির ১০ দফা দাবিতে নতুন আর কী আছে? এই দাবিতেই তো তারা এত দিন ধরে আন্দোলনের কথা বলে আসছে। কই, কিছুই তো করতে পারল না। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ নিয়ে এত দিন প্রচার-প্রচারণার পরও মানুষের কোনো সাড়া পায়নি বিএনপি। এখন এই ব্যর্থতা ঢাকতে সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ করিয়ে নিজেদের বরং জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করেছে তারা। কেননা, গত নির্বাচনে জনগণের ভোটেই তাঁরা নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাত এমপির পদত্যাগে সংসদ ভেঙে যাবে না, সরকারের পতন হয়ে যাবে না বলেও মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

সাত এমপির পদত্যাগকে ‘রাজনৈতিক স্টান্টবাজি’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের এখানে করণীয় কিছুই নেই। বিএনপি কী করল না করল, সেটি আওয়ামী লীগের দেখার বিষয়ও নয়। আমরা আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল ও চলমান তৃণমূল সম্মেলনগুলো শেষ করার মধ্য দিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ায় রয়েছি। আর এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের জন্য দলের সর্বাত্মক প্রস্তুতিও অব্যাহত রেখেছি।

দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সংসদের কিংবা সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না বরং ক্ষতি হবে বিএনপির। কেননা, এতে বিএনপি যে সংসদে কথা বলতে পারত, তাও বন্ধ হয়ে গেল।

Facebook Comments Box

Posted ১:৪১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com