সোমবার ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার কেন চায় মালদ্বীপ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক   |   সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   74 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার কেন চায় মালদ্বীপ?

মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহারে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ রাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। রোববার রাজধানী মালেতে ভারতের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে সৈন্য প্রত্যাহারের এই সময়সীমা বেধে দিয়েছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চীনে পাঁচদিনের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফেরার পরপরই ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তিনি। তবে নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি।

• মালদ্বীপে ভারতের কতজন সৈন্য রয়েছেন?

মালে এবং নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপ দেশটিতে বর্তমানে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ৭৭ জন সদস্য রয়েছেন। বিলাসবহুল হলিডে রিসোর্ট আর মনোরম সূর্যস্নাত সৈকতের জন্য বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সৈন্যদের পাশাপাশি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর ১২ জন মেডিক্যাল কর্মকর্তাও মালদ্বীপে মোতায়েন রয়েছেন।

• ভারতীয় সৈন্যরা মালদ্বীপে কেন?
ভারত বলছে, মালদ্বীপের প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের মানবিক এবং চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য সৈন্যরা দেশটিতে অবস্থান করছেন। মালদ্বীপকে ভারত দুটি উড়োজাহাজ ও একটি ডর্নিয়ার বিমান দিয়েছে; যেগুলো বেশিরভাগ সময় সামুদ্রিক নজরদারি, তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান এবং চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়। আর এসব কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেন ভারতীয় সৈন্যরা।

ভারতের প্রথম উড়োজাহাজ এবং ক্রুরা মালদ্বীপে প্রথমবারের মতো কাজ শুরু করে ২০১০ সালে; যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন মোহামেদ নাশিদ।

• মালদ্বীপ কেন ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার চায়?
ঐতিহ্যগতভাবে মালদ্বীপের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যা ৫ লাখের কিছু বেশি; যারা চাল, শাকসবজি, ওষুধ এবং মানবিক সহায়তাসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর জন্য নয়াদিল্লির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুল গাইয়ুমের বিরুদ্ধে মালদ্বীপে অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়। এ সময় অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য সেনা পাঠায় ভারত। পরে কিছু দিনের মধ্যে সেই সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয় নয়াদিল্লি।

কিন্তু ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা এবং মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়াদিল্লির হস্তক্ষেপ দেশটিতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পান মোহাম্মদ মুইজ্জু। তার নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ‘‘ভারত হটাও’’। যদিও তার আগের বেশিরভাগ প্রেসিডেন্টই ছিলেন ভারতপন্থী।

মোহাম্মদ মুইজ্জু নয়াদিল্লির ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন এবং মালদ্বীপের মাটি থেকে ভারতীয় সৈন্যদের তাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গত ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে মুইজ্জু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠক করার পর উভয় দেশ সৈন্যদের উপস্থিতিসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় পর্যালোচনার জন্য আলোচনা শুরু করে।

• চীনের সংশ্লিষ্টতা আছে?
ভারতের দক্ষিণ প্রান্তের দক্ষিণ-পশ্চিমে কৌশলগত অবস্থানের কারণে মালদ্বীপে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে নয়াদিল্লির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে বেইজিং। ভারত মহাসাগরের প্রধান ব্যস্ততম সামুদ্রিক বাণিজ্যপথের পাশেই দ্বীপ রাষ্ট্রটির অবস্থান। যে পথ দিয়ে চীনের তেল আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশই পরিবহন করা হয়।

মালদ্বীপে সম্ভাব্য যেকোনও চীনা সামরিক উপস্থিতিকে নিজস্ব আঞ্চলিক উঠানে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করবে ভারত। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের সাম্প্রতিক হামলা সামুদ্রিক বাণিজ্যপথের দুর্বলতা ও এর সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে মুইজ্জুর রাষ্ট্রীয় সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ব্যাপক কৌশলগত এবং সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছে চীন ও মালদ্বীপ।

বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মালদ্বীপকে ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দিয়েছে চীন; যা মালদ্বীপের মোট ঋণের প্রায় ২০ শতাংশের সমান।

Facebook Comments Box

Posted ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com