রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজপথের ‘ফয়সালায়’ কার হার, কার জিত

রাজনীতি ডেস্ক   |   সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   74 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

রাজপথের ‘ফয়সালায়’ কার হার, কার জিত

বছরখানেক ধরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলে আসছে, রাজনীতির ফয়সালা হবে রাজপথে। গত শনিবার ঢাকার রাজপথে সহিংসতা ‘সেই ফয়সালারই’ অংশ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপির ভাষ্য, তাদের সংঘাতের প্রস্তুতি ছিল না, শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের পরিকল্পনা ছিল। পুলিশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে বিএনপির সহিংস চেহারা উন্মোচিত হয়েছে– ক্ষমতাসীনরা এমন বক্তব্য দিলেও আগামী নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তির আগ্রহের কারণে সেদিনের ঘটনায় হারজিত নির্ধারণ পাটিগণিতের নিয়ম মেনে হয়তো হবে না।

তবে রাজপথের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের শক্তিমত্তা আরও প্রবল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বছরখানেক ধরে সমাবেশে বড় জমায়েত ঘটিয়ে বিএনপি শক্তি দেখালেও শনিবারের ঘটনাপ্রবাহে এতদিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা ক্ষমতাসীনদের দখল আরও পোক্ত এবং একতরফা হবে। সহিংসতার মামলায় ধরপাকড়ের কারণে বিএনপি আরও চাপে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘বিএনপির কী হবে জানি না, তবে তাদের প্রকৃত সহিংস চেহারা ফুটে উঠেছে।’
সহিংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ তৈরির যে চেষ্টা চলছিল, তা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই মাস। এর আগে বিএনপি আবার গুছিয়ে উঠতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। গত বছরের ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে সহিংসতার পর মামলা সামলে জ্যেষ্ঠ নেতাদের জামিনে মুক্ত করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গোছাতে দলটির কয়েক মাস লেগেছিল। এবার একই পরিস্থিতি হলে ততদিনে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মামলা সবে শুরু হয়েছে। আরও অনেকে মামলা করবে বিএনপি নেতাদের নামে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলার অজুহাত ব্যবহার করে ঠান্ডা মাথায় নৃশংস হামলা করা হয়েছে। আক্রমণের তীব্রতা, গুলি, বিস্ফোরণে স্পষ্ট– পুরো কৌশলটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। মাত্র এক দিনেই পুরো রাজনৈতিক দৃশ্যপট ব্যাপকভাবে বদলে গেছে।

সপ্তাহ দুই আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের অঙ্গীকার সাহস জোগাচ্ছে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।’ বিএনপি যে সাহায্য পাওয়ার কথা বলেছে, শনিবারের সহিংসতার কারণে তা আর থাকবে কিনা– প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশ্লেষণ, ফের সহিংস রাজনীতিতে ফেরায় বিএনপি ২০১৫ সালের মতো বিদেশিদের সমর্থন ও সহানুভূতি হারাবে। কারণ, ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পশ্চিমারা সমর্থন করে না। আলী রীয়াজের অভিমত, এটা ২০১৪ বা ২০১৮ সাল নয়। কেউ যদি ভাবেন, দমনপীড়নের নীতি অনুসরণ করে আবার বিতর্কিত কায়দায় নির্বাচন করা যাবে, তবে তারা ভুল করবেন। নির্বাচনই শেষ কথা নয়।

যুক্তরাষ্ট্র শনিবারই স্পষ্ট করে বলেছে, সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দায়ীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে। ফলে রাজপথে সহিংসতার জন্য এবার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বিবদমান সব পক্ষের। আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভাষ্যে স্পষ্ট, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মাথায় রাখছে। শনিবারের সহিংসতাকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের যে সহানুভূতি পেয়ে আসছে, তা হারাবে কিনা– এ প্রশ্নে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তা বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অন্যরা খুব একটা সোচ্চার নয় এই সহিংসতা নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা নমনীয়। তারা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় মর্মাহত বলে জানিয়েছে। আলী রীয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর বিশ্বের বহু মানুষের আগ্রহ ও নজর রয়েছে। তারা শুধু সরকারি ভাষ্যই নেবে, তা নয়।

শনিবার নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ ও বিএনপির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে একজন পুলিশ সদস্য ও যুবদলের এক নেতা নিহত হয়েছেন। বিএনপির মহাসমাবেশ মাঝপথে পণ্ড হয়। দলটির সূত্রের দাবি, সংঘর্ষের প্রস্তুতি ছিল না। বিরাট জমায়েত ঘটিয়ে মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎ শুরু হওয়া সংঘর্ষ সামাল দিতে না পেরে অন্য নেতাদের দাবিতে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব।

সে সময় মহাসচিবের পাশে থাকা একজন নেতা বলেছেন, কারও ধারণার মধ্যেই ছিল না এত ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংসতা হতে পারে। কাকরাইলে যে ঘটনার মাধ্যমে সংঘর্ষের শুরু হয়েছিল, তা পুলিশ চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। বিএনপি নেতারাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেন। কিন্তু সমাবেশে মঞ্চের মাইক বন্ধ থাকায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীর ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না; বরং পুলিশের মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডে যে উত্তেজনা ও ভীতি তৈরি হয়, তা ছড়ায় শান্তিনগর, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, রাজারবাগ এলাকায় অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীর মধ্যে। ওই সব এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা বেশি ঘটেছে। ‘নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামীকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না’– সরকার ও পুলিশ আগের চার দিন এ কথা বললেও শনিবার রাজধানীতে বড় জমায়েত করেছে দলটি। সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পুলিশের অলিখিত অনুমতিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পরিবর্তে একই এলাকার আরামবাগে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ করেছে জামায়াত। বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা শুরু হলে দলটি তড়িঘড়ি করে এক ঘণ্টায় সমাবেশ শেষ করে। গত জুনের পর বেশ কয়েকবার আবেদনেও কর্মসূচির অনুমতি না পাওয়া জামায়াত কীভাবে এই সমাবেশ করায় ছাড় পেল– পুলিশ সদস্যদের মাঝে এ প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।

বিএনপির ওই নেতার ভাষ্য, কয়েক বছর ধরেই সবকিছুর জন্য জামায়াতকেও জুড়ে দিচ্ছে সরকার। শনিবারের সহিংসতা, পুলিশের হামলা এবং গাড়িতে আগুনের ঘটনায় ‘বিএনপি-জামায়াত’ দায়ী– এই বয়ান প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসলামপন্থি রক্ষণশীলরা যে সক্রিয় রয়েছে, তা পশ্চিমা দুনিয়াকে দেখাতেই জামায়াতকে বিএনপির পাশাপাশি সমাবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, সহিংসতার জন্য দায়ী করা হবে– তা আঁচ করতে পেরেই দ্রুত সমাবেশের ইতি টানা হয়েছিল। তাঁরও দাবি, সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত।

এদিকে গতকাল রোববারও রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ‘প্রতিরোধে’ মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে ছিল দলটির নেতাকর্মীরা। বিপরীতে বিএনপি ও জামায়াতের ঝটিকা পিকেটিং ছাড়া হরতালের সমর্থনে তেমন একটা তৎপরতা ছিল না রাজধানীতে; বরং মির্জা ফখরুল গ্রেপ্তার হওয়ায় জ্যেষ্ঠ নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

Facebook Comments Box

Posted ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com