শনিবার ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিল্লীর লাড্ডু নিউইয়র্কে লাপাত্তাঃ মোমেন মুহিত ইমরানে নাখোশ প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   127 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

দিল্লীর লাড্ডু নিউইয়র্কে লাপাত্তাঃ মোমেন মুহিত ইমরানে নাখোশ প্রধানমন্ত্রী

 

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় বাংলাদেশ উপেক্ষিত। ২৮টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সংলাপের আয়োজন করলেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রন জানায়নি। অবশ্য বাংলাদেশের পরররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেস ব্রিংফিসহ বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধি ও সংস্থার সাথে বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্বকারি প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৭ বার তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শুধুমাত্র ১৯৯৯ সালে তিনি সাধারন অধিবেশনে যোগ দেননি। জাতিসংঘের অলিগলি তার নক্ষদর্পনে। অভিজ্ঞতা অনেক উচ্চতায়। তার ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের শেষ সাধারন অধিবেশন। বাংলাদেশের গনতন্ত্র, নির্বাচন ও দূর্নীতি নিয়ে বর্হিবিশ্বে সমালোচনা ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করলো শেখ হাসিনার নিউইয়র্কে থাকাবস্থাতেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার আহবান জানিয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নির্বাচন নিয়ে আস্থার যায়গাটি তৈরিতে মরিয়া। অনেকেরই ধারনা ছিল এবারের জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশন চলাকালে এমন কূটনৈতিক তৎপরতাই চলবে। বিশেষ করে মার্কিন প্রশাসনে তাদের লবিং হবে জোড়ালো। কিন্তু তেমনটি চোখে পড়েনি। এমনিতে ৭৮তম সাধারন অধিবেশনে জাতিসংঘের মোড়ল হিসেবে খ্যাত সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার প্রধানরা যোগ দেননি। রাশিয়া,চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া ও এমনকি কানাডার সরকার প্রধান আসেননি। নিরুত্তাপ এই সাধারন সভায় বাংলাদেশ সরকারি ও বেসরকারি মিলে শতাধিক ডেলিগেশন নিয়ে জাতিসংঘে যোগ দিয়েছে। হোটেল ‘লটে’ বাংলাদেশময়। লবিতে বাংলাদেশিদের পদভারে দাঁড়ানোর যায়গা নেই।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক তৎপরতা ছিল লক্ষ্যনীয়। দেশটির সেক্রেটারি অব স্টেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) অ্যানটনি ব্লিনকেন প্রতিদিন ৭ এর অধিক বৈঠক করেছেন। তা অন্য একটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে কিংবা গ্রুপ সংলাপে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ২৮টি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সংলাপে। এরমধ্যে ছিল মানবাধিকার, করাপশন, ডেমোক্র্যাসি, পরিবেশ, রিফিউজি-মাইগ্রান্ট ও হিউম্যান ট্রাফিকিং ইস্যু। ইসু্যুগুলো নিয়ে তিনি ৩টি সংলাপে যোগ দেন। এতে অংশগ্রহনকারি দেশের তালিকায় ছিল কস্টারিকা,মালাউ,আলজেরিয়া, কানাডা,অস্ট্রেলিয়া, মিশর,ইটালী, মরক্কো,কাতার, তুরস্ক, ইউক্রেন, ইউনাইটেড আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র। সারা বিশ্বে ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট এর ধরন ও করনীয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন অংশগহনকারি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা। ইস্যুগুলোর অধিকাশংই ছিল বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ঠ। যেমন রিফিউজি, পরিবেশ, করাপশন ও ডেমোক্র্যাসি অন্যতম। কিন্তু এসব বৈঠকে বাংলাদেশের কোন উপস্থিতি ছিল না। কিংবা আমন্ত্রনই জানানো হয়নি। এসব সংলাপের আয়োজক ছিল ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন কূটনৈতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করেছেন বলে জানা যায়নি। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের কোন দেশের সাথেও না। প্রতিদিন হোটেল লবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্ম তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন তিনি। তবে বাংলাদেশের উদ্যোগেই ২১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে হাই লেভেল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ মিশনের প্রেস উইং এর তথ্যানুসারে এতে কানাডা, গাম্বিয়া,মালয়েশিয়া,তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানকারি সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সন্মানে মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে নৈশভোজ/সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন। স্বাগতিক দেশ হিসেবে প্রতিবছরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সরকার প্রধানদের সন্মানে এ ধরনের নৈশভোজের আয়োজন করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ নৈশভোজে যোগ দেন। ফটো সেশনে জো বাইডেন ও জিল বাইডেনকে প্রধাানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে দেখা যায়।
জি-২০ সম্মেলনে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইলাইটেড ছিলেন। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে শেখ হাসিনার সাথে সেলফি তোলায় তা ছিল বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। এই সেলফি নিয়ে সরকারি দলের নেতারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। এক সেলফিতেই আমেরিকা জয়ের উৎসবে মেতে উঠেন ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানকালে এমনই কূটনৈতিক (!) বিজয় অর্জন হবে বলে তাদের বিশ্বাস ছিল। কিন্তু কার্যত এমন কিছু ঘটেনি। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকা সোচ্চার। জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে এমন দেশগুলোর সরকার প্রধানতো দূরের কথা মন্ত্রী পর্যায়ের কারও সাথে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কোন বৈঠক হয়নি। রাজনৈতিক গুরুত্বহীন এমন একটি সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও খুশি নন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্দ ইমরান ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহিত উভয়েই ক্যারিয়ার ডি্েপ্লাম্যাট। মেধা ও দক্ষতার গুনেই তারা ৩০টি বছর চষে বেড়িয়েছেন সেগুনবাগিচা থেকে বিশ্ব পরিমন্ডলে। রাজনীতির ডামাডোলে তাদের চৌকশতা নিয়ে কথা উঠেছে সরকারের অন্দর মহলে। কূটনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে শীর্ষমহলেও প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনকে আখ্যায়িত করেছেন বাগড়ম্বর মন্ত্রী হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র এমন সময় বাংলাদেশের আমলা ও রাজনীতিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিল যখন প্রধানমন্ত্রী আমেরিকাতেই অবস্থান করছিলেন। সমালোচকরা বলছেন, দিল্লীর হাসি নিভে গেল নিউইয়র্কে। দিল্লীর লাড্ডু খেলেও পস্তাতে হয়–।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেছেন। ওয়াশিংটনে পৌঁছার পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তাকে স্বাগত জানান। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে অবস্থান করছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর লন্ডন হয়ে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ওয়াশিংটন এলাকায় বসবাসরত পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের বাসায় যাবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানকালীন সময়ে তার কোন আনুষ্ঠানিক বা সরকারি কোন কর্মসূচির কথা মিশন ও দূতাবাস জানাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একজন নিউইয়র্ক কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক কিছু জটিলতা আছে। তিনি হয়তো এ সময়ে ডাক্তার দেখাতে পারেন। প্রতিবছরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এলে চেকআপটি করে যান। নিউইয়র্ক ত্যাগ করেছেন।

Facebook Comments Box

Posted ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com