শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শমসের মবিন ও তৈমূর আলম কেন তৃণমূল বিএনপিতে

রাজনীতি ডেস্ক   |   মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   62 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

শমসের মবিন ও তৈমূর আলম কেন তৃণমূল বিএনপিতে

প্রয়াত নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত ‘তৃণমূল বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আসছে। বিএনপির সাবেক দুই ‘হেভিওয়েট নেতা’ আসছেন দলটির নেতৃত্বে। এককভাবে দলটি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনাও করছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার হচ্ছে তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সকাল ১০টায় কাউন্সিল শুরু হবে। এতে নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। তৃণমূল বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলের চেয়ারম্যান হচ্ছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। কো-চেয়ারম্যান হিসেবে থাকছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিম হুদা। মহাসচিব হচ্ছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এবং দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিএনপি থেকে বাদ পড়া অথবা দল ছেড়ে যাওয়া অনেকে নতুন নেতৃত্বের তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। আবার দলের নেতৃত্বে এই পরিবর্তনের কারণে প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক নেতাকর্মী তৃণমূল বিএনপি ছাড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনেকের প্রশ্ন, শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার কেন তৃণমূল বিএনপিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে যা জানা যায়, তা হলো– ২০১৫ সালে শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপি থেকে পদত্যাগের পর ২০১৮ সালে বিকল্পধারায় যোগদান করেন। নির্বাচনের আগে বিকল্পধারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়। তখন জোটের মনোনয়ন না পেয়ে সিলেট-৬ আসনে বিকল্পধারার কুলা প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে নামলেও পরে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন জানান শমসের মবিন। সামনে জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের আনুকূল্যে প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়া বিকল্পধারার রাজনীতি অনেকটা থেমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নতুন প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন তিনি। এসব কারণেই ‘তৃণমূল বিএনপির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন শমসের মবিন। অন্যদিকে তৈমূর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগদানের পর থেকে সক্রিয় ছিলেন। এ জন্য মামলা-হামলার শিকার, এমনকি কারাবরণও করেন। দেড় বছর আগে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরও তিনি বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য লিখিত আবেদনও করেন। কিন্ত কোনোকিছুতে কাজ না হওয়ায় হতাশা, অভিমান ও দুঃখে তিনি নতুন প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তারপরও সরকারের আশীর্বাদে আগামীতে জনপ্রতিনিধি হওয়ার কথা ভাবতে পারেন তৈমূর আলম। হয়তো সে কারণে তাঁর তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান।

তবে শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি। এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনের আগে সরকারের সরাসরি ইন্ধনে বিরোধী জোট ও দলে ভাঙন ধরানোর ষড়যন্ত্র হয়। এবারও কিছু দলছুট নিয়ে কিংস পার্টি তৈরির মিশন নিয়েছে আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘তৈমূর আলম ও শমসেন মবিন চৌধুরী এখন বিএনপির সদস্য নন। সুতরাং তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। এতটুকু বলতে চাই, বিএনপি বিশাল প্রবহমান একটা নদীর মতো। সেখানে কত খড়কুটো আসে, কত খড়কুটো যায়– তাতে বিএনপির কিছু যায়-আসে না। দ্যাট ইজ বিএনপি।’ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। এর তিন দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান দলটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তাঁর মৃত্যুর পর দলের নিয়ন্ত্রণ নিতে একটি মহল সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু হুদা পরিবারের ‘অনড় অবস্থান’-এর কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আবার দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে। আজ দলের কাউন্সিলে সেই নেতৃত্ব চূড়ান্ত হওয়ার কথা।

তৃণমূল বিএনপির এক নেতা জানান, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মৃত্যুর পরও শমসের মবিন চৌধুরীকে সামনে রেখে কমিটি গঠনের চাপ ছিল। পরে নাজমুল হুদার সহধর্মিণী অ্যাডভোকেট সিগমা হুদাকে নেতৃত্বে চান কেউ কেউ। কিন্তু বয়স ও অসুস্থতার কারণে সিগমা হুদা দায়িত্ব নিতে না চাইলে নাজমুল হুদার মেয়ে অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিম হুদাকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়।

অন্তরা সেলিম হুদা অবশ্য ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক রাজনীতিক মনে করেন, ওই ঘটনার পর অন্তরা হুদাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপির এক দফা আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারেন– এমন কথাও সম্প্রতি ওঠে। বিএনপির সঙ্গে যাওয়ার জন্য দলের মধ্য থেকেও অন্তরা হুদার ওপর চাপ ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। এমন প্রেক্ষাপটেই পরিবর্তন আসছে তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে।

তা ছাড়া ব্যাংক ঋণ ও পারিবারিক মামলা নিয়েও বেকায়দায় রয়েছে হুদা পরিবার। দলের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনে এসব বিষয় নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে অন্তরা সেলিম হুদা বলেন, ‘আমাদের পরিবারের ব্যাংক ঋণ রয়েছে, মামলাও রয়েছে। কিন্তু ওই ঋণ তো মাফ হচ্ছে না, মামলাও শেষ হচ্ছে না।’

শমসের মবিন চৌধুরী সম্পর্কে অন্তরা বলেন, ‘তিনি আমার মা-বাবার ঘনিষ্ঠ। সে হিসেবে একবার তাঁর নাম এসেছিল। এখন আবার তাঁর নাম সামনে আসছে। কারণ একজন অভিভাবক দরকার। সেই হিসেবে তাঁকে সামনে আনা হচ্ছে।’ অন্তরা হুদা জানান, তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গেও দল নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। মূলত সেখানেই নতুন নেতৃত্ব তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।

তৃণমূল বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গতকাল সোমবারও বিএনপির অনেক নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিচিত-অপরিচিত প্রায় ৪০ জন তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন। তাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা চলছে। সবকিছু মিলে গেলে দ্রুতই তারা যোগ দেবেন। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার জানান, তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করছেন– এটা নিশ্চিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপি তো বাকশাল নয়। বিএনপি সবাইকে স্বাধীনতা দেয়, যে যার ইচ্ছামতো রাজনীতি করবে। যারা বিএনপি করতে চায় করবে, যারা নতুন দল করতে চায় করবে।’ ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন শমসের মবিন চৌধুরী। তখন তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা বলেন। তবে তিন বছর পর ২০১৮ সালে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন। এই দলে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব আছেন। এবার যাচ্ছেন তৃণমূল বিএনপিতে। আর বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ২০২২ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হন।

‘তৈমূরের আ’লীগের সঙ্গে আঁতাত ছিল’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, তৈমূর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের ঘোষণায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতারা তাঁর কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর আগে থেকেই আঁতাত ছিল।

জেলা বিএনপি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘তাঁর উচিত ছিল অপেক্ষা করা। কারণ বিএনপির জন্য তিনি যেমন করেছেন, দলও তাঁর জন্য অনেক করেছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁকে বসানো হয়েছে। বিআরটিসির চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। এসব তাঁর মনে রাখা উচিত ছিল।’ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেছেন, ‘তৈমূর আলমের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত ছিল। তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে এবার প্রকাশ্যে তিনি বিএনপির বিরোধিতায় নামলেন।’

এদিকে এক বিবৃতিতে তৈমূর আলমের ছোট ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, ‘তিনি আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসাস্থল ও নীতিনির্ধারক। তবে তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত নই।’ বিবৃতিতে আজীবন বিএনপির সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন মাকসুদুল আলম।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com