কালবিলম্ব না করে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হুঁশিয়ারি করে তিনি বলেন, পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা দিন। অন্যথায় আপনাদের অত্যন্ত ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে, পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।

গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে চার দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধনের আগে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি আরও বলেন, আজকে এক নতুন আন্দোলন শুরু করলাম। তাদের চলমান আন্দোলনে এই নীরব যাত্রার মধ্য দিয়ে। এই নীরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে গতকাল রাজধানীর বাড্ডা থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার পথ ‘নীরব পদযাত্রা’ করেছে বিএনপি। দুপুর আড়াইটায় বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের সড়ক থেকে এ পদযাত্রা শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় নেতাকর্মীর হাতে ছিল সরকারের পদত্যাগ ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির লেখা সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা। মহানগর উত্তর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী এ নীরব পদযাত্রায় অংশ নেন।

কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দুপুর ১২টার পর থেকেই বাড্ডা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এ সময় রাস্তার এক পাশে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। সোয়া ২টায় কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, চাল, ডাল, ডিম, তেল ও লবণের দাম বেড়ে গেছে। নিম্নবিত্ত, শ্রমিকরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। তারা চাল, ডাল, তেল ও লবণ কিনতে পারছে না। শুধু তাই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেপ্তার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সমস্ত বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। সমগ্র দেশকে একটা কারাগারে পরিণত করেছে। এটা কি মেনে নেব?

তিনি আরও বলেন, দেশে কারও ভোটের অধিকার নেই। সেই অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে, যারা কারাগারে আছেন, তাঁদের মুক্ত করতে হবে, দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়কের পদযাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও নেতাকর্মীকে ‘নীরব’ মিছিলে বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে যান। এই কর্মসূচি উপলক্ষে বাড্ডা-মালিবাগ সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের জনগণ এখন এই সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। বিএনপির ১০ বিভাগীয় সমাবেশে তাদের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে। এবার সরকারকে বিদায় নিতে হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। এজন্য রাজপথে নেমেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব।

পদযাত্রায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, বাবুল আহমেদ, আবদুল আলিম নকি, এজিএম শামসুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএস জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

মহানগর বিএনপি ঘোষিত দ্বিতীয় পদযাত্রা আগামীকাল সোমবার যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুরে অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার গাবতলী টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এবং বুধবার মুগদা থেকে মালিবাগ। সব কর্মসূচি শুরু হবে দুপুর ২টায়।

শুধু সভা করে এই সরকারকে সরানো যাবে না :বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, শুধু সভা করে, কথা বলে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না, তাদের ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আয়োজিত ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

‘পদযাত্রা নয়, মরণযাত্রা শুরু হয়েছে বিএনপির’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, অদ্ভুত, এ ধরনের কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এগুলো জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।

এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমিন বেপারি প্রমুখ।